রোববারের আলাপন-বাবা ও ছেলের দৌড়ানোর গল্প
2022-09-11 19:42:12

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু আকাশ।


বন্ধুরা, আমি একসময় ঢাকার উত্তরায় থাকতাম। তখন প্রত্যেক সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে, সেক্টরের পার্কে গিয়ে দৌড়াতাম। যদি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হতো, তখন অফিস যেতে হতো না। তখন আরো বেশি সময় পার্কে দৌড়াতাম। এখনও আমার মনে আছে, নদীর পাশে সেই পার্কে সকালে অনেক ফুল ফটে থাকতো, যা অনেক সুন্দর। বিমানবন্দরের পাশাপাশি উত্তরার ওই পার্কটি হচ্ছে স্থানীয় বৃহত্তম পার্ক। সেখানে বিকালবেলা অনেক মানুষ ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতেন। অনেক হৈ চৈ হতো। দৌড়ানোর পর, আমি মাঝে মাঝে একটানা দু’টি ডাব খেতাম। অনেক সুস্বাদ সেই ডাব। বাংলাদেশে দৌড়ানোর বিষয়ে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে।


তৌহিদ ভাই, আপনি কি দৌড়ানো পছন্দ করেন? এ সম্পর্কে আপনি কিছু শেয়ার করতে পারবেন কি?

তৌহিদ:...


আকাশ: আচ্ছা, তাহলে আজ আমরা দৌড়ানোর বিষয়ে একটি গল্প শেয়ার করবো।


সম্প্রতি হ্য নান প্রদেশের ইয়ে কাউন্টিতে ৭ বছর বয়সী একটি ছেলে বাবার সঙ্গে প্রতিদিনে দৌড়ায়। প্রথম সময়ে সে বেশি দৌড়াতে পারত না। এরপর তার অনেক পরিবর্তন হয়। তার এ গল্প ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নেটিজেনরা তার প্রশংসা করেন।


সেই ছেলের নাম হলো ছাও সি রুই, গত বছরের জুলাই থেকে, সে প্রতিদিন দৌড়াচ্ছে। তার বাবা মিস্টার ছাও বলেন, তিনি নিজেও দৌড়াতে খুব ভালোবাসেন। তিনি সাংবাদিককে জানান, তার ছেলে কিভাবে দৌড়ানো শুরু করে। তিনি বলেন, ‘একদিন সে বলেছে সে একটি রেস্তোরাঁয় রাইস নুডলস খেতে চায়। যা বাসা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। আমি তাকে বলেছি, আমরা দৌড়িয়ে সেখানে যাব, কেমন?’


তারা দৌড়ানোর মাধ্যমে সেই রেস্তোরাঁয় পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন যে, তা বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও তারা রাইস নুডলস খেতে পারেন নি, তবে তার ছেলে বলে যে, এই দৌড়ানোর মাধ্যমে সে দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। দৌড়ানোর প্রতি তার ছেলের আগ্রহ দেখে মিস্টার ছাও সিদ্ধান্ত নেন যে, তাকে নিয়ে প্রতিদিন একসাথে দৌড়াবেন। দৌড়ানো-বিষয়ক সঠিক তথ্য তাকে জানাবেন।


প্রথম দিকে তার ছেলের অনেক কষ্ট হতো। তার পা দুটি অনেক ভারী হয়ে যেতো এবং দেহে কোনো শক্তি থাকতো না। মিস্টার ছাও হেসে হেসে স্মরণ করে বলেন, ‘তখন আমি সুস্বাদু খাবারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাকে শক্তি যোগাতাম। এতে তার উত্সাহ বাড়ত।’ 


প্রতিদিন বাবা ও ছেলে একযোগে দৌড়াচ্ছে। শুরুতে তাদের ৩ কিলোমিটার দৌড়াতে ৪০ মিনিট সময় লাগতো, এখন মাত্র ১৫ মিনিটে তারা ৩ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করতে পারে।


বর্তমানে তার ছেলে অনেক দ্রুতগতিতে দৌড়াতে পারে। শরীরও আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। মিস্টার ছাও বলেন, ‘ছেলের এখনও বয়স কম, এজন্য খেলাধুলা খুব বেশ করতে পারে না। ধীরে ধীরে শরীর উন্নত করতে হবে। তবে, আমি তার অগ্রগতি দেখে মনে অনেক আনন্দ পাই।’


কিছু কিছু সময়, দৌড়ানোর পর মিস্টার ছাও তার ছেলেকে নিয়ে একযোগে রাস্তা পাশের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। পরিবেশ রক্ষায় কাজও করেন।


এক বছর দৌড়ানোর পর তার ছেলের ওজন ৩ কেজি কমেছে। মিস্টার ছাও জানান, এক বছর শরীরচর্চা করার পর, তার ছেলে এখন অনেক আশাবাদী, সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘ছেলের শরীর আগের চেয়ে আরো সুস্থ হয়েছে, আমি মনে করি, সঙ্গ দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে ভাল শিক্ষা।’


তৌহিদ ভাই, এ গল্প অনেক উষ্ণতায় পূর্ণ। আসলেই- সঙ্গ দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে ভাল শিক্ষা। 

আরেকটি কথা আমি বলতে চাই, প্রথম নিজকে কঠোরভাবে উন্নত করতে হবে; যাতে ছেলেমেয়ের জন্য একটি ভাল উদাহরণ সৃষ্টি করা যায়। যেমন, যদি আমরা আমাদের ছেলে দৌড়ানোর অভ্যাস সৃষ্টি করতে চাই, তাহলে প্রথমে আমাদের নিজেদের দৌড়াতে হবে। আপনি কি মনে করেন?


তৌহিদ:...

 (আকাশ/তৌহিদ)