যুক্তরাষ্ট্র হ্যাকার সম্রাট; তারা সারা বিশ্বের ক্ষতি করছে
2022-09-13 19:35:52

সম্প্রতি নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিকাল ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে বিদেশী সাইবার হামলার ঘটনা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর চীনের জরুরি কম্পিউটার ভাইরাস মোকাবিলা কেন্দ্র এবং ৩৬০টি কোম্পানির যৌথ প্রযুক্তি দলের এ সাইবার হামলার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাকার সম্রাট হবার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেছে।

 

এটি যুক্তরাষ্ট্রের অগণিত হ্যাকিং কাণ্ডের অন্যতম। সে প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা চীনকে লক্ষ্য করে দশ হাজারের বেশি বার সাইবার হামলা চালিয়েছে এবং মূল্যবান তথ্য চুরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নানা কোম্পানির সঙ্গে মিলে সাইবার হামলা চালায়। বিদেশে সাইবার হামলা চালানো মার্কিন সরকারের দৈনিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে।

 

২০০৪ সালে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ব্যুরো কোয়ান্টাম নামক সাইবার হামলার প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। এ প্ল্যাটফর্ম চালু হওয়ার পর থেকে ব্যুরোটি ১ লাখ কম্পিউটারে কোয়ান্টাম সাইবার হামলার ব্যবস্থা বসিয়েছে। গত দশাধিক বছরে যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারা বিশ্বে নির্বিচারে সাইবার হামলা চালিয়েছে। চীন তার হামলার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের অন্যতম। দশ লাখেরও বেশি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। ২০১০ সালের জুন মাসে স্টুক্সনেট নামক ভাইরাস প্রথমবারের মতো লক্ষ্য করা হয়েছে। এটাকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সাইবার অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ভাইরাস মার্কিন সরকারের কর্ম বলে খণ্ডন করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে চীনের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। ইরানের নাতানজ পারমানবিক কেন্দ্রের নেটওয়ার্ক এ ভাইরাসের শিকার হয়। ফলে অনেক ইউরেনিয়াম কেন্দ্রিকীকরণের সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে নজরদারির গোপন নেটওয়ার্ক গঠন করেছে। তার নাগরিক ও মিত্র দেশগুলোও সে নজরদারি থেকে রক্ষা পেত না।

 

২০১৩ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক ঠিকাদার এডওয়ার্ড স্নোডেন দেশটির ইন্টারনেট নজরদারি কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। উইকিলিকসের তথ্য থেকে জানা গেছে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ফ্রান্সের সাবেক তিনজন প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক, নিকোলাজ সারকোজি, ও ফ্রান্সোয়া ওলান্দের ওপর নজরদারি করেছে। ২০২১ সালে ডেনমার্কের গণমাধ্যম দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ফাঁস করে জানিয়েছে, দুই সংস্থা জার্মান সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেলসহ বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নজরদারি করেছে।

 

লস এঞ্জেলস টাইমস জানিয়েছে, কুখ্যাত ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে সন্ত্রাসী হামলা দমনের অজুহাতে মার্কিন ইমিগ্রেশন ও শুল্ক বিভাগকে জনসাধারণের ওর নজরদারির অধিকার দিয়েছে মার্কিন সরকার। এ সংস্থা দশ কোটিরও বেশি মার্কিনীর গোপন তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং সংস্থাটিকে দোষারোপ করা হয়নি।

 

মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালকের কার্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মার্কিন ফেডারেল তদন্ত সংস্থা কোনো খানা তল্লাসি পরওয়ানা ছাড়াই মার্কিন নাগরিকদের ইলেকট্রনিক তথ্যের ওপর ৩৪ লাখের বেশি বার চেক করেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সংস্থাটি একবার ৩০ দিনের মধ্যে ৯,৭০০ কোটি বার বিশ্ব ইন্টারনেট ডেটা এবং ১২,৪০০ কোটি বার টেলিফোন ডেটা চুরি করেছে।

 

বাস্তবতা ও সব তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সত্যি হ্যাকার, নজরদারি এবং গোপন তথ্য চুরির সম্রাট। দেশটি বার বার সাইবার হামলা ও গোপন তথ্য চুরির মাধ্যমে তার আধিপত্যবাদী স্থান রক্ষা করার চেষ্টা চালায়, তাতে বিশ্ব নিরাপত্তার ক্ষতি করে। বিভিন্ন দেশের উচিত মার্কিন সাইবার হামলার বিষয়ে সচেতন থাকা এবং যৌথভাবে মোকাবিলা করা।

(রুবি/এনাম)