চীনের চিত্রনাট্যকার চাং চি
2022-08-25 16:22:21

চীনের চিত্রনাট্যকার চাং চি টানা ১০ বছর ধরে চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করে আসছেন। তার তৈরি শিল্পকর্ম প্রথমে কেউ চিনতো না এবং বর্তমানে তা দর্শকদের জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

১০ বছরের মধ্যে চাং চি ৩৩তম গোল্ডেন রুস্টার পুরস্কারসহ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার জয় করেছে। গত বছরের মার্চ মাসে ‘চীনের পঞ্চম মধ্যবয়সী ও তরুণ শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ও শৈল্পিক কর্মী’ এই খেতাব ভূষিত হয়েছেন।

এই খেতাব প্রসঙ্গে চাং চি বলেন, আগে আমার যে কোনো শিল্পকর্মের প্রশংসা করার তুলনায় এবারের এই খেতাব আমার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অনেক উত্সাহ দিয়েছে।

 

১৯৯৪ সালে ১৮ বছর বয়সী চাং চি জন্মস্থান হু নান প্রদেশের সিয়াং সি শহর থেকে বিদায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে বেইজিংয়ে আসেন। কোনো কারণে তিনি লেখাপড়া সম্পন্ন না করে তাড়াহুড়া করে কাজ করতে বাধ্য হন। তিনি সাধারণ কর্মী হিসেবে সাংস্কৃতিক কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন এবং ফ্রিল্যান্সার থেকে লেখক হন। ২৮ বছর বয়সে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চিত্রনাট্যকার হয়ে ওঠেন।

 

তিনি বলেন, সেই সময় আমি লেখাপড়া করার সঙ্গে সঙ্গে পাণ্ডুলিপি লিখতাম। লেখার পর কোনো প্রতিক্রিয়াও ছিলো না। আমার অনেক শিল্পকর্ম প্রচারিত হয়নি, প্রচারিত হলেও আমার নাম থাকতো না। খুব কষ্টকর সময় ছিলো। তবে আমি মনে করি, সেই সময়ও ছিলো ব্যাপক প্রযুক্তি ও জ্ঞান জমা করার সময়।

২০১২ সালে আকস্মিক এক সুযোগে তিনি ‘American dreams in China’ নামে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের কাজে অংশ নেন। তখন থেকে তার রচনার চিন্তা-ধারা পরিবর্তন হয়ে যায়।

 

তিনি বলেন, ‘আমি এই প্রথমবারের মতো একজনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিল্পকর্ম তৈরি করছি। অনেক বাস্তবসম্মত সত্যিকার খুটিনাটি বিস্তারিত তথ্য ও ভাবানুভূতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। গল্পের আবেদন এবং মূল্য চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এবং যা যুগের উন্নয়ন প্রবণতার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। মুভিটি ইতিবাচক শক্তিতে ভরপুর এবং অবশেষে তা দর্শকদের সমাদরও পেয়েছে।’

 

চাং চি বলেন, এ মুভিটি রচনার কাজ থেকে আমি বুঝতে পারি যে, চীনের শক্তিশালী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিজের জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার প্রতি দেশীয় দর্শকেরা অধিক থেকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তারা মুভির কাহিনীতে নিজেদের ছায়া দেখতে পান; যা সময়ের প্রবণতা অনুসরণ করতে এবং আরও বেশি চীনা গল্প লিখতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

২০১৩ সালে ‘American dreams in China’ নামে মুভিটি মুক্তি পায়। সেই বছরে ডোমেস্টিক চলচ্চিত্রের বক্সঅফিসে আয়ের পরিমাণ চীনের চলচ্চিত্রের বক্সঅফিসের ৫০ শতাংশেরও বেশি ছিল। ২০২১ সালে এই  পরিমাণ ৮০ শতাংশে বেড়েছে।

 

চাং চি মনে করেন, দেশের বিশাল উন্নয়নের পরিবর্তন চলচ্চিত্র সৃষ্টিকারীদের বৈচিত্র্যময় উপাদান যুগিয়েছে। রচনা প্রক্রিয়ায় তিনি আস্তে আস্তে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও গড়ে তুলেছেন। তাঁর সব বৈশিষ্ট্য ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Leap’ নামে চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। এ চলচ্চিত্রে চীনের নারী ভলিবল দলের গল্প তুলে ধরা হয়। চাং চি এ চলচ্চিত্রের কারণে চীনের ৩৩তম গোল্ডেন রুস্টার পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার পুরস্কার জয় করেন।

 

