কার্বন-নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি থেকে ইইউ রাষ্ট্রগুলোর সরে আসা প্রসঙ্গ
2022-09-13 18:00:45

৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ "গার্ডিয়ান" পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু সংকট বিশ্বকে একাধিক "বিপর্যয়কর" পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে এবং মানুষের অস্তিত্ব ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ, কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে।

রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ হ্রাস মোকাবিলায়, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উত্পাদন পুনরায় শুরু করার বা কয়লার ব্যবহার বন্ধের প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডস জুনের শেষের দিকে জানায়, দেশটি কয়লা-চালিত শক্তি উত্পাদনের সীমা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, কয়লাচালিত বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। জুলাইয়ের প্রথম দিকে জার্মানি ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদ্যুত উত্পাদনে "১০০% নবায়ণযোগ্য শক্তি" ব্যবহারের লক্ষ্য পরিত্যাগ করে। ব্রিটেনের জাতীয় গ্রিড সম্প্রতি বিদ্যুত উত্পাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে আসন্ন শীতকালে দুটি বিদ্যুতকেন্দ্রে চারটি কয়লাভিত্তিক উত্পাদন ইউনিটের ব্যবহারের সময় বাড়ানোর জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এদিকে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট জুনের শেষে দেওয়া এক রায়ে দূষণমুক্ত শক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। কোর্ট ক্লিন এয়ার অ্যাক্টের অধীনে বিদ্যমান কয়লা ও গ্যাস-চালিত পাওয়ার প্লান্টগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে জাতীয় পরিবেশ রক্ষা ব্যুরো (ইপিএ)-র নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা সীমিত করে দিয়েছে।

মূলত, "কার্বন নিরপেক্ষতা"-এর প্রবক্তা হিসাবে, এখন আমেরিকান ও অনেক ইউরোপীয় দেশ নিজ নিজ লক্ষ্য থেকে সরে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে, চীনকে কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চীন এখন কী করবে?

কার্বন-নিরপেক্ষতা হচ্ছে চীনের একটি জাতীয় কৌশল, যার সাথে সমগ্র বিশ্বকে দেওয়া চীনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি অনুসারে, চীনে ২০৩০ সালের পর থেকে কার্বন নির্গমন ক্রমশ কমতে থাকবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে চীন কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জন করবে। এই প্রতিশ্রুতি চীনের সরকার ২০১৫ সালে করেছিল। চীন কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেনি! এটা বড় দেশ হিসেবে চীনের দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। এটা চীনের কাছে যেমন একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি একটি সুযোগও বটে।

কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের পরিকল্পনায় চীন সম্পূর্ণরূপে তার নিজস্ব জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করেছে এবং সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনের জন্য তার নিজস্ব সুবিধাগুলো ব্যবহার করছে। চীন সর্বদা নিজের জ্বালানিসম্পদের ব্যবহার উন্নত থেকে উন্নততর করতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং সক্রিয়ভাবে নবায়নযোগ্য শক্তি, জলবিদ্যুত, বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি, ইত্যাদির বিকাশ ঘটাচ্ছে। চীন বর্তমানে এই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে।

কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জন করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেলের বাজারের ওপর চীনের নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে যাবে। তখন বিভিন্ন অজুহাতে আরোপিত মার্কিন চাপ মোকাবিলা করা চীনের জন্য সহজতর হবে। তাই, কার্বন-নিরপেক্ষতা চীনের জন্য সুযোগও বটে।

পক্ষান্তরে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে মুদ্রাস্ফীতি ও সরবরাহ সমস্যার কারণে কার্বন-নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চীন কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে যখন ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে, তখন ইউরোপীয় দেশগুলোর তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)