গত ৩১ অগাস্ট শুরু হয়ে ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে ৭৯তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এবারের ফেস্টিভ্যালটি লিডো দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়। স্প্যানিশ হোস্ট ও অভিনেতা রোসিও মুনোজ মোরালেস উৎসবের পরিচালক আলবার্তো বারবেরার সাথে উৎসবের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।
ভেনিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম চলচ্চিত্র উৎসব ও বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। তাকে ‘আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জনক’ নামে ডাকা হয়। প্রথম শ্রেণীর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। কান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সাথে এটি ইউরোপের তিনটি বড় আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এতে প্রদত্ত সর্বোচ্চ পুরস্কার হল ‘গোল্ডেন লায়ন অ্যাওয়ার্ড’।
চলতি বছর ৭৯তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল ইভেন্ট হিসেবে অফলাইন এবং অনলাইনে ‘ফোকাস অন চায়না’ অনুষ্ঠান গত ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চীন ও ইতালির অতিথিরা ইন্টারনেটে চীন ও ইতালির পাশাপাশি চীন ও অন্যান্য দেশের মধ্যে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে আদান-প্রদান ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন ওই অনুষ্ঠানে।
ইতালিতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের সাংস্কৃতিক অফিসের মিনিস্টার কাউন্সিলর সুই রোং এক ভিডিও বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের বার্ষিক ইভেন্ট 'ফোকাস অন চায়না'-তে আপনাদের সাথে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’
২০২২ সাল হল চীন-ইতালি সংস্কৃতি ও পর্যটন বর্ষ। বছরের শুরুতে চীন এবং ইতালি শীতকালীন অলিম্পিক নিয়ে ঘনিষ্ঠ ও ব্যাপক সহযোগিতা করেছে, এবং যৌথ উদ্যোগে পারফরমেন্স, প্রদর্শনী এবং চলচ্চিত্রসহ ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আয়োজন করেছে।
সুই রোং বলেন, ‘চীন অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র বাজার, মহামারীর প্রভাব সত্ত্বেও ২০২১ সালে চীনের বক্স অফিসের আয় প্রায় ৭৪০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতারা, শিল্পী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ইতালীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের সাথে সহযোগিতা করার এই সুযোগ এবং ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বন্ধুদের সাথে মত বিনিময় ও শেয়ার করার সুযোগকে মূল্য দেন।
চীনে নিযুক্ত ইতালির দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক এবং সাংস্কৃতিক কাউন্সিলর ফেদেরিকো আন্তোনেলি তাতে এক ভিডিও বক্তৃতা দিয়েছেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘চীন ও ইতালির সংস্কৃতি বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং অনেক সফল সহযোগিতাও রয়েছে। ফিল্ম এবং টেলিভিশনের ক্ষেত্রে দু’দেশের অনেক সফল সহযোগিতাও রয়েছে। ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা চীন-ইতালি দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময়কে সমর্থন অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। আমরা মহামারী সৃষ্ট অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে কঠোর পরিশ্রম করছি এবং ধীরে ধীরে চীন-ইতালি দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম আয়োজন করছি। আশা করা যায়, প্রাক-মহামারী সময়ে ফিরে আসতে এবং আরও ফলাফল অর্জন করা যাবে।
অনুষ্ঠানে উভয় দেশের অতিথিরা চীনা চলচ্চিত্র বাজারের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে চীন-ইতালি, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনে চীন-বিদেশের বিনিময় ও সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা করেছিলেন। অতিথিদের মতে, মহামারীর পটভূমিতে, চীনা চলচ্চিত্রের বাজার এখনও ভাল উন্নয়ন অর্জন করেছে। যেমন: গত বছর চীনে নির্মিত নতুন পর্দার সংখ্যা প্রায় ৬,৬০০টিতে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতে চীনা চলচ্চিত্রের টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে। কার্টুনসহ নানা ধরণের চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এবং যা চীনা দর্শকদের সমাদরও পেয়েছে। চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অভিব্যক্তিও আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেছে এবং তারা চীনা সংস্কৃতি এবং চলচ্চিত্রের নতুন বিষয় খনন এবং তৈরি করার নতুন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, যাতে আরও ভালভাবে চীনা গল্পগুলো বলা এবং চাইনিজ ফিল্ম সংস্কৃতির প্রচার ও বাইরে যাওয়ার নতুন সুযোগ তৈরি করা যায়।
ইতালীয় সাংস্কৃতিক ফিল্ম সিটির বিশেষ প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক উপদেষ্টা রবার্ট স্তাবিলে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মহামারী চীন এবং ইতালির মধ্যে চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উপর একটি নির্দিষ্ট প্রভাব ফেললেও আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের সহযোগিতা পিছিয়ে যাবে না, সামনে এগিয়ে যেতে থাকবে। যেভাবে আমরা আজ এখানে 'ফোকাস অন চায়না' অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি, এটি দেখায় যে, ইতালি এখনও চীন ও ইতালির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা এবং চীন-ইতালির সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীন ও ইতালির সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা হলো দুই দেশের মধ্যে সকল বিনিময় ও সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা আরও ফলপ্রসূ হবে।
ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ‘ফোকাস অন চায়না’ ইভেন্টটি ইতালীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ব্যুরো ও ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অর্গানাইজিং কমিটিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং সিনহুয়ানেটের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। 'ফোকাস অন চায়না' ইভেন্টটি সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং মহামারী চলাকালীন অনলাইনে অব্যাহত ছিল। এখন অনুষ্ঠানটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী চীন-থিমযুক্ত ইভেন্টই নয়, বরং চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের সংস্কৃতিসহ দু’দেশের বিনিময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেছে।
লিলি/এনাম/রুবি