তিনি বলেন, আমার অংশগ্রহণে এটি হলো সবচেয়ে স্মরণীয় একটি চলচ্চিত্র। চীনের নারী ভলিবল দলের গল্প খুব পরিচিত। কীভাবে তাদের গল্প বলা হয় এবং তাদের চেতনা ব্যাখ্যা করা যায়, তা ছিল অনেক কঠিন বিষয়। আমার চাপ বেশি ছিলো।

তবুও চাং চি অন্ধভাবে উদ্ভাবন এবং পরিবর্তনের অনুসন্ধান করেননি। তিনি একটি আন্তরিক সৃজনশীল অভ্যাস বজায় রেখেছেন। তিনি বলেন, আমার রচনার অভ্যাস হলো রচনার শুরুতে কিছুই করি না, বরং ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যিকার উপাদান সংগ্রহ করি।  ‘Leap’ নামে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার সময় আমি অনেক তথ্য পড়েছি এবং চীনা নারী ভলিবল দলের প্রশিক্ষণের স্টেডিয়ামে গিয়ে পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেছি এবং সাক্ষাত্কার নিয়েছি।

 

তিনি স্বীকার করেন, বাস্তবতা মানে সম্পূর্ণ অনুকরণ নয়, শৈল্পিক সৃষ্টিও প্রয়োজন। চরিত্র, সময়ের প্রেক্ষাপট- ইত্যাদির পূর্ণ উপলব্ধির ভিত্তিতে দ্বন্দ্ব ও পরিবর্তনের নাটকীয় উপাদান যুক্ত হয়। ‘Leap’ নামে চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি রচনার প্রক্রিয়ায় তিনি চরিত্রের স্বতন্ত্র ভাগ্য এবং দেশের ভাগ্যের মধ্যে সংযোগ সম্পূর্ণরূপে মূর্ত করেন। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় একটি দলের পরিবর্তন ফুটে উঠেছে, আসলেই চীনা মানুষ এবং যুগের ভাবমূর্তির পরিবর্তন দেশের উন্নয়ন ও শক্তিশালী হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরা হয়।

 

চাং চি’র কিছু শিল্পকর্মে তার নিজের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, Coffee or Tea? সিনেমায়। এই মুভিটি ২০২০ সালে দেখানো হয় এবং বক্সঅফিস আয় ৩০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। এতে তিনজন তরুণের বড় শহর থেকে প্রাচীন গ্রামে ফিরে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে অবশেষে সফলভাবে শিল্প সৃষ্টির গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়।

 

চাং চি বলেন, তিনিই এমন একটি সময়পর্বে ছিলেন যে, শহরে থাকতে চাইলেন না। ক্রমাগত পড়া এবং চিত্রনাট্য লেখার দক্ষতা শেখার মাধ্যমেই তার মধ্যে ‘কিছু আধ্যাত্মিক শক্তি’ তৈরি হয়েছিল, যা তাকে কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আসতে উত্সাহিত করে।

সৃষ্টির প্রক্রিয়ায়, চাং চিও জোর দেন তার কাজের আধ্যাত্মিক চেতনার দিকে। যা ‘ভূমির প্রতি গভীর অনুভূতি, আকাশের প্রতি আকুলতা, মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং জীবনের প্রতি আশা-আকাঙ্ক্ষা’-এর প্রয়োজনীয়তা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।

বর্তমান তরুণ নির্মাতাদের জন্য চাং চি ‘মনোযোগ দিয়ে লিখতে এবং সৎ মানুষ হতে তাদের উত্সাহিত করেন।

 

চাং চি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই জীবনের গভীরে যেতে হবে। কারণ, জীবন আমাদের ক্রমাগত অবাক করে দেয়। সৃষ্টি ও টেম্পারিং একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, আমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে এবং তাড়াহুড়ো করা উচিত্ নয়। শিল্পখাতে অবশ্যই সবসময় নম্রতা ধরে রাখতে হবে, আরও উচ্চতা অর্জন করতে হবে। আমাদেরকে শুধু সময়, দেশ ও জনগণের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ শিল্পকর্ম সৃষ্টি করার পাশাপাশি আরও ভাল মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। সংস্কৃতি খাতে শক্তিশালী দেশ গঠন করা এবং চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণে অবদান রাখতে হবে।’

ভবিষ্যতে নতুন যুগে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পথ সম্পর্কে চাং চি বলেন, জনগণকেন্দ্রিক সৃজনশীল অভিযোজন মেনে চলা প্রয়োজন। ‘মানুষের কাছাকাছি যাওয়ায় পর্যায়টি ক্রমাগত উন্নত করা দরকার।

চাং চি বলেন, ‘আমি এই যুগের স্রষ্টাদের গঠনে আমার কাজ চালিয়ে যাবো। তারা সাধারণ মানুষ হলেও, আমি তাদের সাহস, তাদের প্রজ্ঞা এবং তাদের চেতনার প্রশংসা করি।