অগাস্ট ৩০: জাপানের উদ্যোগে ‘আফ্রিকার উন্নয়নে অষ্টম টোকিও আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ ২৭ ও ২৮ তারিখ তিউনিসিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। এবারের অধিবেশনে আফ্রিকা অঞ্চলকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাপানের নিজের বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন তুলনামূলক-ভাবে পিছিয়ে রয়েছে। আফ্রিকার প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের অর্থনৈতিক সহায়তা আসলে একটি ভাল ব্যাপার হতে পারে। তবে, কিছু কিছু দেশের ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। এবারের অধিবেশনে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ভিডিও ভাষণের মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, আগামী তিন বছরের মধ্যে জাপান আফ্রিকায় ৩০ বিলিয়ন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করবে এবং আফ্রিকার জন্য তিন লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের সাহায্য দেবে। তিনি ঘোষণা করেন যে, জাপান আফ্রিকার সাথে একযোগে উন্নয়ন করবে। তিনি বিশেষভাবে বলেন যে, ‘জাপানের এসব কার্যক্রম চীনের কর্মকাণ্ডের চেয়ে ভিন্ন হবে।’ জাপানের সংবাদপত্র ‘আশাহি শিম্বুন’ ২৮ তারিখের এক সংবাদে জানায়, জাপানের প্রধানমন্ত্রী আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্য হচ্ছে- চীনকে মোকাবিলা করা।
এ মনোভাব আসলে প্রকাশ হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপন করার পর থেকে, জাপানের কিছু রাজনীতিক এ ধরনের চিন্তাধারা লালন করত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত তথাকথিত অবকাঠামো খাতে পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে জাপান সরকার। তা ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার ক্ষেত্রে জাপান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
আফ্রিকার দেশগুলোর মনে একটি প্রশ্ন রয়েছে, তা হলো আফ্রিকাকে জাপানের ‘সহায়তা’ সত্যিই কি আফ্রিকার জন্য? নাকি নিজের স্বার্থের জন্য? অনেক বিশ্লেষক ইতোমধ্যে বলেছেন, জাপান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুখে বলেছে যে, আফ্রিকার প্রতি সহায়তা তাদেরকে উন্নত করবে। চীনকে মোকাবিলা করার পাশাপাশি, অর্থ খরচ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশ হতে চায় জাপান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত দেশ হিসেবে, জাপান অর্থনৈতিক খাতে উন্নত হয়েছে। তা হলেও দেশটি সবসময় রাজনৈতিক অবস্থান তৈরির চেষ্টা করে আসছে। জাপান কথিত ‘স্বাভাবিক দেশে’ পরিণত হতে চায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ‘আফ্রিকার উন্নয়নে টোকিও আন্তর্জাতিক সম্মেলন’সহ নানা আন্তর্জাতিক অধিবেশনে জাপান জানিয়েছে যে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার হলো জাপান ও আফ্রিকার অভিন্ন লক্ষ্য। এবারের অধিবেশনে জাপান আবার পুরাতন কথাটি ব্যাখ্যা করেছে। তাতে দেখা যায়, আফ্রিকাকে জাপানের কথিত ‘সহায়তার’ পিছেনে ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে।
আফ্রিকা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বড় বাজার। এটি জিরো সাম গেমের স্থান নয়। জাপানি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, জাপান আফ্রিকার সঙ্গে একযোগে উন্নতি করতে চায়। যদি তিনি সত্যিই এটা চান, তাহলে চীনের মতই আন্তরিকভাবে আফ্রিকান জনগণের সঙ্গে আচরণ করা উচিত। এতে সমতা, সম্মান, পারস্পরিক কল্যাণ ও পারস্পরিক জয় হতে পারে। লোক দেখানো ও স্বার্থ অর্জনের ‘সহায়তা’ প্রকৃত অর্থে আফ্রিকার চাহিদা নয়।
(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)