বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে চীনা মুদ্রার রিজার্ভ
2022-09-10 19:55:28


গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে ধীরে ধীরে বাড়ছে অন্যান্য দেশের মুদ্রার অংশ। এর মধ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বৃদ্ধির হার লক্ষনীয়। ২০১৭ সালের রিজার্ভে চীনা ইউয়ানের হিস্যা ১ শতাংশ থেকে বেড়ে আগষ্ট মাসে হয়েছে ১.৩২ শতাংশ। সেই সঙ্গে বাড়ছে ইউরো, পাউন্ড ও ইয়েনের পরিমাণ। এসবের বিপরীতে কমছে মার্কিন মুদ্রা বা প্রধান মজুদ ডলারের পরিমাণ। ২০১৭ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ কমে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ ৮১ শতাংশ। সেই তুলনায় বাংলাদেশে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মজুদ বেশি না হলেও তা ভবিষ্যতে বাড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।


দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। অবশ্য ধীরে ধীরে তা কমছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলার দিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। তাই বিদেশে রপ্তানি, রেমিটেন্স ও অন্যান্য নানা পদ্ধতিতে বিদেশ থেকে আসা মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক লেনদেন হয় ডলারে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ইউয়ানের মজুদ ছিলনা। সেই বছর আইএমএফ এসডিআর কারেন্সি বাস্কেটে ইউয়ানকে অন্তর্ভুক্ত করে। যা লেনদেনযোগ্য কারেন্সি হয়। এর ফলে চীনা মুদ্রার রিজার্ভ কারেন্সি হবার সুযোগ তৈরি হয়। পাশাপাশি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের ভালো ব্যবসায়িক লেনদেন আছে। তাই, ইউয়ান দিয়ে লেনদেনের বেশি সুযোগ তৈরি হয়েছে।।

বাংলাদেশে ২০১৭ সালে কারেন্সি রিজার্ভের চীনের মুদ্রা ইউয়ান ছিল ১ শতাংশ। বর্তমানে যা ১.৩ শতাংশ হয়েছে। এটি খুব উল্লেখযোগ্য না হলেও পরিমাণ বাড়ার ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ৫২৮ মিলিয়ন ডলার সমমান ইউয়ান সংগ্রহে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।

ইউয়ান লেনদেনযোগ্য মুদ্রা হওয়ায় চীন এখন বাংলাদেশে ইউয়ানের মজুদ বৃদ্ধিতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ইউয়ানে ঋণ দেওয়া এবং দ্বিপক্ষীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউয়ান ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে চীন। যদিও, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা ইউয়ানের মজুদ বৃদ্ধির চেয়ে ডলারে মজুদ বৃদ্ধিতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে, চীন বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানি অংশীদার রাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে ইউয়ানের রিজার্ভ থাকা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। আর্থিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশীয় রিজার্ভের মধ্যে শুধু ডলার নয়, বরং বিভিন্ন দেশের মুদ্রা থাকাই বেশি নিরাপদ। গোটা বিশ্বেই চীনের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হয়েছে। তাই ইউয়ানে লেনদেনের সুযোগ বেড়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও ইউয়ানের সঞ্চয় ধীরে ধীরে বাড়ছে।

তবে, চীন ও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৮ বিলিয়ন ডলার। চীন থেকে আমদানির তুলনায় চীনে রপ্তানি খুবই কম হওয়ায় এই ঘাটতি। এ অবস্থায় ইউয়ান দিয়ে আমদানি পণ্যের দাম পরিশোধ করতে হলে বাংলাদেশকে ডলার দিয়েই ইউয়ান ক্রয় করতে হয়। এতেও ‘মুদ্রা বিনিময় ক্ষতির’ মুখে পড়ে বাংলাদেশ। চীনের সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশকে এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড স্বদেশীয় মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় সুদের হার বৃদ্ধি করে। এতে করে ডলার নির্ভর এশিয়ার দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একক মুদ্রা নির্ভরশীল দেশের পক্ষে এই বিপদ মোকাবিলার সুযোগ নেই।

তথ্যমাধ্যম থেকে দেখা যায়, বর্তমান বাংলাদেশের যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু আমদানি খরচ বাড়তে থাকায় রিজার্ভের পরিমাণ কমে যায়। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের রিজার্ভ নেমে এসেছে ৫৭২ বিলিয়ন ডলারে। যা গত ২০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। পাশাপাশি চীন, জাপানের রিজার্ভও কমেছে। পাকিস্তানের রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে থাকা শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম।


এদিকে, অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, যেকোনো দেশেরই নিজস্ব মুদ্রার বাইরে বিদেশি মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই নিয়মই মেনে চলে। তাই বাংলাদেশকেও এ বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।