দেহঘড়ি পর্ব-৮৪
2022-08-26 19:26:45

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য’।

 

# ঐতিহ্যবাহী_চিকিৎসাধারা

মাথাব্যথার চিকিৎসায় আকুপাংচার ও টিসিএম

মাথাব্যথা অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা। প্রত্যেক মানুষেরই মাঝে মাঝে মাথাব্যথা হয়। কিন্তু অনেকে দীর্ঘস্থায়ী ও গুরুতর মাথাব্যথা অনুভব করে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে। আকুপাংচার ও ঐতিহ্যবাহী চীন ওষুধ বা টিসিএমের সাহায্যে মাথাব্যথার মূল কারণ পর্যন্ত পৌঁছানো এবং সেটা দূর করা সম্ভব হয়। টিসিএম ব্যবহার করলে ব্যথার ওষুধের উপর নির্ভর করার প্রয়োজন পড়ে না। ব্যথার ওষুধ রোগটি পুরোপুরি সারিয়ে তোলেতো না-ই; উপরোন্ত নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার প্রকোপের হার নির্ণয় করার জন্য চালানো প্রথম মার্কিন সমীক্ষায় দেখা যায়, সাধারণ মানুষের প্রায় ৪ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথায় ভোগে। এরা বছরের প্রায় ১৮০ দিন মাথাব্যথা অনুভব করে। জরিপকৃতদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের উদ্বেগজনিত মাথাব্যথার কথা জানায় আর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাইগ্রেনের মাথাব্যাথার অভিজ্ঞতার কথা জানায়।

বর্তমানে আকুপাংচার ক্লিনিকগুলোতে যেসব সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসে, তার মধ্যে অন্যতম মাথাব্যাথা। আকুপাংচার ব্যবহার করে টিসিএম বিশেষজ্ঞরা মাথাব্যথা উপশম করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাথাব্যথা উপশমে সাধারণ ওষুধ ব্যবহার করলে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সেটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

আকুপাংচারের মাধ্যমে যেসব মাথাব্যথার চিকিৎসা করা যায়, তার মধ্যে রয়েছে মাইগ্রেন, উদ্বেগজনিত মাথাব্যথা, মাসিক ঋতুচক্রের সময় দেখা দেওয়া মাথাব্যথা, সাইনাসের মাথাব্যথা এবং মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা।

আজ আমরা বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা এবং তাদের কারণগুলো বিশ্লেষণ করব, কীভাবে আকুপাংচার এবং টিসিএম দিয়ে তাদের চিকিৎসা করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব, এ চিকিৎসার কার্যকারিতার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেখাবো এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে আপনি মাথাব্যথা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সে সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেবো।

আকুপাংচারের মাধ্যমে মাথাব্যাথা চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে মাথাব্যথাকে তাদের অবস্থান অনুসারে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি মতে, মাথাব্যথা ৭ ধরনের হয়। আকুপ্রেসার এ ৭ ধরনের ব্যথাই উপশমে সাহায্য করতে পারে।

আকুপাংচার পয়েন্ট এবং অন্যান্য চিকিৎসার কৌশলগুলো কী হবে তা নির্ধারণে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয় সেগুলো হলো কিসের কারণে মাথাব্যথা শুরু হয়; মাথাব্যথার অবস্থান, ফ্রিকোয়েন্সি বা পৌনঃপুন্য ও তীব্রতা; ব্যথার মান; দিনের কোন সময় ব্যথা হয়, কিসে মাথাব্যথা কমে এবং কিসে তা বাড়ে। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর টিসিএম বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যে মাথাব্যাথা কি আবেগ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মাসিক ঋতুচক্র, ঘুমের অভাব বা পুষ্টির অভাবের মতো অভ্যন্তরীণ কারণগুলো থেকে উদ্ভূত; নাকি পরিবেশের দূষিত পদার্থ, বালিশের কারণে ঘাড় বা চোয়ালের টানের মতো বাহ্যিক কারণগুলো থেকে উদ্ভুত। মাথা ও ঘাড়ের পিছনের অক্সিপিটাল স্নায়ুগুলোর ওপর বেশি চাপ পড়লে অক্সিপিটাল মাথাব্যথা হয়। কয়েকটি কারণ এক সঙ্গে মিলেও মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে টিসিএম চিকিৎসকরা সবগুলো কারণ বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণ করেন এবং আকুপাংচার চিকিৎসার জন্য পয়েন্টগুলো বেছে নেন। যেমন অনেক মাইগ্রেনের মাথাব্যথা লিভারের সঙ্গে যুক্ত। তাই সেক্ষেত্রে লিভারে ‘ইয়াং’ বা উষ্ণ শক্তি উপশম করার জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। উদ্বেগজনিত মাথাব্যথা ঘাড় ও কাঁধের উত্তেজনার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। তাই আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ সেই জায়গাগুলোতে বাধা মুক্ত করার জন্য কাজ করেন। সাধারণত, রোগীদের আট সপ্তাহ যাবৎ প্রতি সপ্তাহে দুটি চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করা হয়।

