প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আরও ২৫ টাকা বাড়লো বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি। অর্থাৎ দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের ফলাফল- মোট ৫০ টাকা বাড়লো মজুরি। ১২০ টাকা থেকে বেড়ে তা এখন ১৭০ টাকায় দাঁড়ালো। তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আনুপাতিক হারে বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা এসেছে। চা বাগান মালিক ও সরকারের তরফে বলা হচ্ছে ক্যাশ এন্ড কাইন্ড মিলিয়ে এখন শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা সমমূল্যের হবে।
সরকারের এ ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে শ্রমিকদের মাঝে। কেউ কেউ এটুকু মজুরি বাড়াতেই খুশি হয়েছেন। আবার অনেক হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতি সম্মান জানিয়ে কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রমিকরা। এতে রোববার থেকেই প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে দেশের চা বাগানগুলোতে।
১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৭টি নিবন্ধিত চা বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে জুলাই-সেপ্টেম্বরে চা সংগ্রহের ভরা মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে চা শিল্প।
শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১৯ আগস্ট সরকার, মালিক ও শ্রমিক নেতাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট অব্যাহত রাখে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান এবং সরকার প্রধান যে মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন তা মেনে নিয়ে কাজে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা দেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা বাগানের মালিকদের বৈঠকে ডাকেন। চা বাগান মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলমের নেতৃত্বে ১৩টি চা বাগানের মালিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস জানান, শেখ হাসিনা শ্রমিকদের জন্য দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নতুন মজুরি অনুযায়ী শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়বে বলে জানান তিনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যেমন নগদ মজুরী ১৭০ টাকা হয়েছে। তার সঙ্গে প্লাকিং বোনাস আর কারাখানা অধিকার কাজের আয় সেটা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি সবই বাড়বে আনুপাতিক হারে।
আহমদ কায়কাউস বলেন, ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগ কর্তার চাঁদা, কাজে উপস্থিতি অনুযায়ী বার্ষিক উৎসব ভাতা সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। এ ছাড়াও রয়েছে ভর্তুকি মূল্যে রেশন।
তবে, চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষাবেক্ষণ এবং অন্যান্য ব্যয় এই সবকিছু মিলিয়ে যেটা পড়ে সেটার হিসাব এখনো তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মুখ্যসচিব। তা সত্ত্বেও বর্ধিত বেতন নিয়ে চা শ্রমিকদের মোট মজুরি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর মজুরি বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করার ঘোষণায় খুশি হতে পারেননি বেশির ভাগ শ্রমিক। যদিও বেশিরভাগ শ্রমিক নেতা ৫০ টাকা মজুরি বাড়াকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তারা এতে গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তবে, সাধারণ শ্রমিকরা বলছে-১৭০ টাকা মজুরিতে তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। প্রধানমন্ত্রী তাদের দুঃখ বুঝলেন না বলেও খেদ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন মুজরি অন্তত ২০০ টাকা হল তারা খুশি হতেন।
তবে, প্রধানমন্ত্রী মজুরি নির্ধারণ করে দিলে তা মেনে কাজে ফিরবার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোববার থেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে চা বাগানগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। রোববার অনেক চা বাগানে ছুটি থাকায় সোমবার কাজে ফিরবেন তারা।
অর্থাৎ দৃশ্যত মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনের আপাত সমাপ্তির মধ্য দিয়ে চা-শিল্পে চলমান সংকটের একটা সুরাহা হয়েছে বলা যায়। দ্রুত চা শিল্প স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করা যায়।
তবে মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমিকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির যে ঘোষণা সরকার ও মালিক পক্ষের তরফে দেওয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন জরুরি। মালিক পক্ষ যাতে এ বিষয়ে গড়িমসি করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারকেই তদারকি করতে হবে। না হলে- চা শিল্পে ফের অস্থিরতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।