ধানক্ষেতে শুধু ধান হবে, এটাই তো স্বাভাবিক তাইনা? কিন্তু না, ধানক্ষেতে মাছের চাষও হয়! শুধু তাই নয়, এই ক্ষেতে উত্পাদিত ধান ও মাছ—দুটোই দূষণমুক্ত সবুজ পণ্য।
১৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগে, ছিংথিয়েন জেলা এমন একটি জায়গা ছিল, যেখানে পাহাড় বেশি, জমি খরাযুক্ত এবং আবাদী জমির পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু তখনকার মানুষ তাদের প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে ধান ও মাছ একসঙ্গে চাষ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করে।
ছিংথিয়েন জেলার পূর্বপুরুষেরা পাহাড়ে সিঁড়ির ধাপের মতো থাককাটা ক্ষেতে চাষাবাদ করে। তাঁরা ক্ষেতে ধানের চারা রোপণ করে এবং পাশাপাশি একই ক্ষেতে মাছের চাষও করে। তাঁরা একটি স্থানীয় অনন্য জাতের মাছ চাষ করে, যেটি সুস্বাদু। এ মাছের নাম “ঔ চিয়াং রঙিন মাছ”। একটি ক্ষেত দু’টি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, এবং ধান ও মাছ—দুটোই উত্পাদিত হয়। পাহাড়ি এলাকায় চাষযোগ্য জমির অভাব রয়েছে। সেখানে একই ক্ষেত্রে ধান ও মাছের চাষ কৃষকদের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে। এটি স্থানীয় কৃষকদের প্রজ্ঞার প্রতিফলনও বটে।
ছিংথেনের পাহাড়ের চূড়ায় সবুজ গাছপালা। চূড়া থেকে নেমে আসে স্বচ্ছ পানির স্রোত। স্রোতধারার পাশেই স্থানীয়দের বাড়িঘর। গ্রামবাসীরা সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসে মাছের পোনা ধানক্ষেতে ছেড়ে দেয় এবং শরত্কালে বড় বড় মাছ ধরে।
চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত, ছিংথিয়েন ‘ধান-মাছ’ চাষ হয়েছে মোট ৮০ হাজার মু জমিতে। আর মানসম্মত ধানক্ষেতের মাছ চাষের বেস ৩৫ হাজার মু। এর বার্ষিক আউটপুট মূল্য ৫০০ মিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। ফলে পূর্ব ছিংথিয়েনের কৃষকদের আয় অনেক বেড়েছে। অনেকে মনে করেন, ছিংথেন জেলার ধানক্ষেতের মাছ সমুদ্রের সুস্বাদু হলুদ ক্রোকারের চেয়েও বেশি সুস্বাদু।
ছিংথিয়েনে ‘জমিতে ধান চাষ, ধানক্ষেতে মাছ চাষ, মাছের মল দিয়ে জমি উর্বর করা’-র প্রযুক্তি স্থানীয়দের আয় বাড়িয়েছে। এটি কেবল পাহাড়ি মানুষের জীবন উন্নত করেছে, তা নয়, বরং প্রকৃতি সংরক্ষণেও রেখে চলেছে ভূমিকা।
২০০৫ সালের ১৬ই জুন, ছিংথিয়েন ‘ধান-মাছ সিম্বিওসিস সিস্টেম’ চীনের প্রথম প্রকল্প হয়ে ওঠে, যা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত। কেন এই ব্যবস্থাটি স্বীকৃতি পেয়েছে? কারণ, এটি স্বল্পোন্নত দেশ ও অঞ্চলে পাহাড়ি কৃষির জন্য উদাহরণ হতে পারে।
অনেকেই প্রশ্ন করবেন: এখন কৃষিপ্রযুক্তি এতো উন্নত। এখন কি এমন কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাত্পর্যপূর্ণ? কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একটি উন্নয়নশীল ঐতিহ্য, এবং এর সাথে আধুনিক কৃষির বিরোধিতা নেই। ছিংথিয়েন ধান-মাছ সিম্বিওসিস সিস্টেমে প্রচুর কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক কৃষিও কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে সবুজ পরিবেশ সুরক্ষার ধারণা শিখতে পারে।
স্থানীয় মানুষ বলে থাকেন: ‘এক’শ মু জমি, এক’শ কেজি মাছ, হাজার কেজি খাদ্য এবং দশ হাজার ইউয়ান’। এটি হলো ধান-মাছ ব্যবস্থা, এটি হলো ছিংথিয়েন ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ছিংথিয়েনে কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পর্যটনও চালু হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যময় পর্যটন অভিজ্ঞতা থেকে পর্যটকরা কৃষিসম্পর্কিত জ্ঞান শিখতে পারেন, এবং কৃষিকাজের অভিজ্ঞতাও লাভ করতে পারে। কৃষি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পর্যটনের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন, উত্পাদন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এবং এটা অনেক পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
আচ্ছা বন্ধুরা, আপনারা কি ধানক্ষেতে চাষ হওয়া মাছের রান্না দেখতে চান? আপনাদের জন্য প্রস্তুত করেছি একটি ছোট ভিডিও। চলুন, দেখে নেওয়া যাক এই মাছ রান্নার একটি প্রক্রিয়া।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্তই। আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে। আমি জিনিয়া, সিএমজি বেইজিং থেকে। (জিনিয়া/আলিম/শুয়েই)