কোকরেন ইন্সটিটিউট প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, আকুপাংচার হলো উদ্বেগজনিত মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথা প্রতিরোধ ও উপশমের একটি কার্যকর চিকিৎসা। ফলাফলে দেখা যায়, আকুপাংচার চিকিৎসা নেনটি এমন রোগীদের তুলনায় এ চিকিৎসাগ্রহণকারী রোগীদের মাথাব্যথা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ চিকিৎসার ফলও দীর্ঘমেয়াদী ছিল; অর্থাৎ চিকিৎসা চক্রের পরেও কয়েক মাস স্থায়ী ছিল।

আকুপাংচার চিকিৎসা ছাড়াও টিসিএম বিশেষজ্ঞরা ভেষজ গ্রহণ সম্পর্কিত একটি সুপারিশ করে যা রোগীর নির্দিষ্ট সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে পারে। সুপারিশ মতো ভেষজ ব্যবহার করলে সেগুলো শরীরের ‘ছি’ বা শক্তি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে; শরীরে ইয়িন বা শীতল শক্তি এবং ইয়াং বা উষ্ণ শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখে; বাধা পরিষ্কার করে এবং স্থবিরতা দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেষজগুলোর নিয়মিত ব্যবহার মাথাব্যথাকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করতে পারে।

মাথাব্যথা প্রতিরোধের জন্য আটটি স্বযত্ন

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মাথাব্যথার পৌনঃপুন্য ও তীব্রতা প্রতিরোধ বা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনার মাথাব্যথা অতিক্রম করার জন্য আপনি কী করতে পারেন তার উপর ফোকাস করুন।

পুষ্টি: রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে নিয়মিত প্রতি ৩ ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময় পরপর খাবার বা স্ন্যাকস খান। এমন খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন, যা মাথাব্যথাকে আরও জাগিয়ে তুলতে পারে। যেমন প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেশি পুরনো পনির, অ্যালকোহল ও অ্যাসপার্টাম দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাদ্য। ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথার একটি সাধারণ কারণ। অন্যান্য তরল ছাড়াও সারা দিন প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে ভুলবেন না।

ঘুম: ঘুমের একটি সময়সূচি ঠিক করুন এবং সেটা বজায় রাখুন। সপ্তাহান্তে ও অন্যান্য ছুটিসহ প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে ঘুমোতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। ঘুমের চাহিদা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। আপনার জন্য কতটা সর্বোত্তম তা খুঁজে বের করুন এবং তারপর সেটা পুরণ করার চেষ্টা করুন।

স্ট্রেস: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সবচেয়ে সাধারণ মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের কারণগুলোর অন্যতম। আপনার দৈনন্দিন জীবনে চাপ কমানোর কৌশলগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন। অতিরিক্ত কাজের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে দৃঢ় সীমানা নির্ধারণ করুন, নিয়মিত ধ্যানের জন্য আলাদা সময় বের করুন এবং বুনন, পড়া ও রান্নার মতো শান্ত ক্রিয়াকলাপের জন্য সময় রাখুন। শোবার আগে অন্তত এক ঘন্টা কিংবা সম্ভব হলে দু’ঘন্টা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন। - রহমান

 

