এবারও সফলতার ছাপ রেখেছে চীনা পরিষেবা মেলা
2022-09-05 11:49:09

গত ৩১ অগাস্ট ছয় দিনব্যাপী চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা মেলা-২০২২ বেইজিংয়ে শুরু হয়েছে।

 

এবারের মেলার আয়তন এবং তাতে সরাসরি অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এবার প্রদর্শনী এলাকার মোট আয়তন ১ লাখ ৫২ হাজার বর্গমিটার।

 

জানা গেছে, এবারের মেলায় বিশ্বের পরিষেবা বাণিজ্য খাতের আরও বেশি নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হবে।

 

টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার ও তথ্যসেবা, অর্থসেবা, সংস্কৃতি ও পর্যটনসেবা, ক্রীড়াসেবা, পরিবেশসেবা—এই ৯টি বিষয়ের পাশাপাশি মেলায় ‘বিশ্ব পরিষেবা বাণিজ্য শীর্ষ সম্মেলনসহ’ ছয় ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। তাহলে, আজকের ব্যবসা-বাণিজ্য অনুষ্ঠানে আমি “সহযোগিতা ও সৃজনশীলতায় নতুন সুযোগ অন্বেষণ--পরিষেবা মেলায় অংশগ্রহণকারী অতিথি বিশ্ব পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা” বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করবো।

 

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্ব পর্যটন উন্নয়ন বিরাট ঝুঁকিতে পড়ে। ফলে পর্যটন শিল্পের দ্রুত পুনরুদ্ধারে বিশ্ব পর্যটন শহরের প্রাণশক্তি উদ্দীপ্ত করা বিশ্ব পর্যটন শিল্পের অভিন্ন উদ্বেগে পরিণত হয়।

 

তবে প্রশ্ন ওঠেছে: পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন নতুন কী প্রবণতা দেখায়? পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধারে কী কী নতুন বিকল্প-ব্যবস্থা আছে? এবং কী করে অধিকতর সহযোগিতা ও উদ্ভাবন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে?

 

গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে চীনের আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্য মেলা চলাকালে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক শীর্ষ ফোরামের অন্যতম হিসেবে বিশ্ব পর্যটন শহর ফেডারেশনের (ডাব্লিউটিসিএফ) উদ্যোগে “২০২২ বিশ্ব পর্যটন সহযোগিতা ও উন্নয়ন সম্মেলন” বেইজিং ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বিশ্ব পর্যটন মহলের প্রতিনিধিরা “সহযোগিতা গভীরতর, উন্নয়ন উদ্ভাবন” প্রতিপাদ্যকে ফোকাস করেন। গভীরভাবে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও ভাগাভাগি করেন। এবং যৌথভাবে বিশ্ব পর্যটন শিল্পের উচ্চমানের উন্নয়ন পথ নিয়ে আলোচনা করেন।

 

বর্তমানে বিশ্বের পর্যটন ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। সম্মেলনে প্রকাশিত “বিশ্ব পর্যটন শহর উন্নয়ন রিপোর্ট-২০২১”-এ বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা ২০২০ সালের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু মহামারী তার আগের বছর তথা ২০১৯ সালের চেয়ে ৭২ শতাংশ কমেছে। ২০২১ সালে বিশ্ব পর্যটন পণ্যভোগের মোট পরিমাণ ছিল ১.৯  ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২০ সালের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু তা মহামারীর আগের বিশ্ব পর্যটন পণ্যভোগের অর্ধেক।

 

রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বের অভ্যন্তরীণ পর্যটন পুনরুদ্ধার হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যটনের সমন্বয় ধীর ছিল। অভ্যন্তরীণ পর্যটন আয় ২.৭৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সমবেত হয়ে মহামারীর আগের বছর তথা ২০১৯ সালের ৬৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যটন আয় ২০১৯ সালের প্রায় ৩০ শতাংশ মাত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে।

 

