সেপ্টেম্বর ১২: ২০১৩ সালের শরতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন। নয় বছর ধরে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এটি মানবজাতির ভাগ্যের অভিন্ন সম্প্রদায় গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করার পর চীন বরাবরই যৌথ বাণিজ্য, যৌথ নির্মাণ ও যৌথ উপভোগের নীতি মেনে চলতে। চীন কোনো রাজনৈতিক শর্ত না-দিয়ে সকল দেশকে সমান অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করে এবং পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে সহযোগিতা করে। বর্তমান বিশ্বে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট অনেক প্রকল্পের অস্তিত্ব আছে। অনেক দেশ নিজের উন্নয়নের পরিকল্পনা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এটি একটি উন্মুক্ত উদ্যোগ। অংশগ্রহণের আগ্রহ থাকলে, যে-কোনো দেশ এতে অংশ নিতে পারে। এটি একটি বাস্তব উদ্যোগ। এ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের অর্থনৈতিক রূপান্তর ও আপগ্রেডেশানের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি একটি উন্নত উদ্যোগ। প্রাসঙ্গিক সহযোগিতা উচ্চ-মানের উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ পর্যন্ত চীন ১৪৯টি দেশ ও ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ২০০টিরও বেশি সহযোগিতা-চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে: ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সহযোগিতা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কী ধরণের ভূমিকা রাখছে? এটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে সমর্থিতইবা হচ্ছে কেন?
আফ্রিকান দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে ছিল। তারা তাদের দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোর অন্তঃসত্ত্বা শক্তি বেড়েছে। যেমন: কেনিয়া চীনের সহায়তায় মোম্বাসা-নাইরোবি স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে ও লামু (lamu) বন্দর নির্মাণ করেছে। এটি ব্যাপকভাবে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে। এ ছাড়াও, এতে পূর্ব আফ্রিকার যোগাযোগ ও পরিবহনের অবস্থাও উন্নত হয়েছে।
সার্বিয়া হলো ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। সেদেশের অবকাঠামো পুরনো ও অনুন্নত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মিত হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলওয়ে ও মন্টিনিগ্রো উত্তর-দক্ষিণ এক্সপ্রেসওয়ে হলো প্যান-ইউরোপিয়ান করিডোরের অংশ। চালু হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন আরও সুবিধাজনক হয়েছে। সার্বিয়ার পরিবহন খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। সার্বিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পরিবহনব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ আরও বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষরকারী দেশ এবং ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নির্মাণকাজের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। গত শতাব্দীর আশি’র দশক থেকে চীনের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে মোট আটটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মিত হয়েছে। এ সেতুগুলো বাংলাদেশের পরিবহন-ব্যবস্থা উন্নয়নে সাহায্য করেছে; স্থানীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সম্প্রতি চীন-বাংলাদেশ অষ্টম মৈত্রী সেতু চালু হয়। এটা হচ্ছে চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রীর প্রতীক।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবুজ নিম্ন কার্বন উন্নয়নে সহায়তা করে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো দূষিত পানি পরিশুদ্ধকরণ কারখানা, ভ্যাকসিন কারখানা, ও হাসপাতাল নির্মাণে সহায়তা করে যাচ্ছে। চীন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সহায়তা করেছে এবং সেখানে চিকিত্সাদল পাঠিয়েছে। চীন ৭৭টি উন্নয়নশীল দেশের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে, ইতিবাচকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অতিরিক্ত অর্থ দান করেছে, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মহামারী প্রতিরোধ ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে। এ পর্যন্ত চীন ১২০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করেছে, ২০টিরও বেশি দেশকে টিকা উত্পাদানের প্রযুক্তি রফতানি করেছে।
বস্তুত, জটিল আন্তর্জাতিক অবস্থায় চীন বরাবরই উন্নয়নশীল দেশগুলোর কন্ঠ হয়ে থেকেছে। ন্যায্যতা ও সমতা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সুরক্ষা করতে পারে না। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ যৌথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে অভিন্ন উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে চীন। (ছাই/আলিম)