এটা হল চীনের সর্বোচ্চ নেতা সি চিন পিং-এর গল্প
2022-08-26 16:18:48

১৯৮২ সালে ২৯ বছর বয়সী সি চিন পিং চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ৩শ’ কিলোমিটার দূরের হ্য পেই প্রদেশের চেং তিং জেলায় গিয়ে জেলার সিপিসি’র উপ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

চেং তিং-এ থাকার তিন বছরে তিনি বাস্তবভিত্তিক ও ব্যাপক সংস্কার করেছেন। একজন মুরগি খামারিও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতে পেরেছেন। তাঁর সমর্থনে তৈরি পর্যটন স্থানের এক বছরের আয় বরাদ্দের পরিমাণ পাঁচ গুণ বেড়েছে। তিনি কৃষকদের শহরে গিয়ে আরও বেশি অর্থ উপার্জনের উত্সাহ দিয়েছেন। তিন বছরের মধ্যে চেং তিংয়ের মানুষ আগের ক্ষুধা-দারিদ্র্যের অবস্থা থেকে বের হয়ে স্থানীয় কৃষি উত্পাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন এবং কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক কৃষকের বাসায় তখনকার সবচেয়ে ফ্যাশনেবল ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও বাইসাইকেল কেনা হয়।

এরপর সি চিন পিং পূর্ব চীনের ফু চিয়ান প্রদেশ, চ্য চিয়াং প্রদেশ এবং শাংহাই শহরে কাজ করেছিলেন, ধীরে ধীরে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েছেন। ফু চিয়ান প্রদেশে কাজের সাড়ে ১৭ বছরে তিনি নানা বিষয় উত্থাপন করেছেন। দুর্বল পাখিকে আগে উড়তে হয়, পাহাড়ের কাছে থাকলে পাহাড়-নির্ভর করে জীবনযাপন করতে হয়, সমুদ্রের কাছ থাকলে সমুদ্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাঁর নেতৃত্বে স্থানীয় জনগণ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। এই শতাব্দীর শুরুর দিকে, যখন ইন্টারনেট চীনে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় নি, তখন তিনি ‘ডিজিটাল ফু চিয়ান’ নির্মাণের নকশা উত্থাপন করেছিলেন। যাতে সাধারণ লোকজন বাসায় বসে ই-কমার্স সেবা দিতে ও নিতে পারে। চ্য চিয়াং প্রদেশে কাজের প্রায় ৫ বছরে তিনি চ্য চিয়াং প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদ্ধতি রূপান্তর করেছেন। তিনি ‘সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন পানি হল সোনার পাহাড় ও রৌপ্যের পাহাড়ের’ চেতনা উত্থাপন করেছেন, তাঁর নেতৃত্বে চ্য চিয়াং প্রদেশের শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে শাংহাই শহর চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ‘নেতৃত্বদানকারী শহর’ হয়েছে। তিনি বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের সমস্যা সমাধান করেছেন। এর ফলে শাংহাইয়ের উন্নয়ন সম্পদ ও পরিবেশের বাধা দূর হয়েছে।

 

সংস্কারের নেতৃত্বাধীন ব্যক্তি সি চিন পিং পর্ব ১:

 

আবার বেইজিং থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ফিরে গিয়েছেন

 

১৯৮২ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে ২৯ বছর বয়সী সি চিন পিং রাজধানী বেইজিং থেকে ৩শ’ কিলোমিটার দূরের হ্য পেই প্রদেশের চেং তিং জেলায় গিয়ে সেখানের সিপিসি’র উপ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

চেং তিং জেলায় যাওয়ার আগে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সচিব ছিলেন। তিনি বেইজিংয়ে কাজ করতেন।

এটি হল তাঁর দ্বিতীয়বার তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা।  ১৯৬৯ সালে ১৫ বছর বয়সী সি চিন পিং স্বেচ্ছায় দরিদ্র এলাকা চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রাম-লিয়াং চিয়া হ্য-তে যাওয়ার আবেদন জানান। সেখানে ৭ বছর থাকার সময় তিনি স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন। কৃষকরা দেখতেন- সি কাঁধের ঝাঁকায় ১শ’ কেজি গম বহন করে ৫ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি পথ হেঁটেছেন। তারপরও তিনি ক্লান্ত হন নি। কৃষকরা সিকে ‘কঠিনতাকে ভয় না-পাওয়া ভালো যুবক’ বলে প্রশংসা করত।

১৯৭৫ সালে সি চিন পিং চীনের বিখ্যাত ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিন বছর পর অর্থাত্ ১৯৭৮ সালে চীনের সর্বোচ্চ নেতা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। অর্থনৈতিক নির্মাণকে কেন্দ্র করে চীনে সার্বিকভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালু হয়।

 

যুগের বিরাট পরিবর্তন অসংখ্য চীনা তরুণের ভাগ্যকে পরিবর্তন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের পর অনেক তরুণ মানুষ বড় শহরে চাকরি খুঁজতে যেতো। কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া বা ব্যবসা করত। সি চিন পিং ইতোমধ্যে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় সরকারে একটি ভালো চাকরি পেয়েছেন। কেন তিনি আবার তৃণমূল পর্যায়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?