সম্মেলনে বিদেশী অতিথিগণ তাঁদের দেশের পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধারের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, টিকা গ্রহণের হার বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল পর্যটন গবেষণা ও উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রযোজ্য এবং আকর্ষণীয় পর্যটন পণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে তাঁদের দেশ।

 

সহযোগিতা জোরদার করা হচ্ছে পর্যটন শিল্পের অধিকতর পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।

 

কোভিড-১৯ মহামারী, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক মাত্রায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। কিন্তু সহযোগিতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্প পুনরুদ্ধার হবার সঙ্গে সঙ্গে যথাক্রমে তার বলিষ্ঠতা পুনরুদ্ধার করতে পারবে, ফিনল্যান্ডের  রাজধানী হেলসিঙ্কির মেয়র এ কথা বলেন।

 

কোভিড মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব পর্যটন শিল্প অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু সিউল ও বেইজিংয়ের মতো বিশ্ব পর্যটন শহর ফেডারেশনের সদস্য শহর ঐক্য ও সহযোগিতা করে, অভিন্ন চেষ্টার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সিউলের মেয়র বলেন, এবারের সম্মেলন ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের প্রবণতা অন্বেষণ করা, নতুন ধারণা আলোচনা করা এবং বিশ্ব পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধার করার জন্য সুযোগ দিয়ে বিশ্ব পর্যটন শিল্পের সৃজনশীলতা ও উন্নয়নে সহায়তা দেয়।

 

নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাসহ বিভিন্ন উপাদান আমাদের চ্যালেঞ্জিং সময়ে সমস্যা অতিক্রম করে অব্যাহতভাবে আরও উঁচুমানের সরকারি পরিষেবা এবং জনগণের কল্যাণ অন্বেষণ করতে উদ্দীপিত করতে পারে। ব্রাজিলের বেলো হরিজন্টে শহরের মেয়র বিশ্ব পর্যটন শহর ফেডারেশন খাতটির পুনরুদ্ধার ও আঞ্চলিক সহযোগিতাকে সমর্থন এবং নেতৃত্ব দেয়ার প্রত্যাশা করেন। যাতে পর্যটন শিল্পের জন্য আরও বেশি সৃজনশীল ও টেকসই উপাদান তৈরি হবে।

 

পর্যটন শহরের পুনরুদ্ধার হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন শিল্প পুনরুজ্জীবনের চাবিকাঠি

 

বেইজিং শহরের তথ্যে দেখা গেছে, শহরটি পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। ফলে বুটিক পর্যটন লাইন স্থাপন, ইউনিভার্সাল থিম পার্ক ও “লিউ গোং হুই” ব্যবসা স্থাপনসহ বিভিন্ন নতুন সাংস্কৃতিক পর্যটন ল্যান্ডমার্ক তৈরি এবং সিয়াংশান বিপ্লবী মেমোরিয়াল সাইট সহ লাল পর্যটনের কাঙ্ক্ষিত স্থানের ব্যবস্থা করেছে এ শহর। এছাড়া, বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস এবং শীতকালীন প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসসহ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে গভীরভাবে রাজধানীর সংস্কৃতি ও পর্যটন সম্পদের উন্নতি করে পর্যটনসহ বিভিন্ন খাত পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে।

 

এসব ব্যবস্থা কার্যকরভাবে পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। ২০২১ সালে বেইজিংয়ে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২৫.৫ কোটি, পর্যটন খাতে আয় ছিল ৪১ হাজার ৬৬২ কোটি ইউয়ান, যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৩৮.৮ এবং ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

 

আমরা মনে করি, এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য খুবই স্পষ্ট এবং সময়োপযোগী। বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অব্যাহতভাবে সহযোগিতা সমন্বয় করে, সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ে যৌথভাবে খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে এবং পর্যটকদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এমনটিই বললেন শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার উপ-মহাসচিব।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, সহযোগিতার সুযোগ কাজে লাগানো এবং সৃজনশীলতায় উন্নয়ন অর্জনে অবিচল থাকলে, নিশ্চয়ই বিশ্ব পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি স্বচক্ষে দেখা যাবে।

 

(প্রেমা/এনাম)