সেপ্টেম্বর ৫: চলতি বছর রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) কার্যকর হয়েছে। চুক্তি অনুসারে, চীনে নতুন ২২টি পরিষেবা বিভাগ উন্মুক্ত হয়েছে এবং ৩৭টি পরিষেবা বিভাগের উন্মুক্তের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এতে চীনের উন্মুক্তকরণ-প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়। ২০২২ সালের চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা মেলায় আরসিইপি-ভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের নামে ‘থিম প্রদর্শনী’ স্থাপিত হয়।
এবারের পরিষেবা মেলায় থাইল্যান্ডের জাতীয় প্যাভিলিয়নের বুথে থাই ডেভেলপারদের তৈরি কম্পিউটার গেমস মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সিনেমা, ফিল্ম, টিভি নাটক, গেমস, ইত্যাদি ডিজিটাল পরিষেবা এবার থাইল্যান্ডের প্যাভিলিয়নে বিশেষ গুরুত্ব পায়। এ ছাড়া, থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং "থাই সিলেক্ট" সার্টিফিকেশন মার্কও পরিষেবা বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে প্রচার লাভ করে। সাংহাইতে রয়্যাল থাই কনস্যুলেট জেনারেলের বাণিজ্যিক কনসাল জিরানুন হিরুন্যসুমলীথ বলেন:
“আমাদের একটি অফিসিয়াল বি-২-বি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে এবং চীনে আমাদের একটি ভোক্তামুখী বি-২-সি প্ল্যাটফর্মও রয়েছে। আমরা চীনা গ্রাহকদের সাথে 'থাই সিলেক্ট' সার্টিফিকেশন চিহ্নকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। প্রশংসাপত্রে ভূষিত সব রেস্তোরাঁ বা বিভিন্ন ধরনের খাবারে খাঁটি থাই স্বাদ রয়েছে। বর্তমানে চীনের মূল ভূভাগে প্রায় ৮০টি থাই রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেগুলোকে এই প্রশংসাপত্রে অনুর্ভুক্ত করা হয়েছে।"
রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)-এর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবার অর্থ হল চীনের ২২টি নতুন পরিষেবা খাত উন্মুক্ত হয়েছে এবং ৩৭টি পরিষেবা খাতের উন্মুক্তকরণের মান উন্নত হয়েছে। জিরানুন হিরুন্যসুমলীথ সাংবাদিকদের বলেন, আশা করা হচ্ছে যে আরসিইপি চুক্তির মাধ্যমে থাইল্যান্ড ও চীনের মধ্যে পরিষেবা বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সামগ্রিক মান আরও উন্নত হবে। তিনি বলেন:
"আমি বিশ্বাস করি যে, আরসিইপি অবশ্যই থাইল্যান্ডের পরিষেবা শিল্পের চীনা বাজারে প্রবেশের আরও সুযোগ নিয়ে আসবে। আরসিইপি’র মাধ্যমে আরও বেশি থাই পণ্য এবং পরিষেবা বিশাল চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে এবং ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন দিক সহজতর হবে। এতে থাইল্যান্ড ও চীনের মধ্যে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্য আরও জোরদার হবে।"
চলতি বছর চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া পরিষেবা বাণিজ্য মেলায় নিজের সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও অন্যান্য প্রাধান্য তুলে ধরেছে। কোরিয়া প্যাভিলিয়নে দর্শকরা হ্যানবোক পরে ছবি তুলেছে, কোরিয়ান কার্টুন পুতুলের সাথে ছবি তুলেছে, ভিআর চশমা পরে কোরিয়ান-স্টাইলের ভিআর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। চীনে কোরিয়ান দূতাবাসের অর্থনৈতিক মিনিস্টার পোক-কেউন ইউহ সাংবাদিকদের জানিয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন পরস্পরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। আরসিইপি কার্যকর হওয়ার পর দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও গভীর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোরিয়া-চীনের মধ্যে বিনিময় আরও বাড়বে। তিনি বলেন,
"দুই দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করছে, এবং নেতিবাচক তালিকার কাঠামোতে উচ্চ-স্তরের পরিষেবা বাণিজ্য ও উন্মুক্ত বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করছে। আমি বিশ্বাস করি যে, চুক্তি হওয়ার পর পর দু’দেশের পরিষেবা বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। আমি আশা করি, এ নতুন চুক্তিতে তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যাবে।"
চীনে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রতিনিধি শি চিগুয়াং সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছরের ১৮ই মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ার জন্য আরসিইপি কার্যকর হয়। এতে মালয়েশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও শক্তিশালী হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এতে দুই দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ ও জনগণ উপকৃত হবে। তিনি বলেন,
‘উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে, মালয়েশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০.৭% বেশি। আশা করা হচ্ছে যে, আরসিইপি চুক্তির অধীনে দু’দেশের মধ্যে পণ্যের ও পরিষেবা বাণিজ্য অদূর ভবিষ্যতে আরও বিকশিত হবে।"
চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী শেং ছিউ পিং এর আগে উল্লেখ করেন যে, আরসিইপি কার্যকর হওয়ার মাসে চীনের উন্মুক্তকরণের মান আরও উন্নত হবে। চীন আরসিইপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সদস্যদেশের সাথে পরিসেবা বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করবে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)