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি   কী কী কারণে কিডনি বিকল হয় সেসব নিয়ে। প্রতিবছর বিশ্বে কিডনি রোগে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এর অধিকাংশই প্রায় ১০০টি নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। উন্নত দেশে মৃত্যুর হার বেশ কম। ২০১০ সালে বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ শতাংশ। বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে।

কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। পিঠের নিচের দিকে মেরুদণ্ডের দুই পাশে একটি করে দুটি শিম বিচির আকৃতির অঙ্গটিই কিডনি, যার আকৃতি ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের মতো। প্রতিটি কিডনির ভিতরে লাখ লাখ কোষ থাকে, যা নেফ্রন নামে পরিচিত। এই নেফ্রনগুলো শরীরের রক্ত ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিপাকীয় আবর্জনাগুলো বের করে দেয়। তাই কিডনিকে আমাদের শরীরের পরিশুদ্ধির অঙ্গ বলা চলে। কিডনি অকেজো হলে শরীরে দূষিত পদার্থ জমতে থাকে, ফলে নানান উপসর্গ দেখা দেয়। কিডনি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শরীরে রক্ত তৈরি করতে সহায়তা করে। তাই কিডনি অকেজো হলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ ছাড়া কিডনি আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি পদার্থগুলোর সমতা রক্ষা করে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি অকেজো হলে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই কিডনির কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই ভয়ের কারণ রয়েছে। তবে চিকিৎসার মাধ্যমেও কিডনির রোগ নিরাময় করাও সম্ভব এবং কিছু পদক্ষেপ নিলে কিডনি রোগ প্রতিরোধও সম্ভব। এ রোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শেখ মইনুল খোকন। তিনি কর্মরত ঢাকায় অবস্থিত কিডনি ফাউন্ডেশনে।।

 

# ‘সুস্বাস্থ্যের_জন্য’

যেভাবে খাবার খেলে বাড়বে না ওজন

আমাদের শহুরে জীবনে প্রায়ই কাজের চাপে ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যায়াম না করলে আমাদের মেটাবলিক রেট কমে যায়। শরীরে দেখা দেয় একাধিক রোগের উপসর্গ। তাই ওজন বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রথম থেকেই এই কয়েকটি খাবার অবশ্যই তালিকায় রাখবেন।

তবে মনে রাখাতে হবে, খাবার খেতে হবে ক্যালোরি মেপে। পেট ভরে খাওয়া যাবে না। এখান থেকেও হতে পারে হজমের সমস্যা। তাই ওজন কমাতে সবচেয়ে ভালো হয় বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া। আর প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত খিদেও পায় না। কারণ প্রোটিন হজম করতে সময় লাগে। যে কারণে খিদে দেরিতে পায়।

প্রোটিনের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, ডিম। বিশেষ করে ছোট মাছ। চিকেনের সুপ তৈরি করে খাওয়া যাবে। উদ্ভিজ প্রোটিনও রাখুন ডায়েট লিস্টে। ছোলা ও মুগ বেশি করে খান, পনির খান। ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে খাবেন।

ডিম প্রোটিনের খুব ভাল উৎস। ডিমের মধ্যে থাকে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। তাই ডিম খেলে খিদের অনুভূতি কম হয়। চিজ অমলেট বা ডিম ভাজার পরিবর্তে ডিম সিদ্ধ করে খান। ডিম সিদ্ধর সঙ্গে সামান্য লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ মিশিয়ে নিন।

মৌসুমি ফল খেতে পারেন, যেমন- আপেল, নাশপাতি, বেদানা, পেয়ারা, শসা, আঙ্গুর, আনারস, পেঁপে ইত্যাদি। কলা দিনে একটার বেশি খাবেন না। কারণ কলার মধ্যে বেশি পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। আনারস, আপেল, নাশপাতি এসব মিশিয়ে খেলে ওজন কমবেই। এছাড়াও খেতে পারেন বিভিন্ন রকম ড্রাই ফ্রুট। আমন্ড, ওয়ালনাট খেতে পারেন।

খেতে পারেন সালাদ। সালাদের মধ্যে থাকে নানা রকম সবজি। এর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই ফাইবার আমাদের খিদা কমিয়ে দেয় একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজনও- অভি/রহমান

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।