সি চিন পিং বলেন: বেইজিংয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয়ে, নেতার কাছে, মর্যাদা আছে, দৃষ্টিভঙ্গি আরও চওড়া হতে পারে, অনেক তথ্য জানা যায়; তবে সমাজ, জনগণ ও সমৃদ্ধ সামাজিক অভিজ্ঞতার থেকে দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। শুধুমাত্র তৃণমূল পর্যায়ে যাওয়া এবং জনগণের কাছে যাওয়াই হলো- তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ।

 

সি চিন পিং-এর যাওয়া চেং তিং জেলায় সেই বছরের লোকসংখ্যা ছিল ৪.৫ লাখ। মাথাপিছু আয় ১৫০ ইউয়ানেরও কম।

গত শতাব্দীর ৮০ দশকের শুরুতে, অধিকাংশ চীনারা ন্যাপকিন পর্যন্ত দেখে নি! একটি বাইসাইকেল যোগাড় করা ছিল অনেক পরিবারের সারা জীবনের লক্ষ্য! তবে, সেই একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু আয় ১৪ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল এবং তাইওয়ান প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এত সমৃদ্ধ ছিল যে, তাদেরকে এশিয়ার ‘চারটি ড্রাগন’ বলা হত।

 

সি চিন পিংয়ের তখন চেং তিং জেলার সহকর্মী জেলার প্রধান ছেং পাও হুয়াই। তিনি বলেছিলেন, সি চিন পিং এমন একটি সময় চেং তিং জেলায় এসেছেন, যখন বিরাট ঐতিহাসিক সংস্কারের সময়।

সি চিন পিং-এর বহু বছরের ভালো বন্ধু হলেন তত্কালীন চেং তিং জেলার উপ-প্রধান ওয়াং ইউ হুই। তিনি বলেন, সি চিন পিংকে প্রথম যখন দেখেছিলেন- তাঁর গায়ে পুরানো সেনার পোশাক পরা ছিল। দেখতে সেনাবাহিনীর বাবুর্চির মত, একদম বোঝা যায় না যে তিনি একজন কর্মকর্তা।

‘দেখতে সাধারণ মানুষ’ সি চিন পিং, তখন শুধু কৃষিকাজ জানতেন। তিনি চেং তিংয়ের মানুষের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ান। তিনি সবার মত হাঁটু মুড়ে বসে খাবার খান ও সবার সঙ্গে আড্ডা দেন। তিনি সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সবার খোঁজ-খবরও নেন।

 

বেইজিংয়ের মানুষ গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে! স্থানীয় কৃষকরা বুঝতে পারত না, এই তরুণ কেন স্বেচ্ছায় শহরের আরাম আয়েশ ও ভালো জীবন ছেড়ে দরিদ্রতা কবলিত গ্রামে এসেছে! সবার প্রশ্নের জবাবে সি চিন পিং বলেন, জীবনের চাওয়া যদি শুধু আরাম হয়- এটি খুবই সাধারণ লক্ষ্য। তবে আমি কঠিনতার সমুদ্রে নিজের সবকিছু যাচাই করতে চাই।

 

২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর সি চিন পিং যুবকদের বলেছিলেন, আমাদের দেশ, আমাদের জাতি, দরিদ্র এবং দুর্বল থেকে ধাপে ধাপে বর্তমান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ অবস্থায় এসেছে। যা বংশ পরম্পরায় চীনাদের দৃঢ় সংগ্রামের ফলাফল। তিনি মনে করেন, তরুণ মানুষের উচিত কঠিনতাকে ভয় না-পাওয়া, কঠিনতাকে পরাজিত করা, কঠোর অবস্থায় তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে কাজ করা; যাতে মেধা ও সামর্থ্য বাড়ানো যায়।

সি চিন পিং ঠিক এভাবেই করেছেন।

 

স্থানীয় জনগণের জীবন উন্নয়নের জন্য তরুণ সি চিন পিং চেং তিং জেলায় গিয়ে ব্যাপকভাবে বাস্তবভিত্তিক সংস্কার করেছেন। জেলায় পণ্য অর্থনীতি, পর্যটন প্রকল্প, কৃষি বিজ্ঞান এবং শ্রেষ্ঠ মানবসম্পদ নিয়ে গেছেন। যা স্থানীয় মানুষদে আরও বড় অঙ্গনে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে।