সেপ্টেম্বর ২: সম্প্রতি সিআরআই একটি সম্পাদকীয়তে বলেছে, যেখানে মার্কিন গণতন্ত্র রয়েছে, সেখানে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ হয়।
গত বছরের ২৯ অগাস্ট। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এক দিন আগে, চরমপন্থি গোষ্ঠী দমনের অজুহাতে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল। এতে ১০জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ৭টি শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল মাত্র ২ বছর।
এক বছর পর এই দিনে, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে একটি গুরুতর সংঘর্ষ হয়। তাতে কমপক্ষে ৩০জন নিহত হন এবং কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছেন। মার্কিন বাহিনী ‘গ্রিন জোনে’ বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও সেখানে রকেট হামলা হয়। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমসের’ এক প্রবন্ধে বলা হয়, এতে দেখা যায়, ইরাক আরো বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে।
আফগানিস্তান থেকে ইরাক পর্যন্ত, এ দুটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের মাধ্যমে ‘গণতন্ত্রের মডেল’ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। তবে বাস্তবতা থেকে দেখা যায়, যেখানে মার্কিন গণতন্ত্র চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেই স্থান বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষের মুখে পড়েছে এবং সেখানে ব্যাপক পরিমাণ নিরীহ মানুষ বসতবাড়ি হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েছেন।
এবার ইরাকের সংসদীয় সরকার গঠনকে সামনে রেখে সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে ইরাকে ‘মার্কিন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন শুরু করা হয়। তবে একবারও দেশটিতে সফলভাবে সরকার গঠন করা যায় নি।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ইরাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে যুদ্ধ চালিয়েছে। যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র জোর করে সে দেশে ‘মার্কিন গণতন্ত্র’ চাপিয়ে দিয়েছে। প্রায় ২০ বছর পর বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কথিত ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার’ ইরাকে অনেক সমস্যা ডেকে এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্র জোর করে পশ্চিমা গণতন্ত্র ও রাজনীতির ব্যবস্থা ইরাকে চাপিয়ে দিয়েছে। তাতে ইরাকের রাজনৈতিক বিভেদ ঘটেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী আর মতৈক্যে পৌঁছাতে পারছে না।
যুদ্ধ ও সংঘর্ষ ইরাকের অর্থনীতির বহু ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এ থেকে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে, ইরাকের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ১০ হাজার ৩৫৬ ডলার। তবে ২০২০ সালে তা মাত্র ৪১৫৭ ডলারে নেমে আসে।
সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসবাদ দ্রুত বাড়ছে।
বর্তমানে, বাগদাদের নিরাপত্তা ধীরে ধীরে কমছে। দেশটিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, ইরাকে ‘মার্কিন গণতন্ত্র’ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের নামে ইরাকে যা দিয়েছে, তার আসল লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন আধিপত্য রক্ষা করা। ইরাক-কৌশল বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ করার লক্ষ্য হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের আধিপত্য মজবুত করা।
২০ বছর পার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে অনেক নিরীহ জীবন ‘মার্কিন গণতন্ত্রের’ বলি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যে অপরাধ করেছে, তার শাস্তি পাওয়া উচিত। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সমাজকে ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা করতে হবে।
(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)