আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৮৮
2022-08-25 18:20:45

১. ব্যবসার খুঁটি নাটি আগে জেনে তারপর বিনিয়োগ করতে হবে:  ফারহানা বিনতে লতিফ, নারী উদ্যোক্তা

২. উ সুয়ানের অন্য রাজ্য

৩. গান : শিল্পী জামইয়াং দোলমা

৪. দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছেন নারী ট্রাক চালকরা

৫.  ঐতিহ্যবাহী থুবু বুনছেন নারীরা

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।

`ব্যবসার খুঁটি নাটি আগে জেনে তারপর বিনিয়োগ করতে হবে’-  ফারহানা বিনতে লতিফ, নারী উদ্যোক্তা

বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তারা নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। বলতে গেলে আজকাল ঘরে ঘরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার দেখা মিলছে যারা ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি পরিবারেও বাড়তি আয় যোগ করছেন। এরা আত্মবিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে সমাজে নারীর সামগ্রিক উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। আজ আমাদের স্টুডিওতে আছেন এমনি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তিনি পোশাক এবং  লাইফ স্টাইল পণ্য বিক্রির মাধ্যমে নিজের কর্মস্ংস্থান করছেন। তিনি ফ্যাশন হাউজ পানযেহর প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা বিনতে লতিফ। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

সাক্ষাৎকার  

ফারহানা বিনতে লতিফ এমবিএ ডিগ্রিধারী। কিন্তু স্বামীর সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি ও সংসার দেখভালের কাজে তার কোন ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেননি। তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজস্ব উদ্যোগে কিছু একটা করবেন। আঁকার হাত ভালো ছিল, ফ্যাশনও বুঝতেন। ভাবলেন একটি বুটিক হাউজ করবেন।

   

                                         

এইভাবেই তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ফ্যাশন হাউজ পানযেহ। মীরপুর ডিওএইচএস মার্কেটে তার ফ্যাশন হাউজ। একটি দোকান দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তার তিনটি আউটলেট রয়েছে। পোশাক ও লাইফস্টাইল পণ্য বিক্রি করেন তিনি। নিজেই ডিজাইন করেন। নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

ফারহানা বিনতে লতিফ মনে করেন কেউ যদি নতুন কোন ব্যবসা শুরু করতে চায় তাহলে আগে সেই ব্যবসার খুঁটিনাটি জানতে হবে। নাহলে ঠকে যাবার আশংকা থাকে। কোন একটি আইটেমে আবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন দিকে চেষ্টা করতে হবে। ‘ধরুন কেউ পোশাক দিয়ে শুরু করলেন, কিন্তু সেটায় লাভ হলো না। তখন হয়তো ফুড, নার্সারি ইত্যাদি আইটেম দিয়ে চেষ্টা করতে হতে পারে।’ বড়কথা হলো ধৈর্য্য এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আগে ব্যবসার লাভ লোকসান হিসাব এবং এই ব্যবসার কাঁচামাল সম্পর্কে জানতে হবে, নিজেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। নইলে কিন্তু ব্যবসায় সফল হওয়া যাবে না। যেহেতু পুঁজি থাকে স্বল্প, তাই ভেবে চিন্তে এগুতে হবে।

ফারহানা বিনতে লতিফ তার স্বামীর কর্মসূত্রে চীন ভ্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি গ্রেট ওয়াল, ফরবিডেন সিটি, সামার প্যালেসসহ বিভিন্ন স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হন। বেইজিং শহর তার খুব ভালো লাগে। সবচেয়ে বেশি তার ভালো লাগে চীনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি।

তিনি বলেন, ‘চীনে নারীরা খুবই নিরাপদ। এ বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।’

তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল পণ্যের সুপার শপ প্রতিষ্ঠা করা। 

 

 

 

উ সুয়ানের অন্য রাজ্য

চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের একজন ব্যতিক্রমী নারী উ সুয়ান। প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে তথ্য সংগ্রহ থেকে ভালোবাসেন তিনি। ব্যতিক্রমী এই নারী সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন।

 

চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচোও শহরের বাসিন্দা উ সুয়ান। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পুরানো ঐতিহ্য এবং অন্যান্য সম্পদ সামগ্রী থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে যিনি পছন্দ করেন। তিনি বলেন, গোয়েন্দাদের মতো খুঁজে বেড়ানো ছিল তার নেশা । ৩০ বছর বয়সী এই নারী রহস্য সমাধান করতে খুব পছন্দ করেন। 

২০১৯ সালে, উ সুয়ান লোকসংস্কৃতির প্রতি উৎসাহিত হয়ে তিন জনকে সঙ্গে নিয়ে শেনলোওচি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। সখের বসে একটি দলও গঠন করেন তিনি। এরপর সেখানে প্রাচীন মানুষের জীবন যাপন নিয়ে বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম তৈরি করেন উ সুয়ান। 

ঐতিহাসিক গবেষণা,চীনা পোশাক সেলাই করা থেকে শুরু করে যুগোপযোগী আসবাবপত্র এবং নানা অনুষঙ্গ স্থান পায় তার এসব ভিডিওতে। নিখুঁতভাবে এসব ভিডিও তৈরি করতে তাকে প্রচুর শ্রম দিতে হয়েছে। 

দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন এই নারী। এর বিপরীতে কোনো অর্থলাভের চিন্তা না করে বরং দেশের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই সন্তুষ্টি উ সুয়ানের। 

গান: শিল্পী জামইয়াং দোলমা

 

চীনের তিব্বতি জাতির সংগীতের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে কণ্ঠে ধারণ করে খ্যাতি পেয়েছেন সংগীত শিল্পী জামইয়াং দোলমা। ১৯৮৪ সালে সিচুয়ান প্রদেশের গার্জে তিব্বতি স্বায়ত্বশাসিত এলাকায় ডেগা কাউন্টিতে জন্ম গ্রহণ করেন তিব্বতি কৃষক পরিবারের মেয়ে দোলমা। তিনি সংগীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে সিসিটিভিতে কালারফুল হাডা নামে একটি তিব্বতি সংগীত পরিবেশন করে   খ্যাতি পান। ২০১০ সালে টিবেটান নিউ ইয়ার্স গালাতে সংগীত পরিবেশন করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি।

এখন আমার শুনবো জামইয়াং দোলমার গান পাহাড় ও জল।

 

দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছেন নারী ট্রাকচালকরা

চীনের ট্রাক চালকের পেশায় এখন এগিয়ে আসছেন নারীরা এবং অর্জন করছেন সাফল্য। সমাজের দৃশ্যপটও বদলে দিচ্ছেন তারা। শুনবো এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন।

চাও লিফিং একজন হালকা পাতলা নারী। উচ্চতা ১.৬৩ মিটার। ট্রাক চালক হিসেবে তাকে যেন ঠিক মানায় না। কিন্তু দশ বছর ধরে এই নারী সাফল্যের সঙ্গে ট্রাক চালাচ্ছেন, পাড়ি দিয়েছেন ১.৫ মিলিয়ন  কিলোমিটার।

 

৩৩বছর বয়সী বিবাহিত এবং সন্তানের জননী চাও একজন ট্রাকচালক হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন।

বর্তমানে চীনে নারী ট্রাক চালকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এখন প্রায় ১৩ লাখ নারী ট্রাক চালকের পেশায় আছেন। সোশ্যাল সায়েন্স অ্যাকাডেমিক প্রেসে প্রকাশিত চীনের ট্রাকচালকদের হিসাব অনুসারে ২০২০ সালে চীনের ৩০ মিলিয়ন ট্রাকচালকদের ৪.২ শতাংশ নারী। ২০১৮ সালে ট্রাক চালকদের ২ শতাংশ ছিল নারী। এখনও তাদের সংখ্যা অনেক কম। তবে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এই রিপোর্টে দেখা গেছে নারী ট্রাকচালকদের গড় বয়স ৩৫ বছর।

চাও বলেন, যদিও নারী ট্রাক চালকরা সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের মধ্যে পুরনো আমলের চিন্তাভাবনাও রয়েছে। যেমন চাও যখন ট্রাক নিয়ে কোথাও যান, কেউ কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘ড্রাইভার কোথায়?’ তারমানে নারীকে চালকের আসনে দেখে তারা ঠিক ভরসা করতে পারে না।

তবে ধারণাগুলো বদলাচ্ছে। 

বেইজিং অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক মা তান বলেন, যদিও চালক হিসেবে নারী পুরুষকে সমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তবে সামাজিক ধ্যানধারণার কারণে নারীর কিছুটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ থাকে।

চায়না উইমেন’স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং ইঞ্জিন ম্যানুফেকচারার কুমিনস চায়না যৌথভাবে নারী ট্রাকচালকদের ক্ষমতায়িত করার জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো তিন বছরের মধ্যে ৩০০০ নারী ট্রাক চালককে নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া এবং কিভাবে পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে সেটা শিক্ষা দেয়া।

 

ঐতিহ্যবাহী থুবু বুনছেন নারীরা

প্রযুক্তির উন্নয়নে এখন সর্বত্রই চলছে যন্ত্রের ব্যবহার। কিন্তু ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য সাংহাই এর একদল নারী হাঁতে চালানো তাঁতে বুনছেন প্রাচীন নকশার কারুকার্যময় পোশাক। এর মাধ্যমে খ্যাতি ও অর্থ দুটোই অর্জন করেছেন তারা। চলুন শোনা যাক এই নারীদের গল্প।

সাংহাই এর এক নারী হ্য ইয়ংতি। তিনি এক ঐতিহ্যবাহী বুননশিল্পকে নতুনভাবে প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছেন। সাংহাই থেকে একটু দূরে ইয়াংসি নদীর মোহনায় রয়েছে ছোংমিং আইল্যান্ড। ছোংমিংয়ের বিখ্যাত কারুশিল্প হলো থুবু নামের এক ধরনের হাতে বোনা কাপড়। এই কাপড়ের রয়েছে ৬০০ বছরের ইতিহাস। একসময় এই দ্বীপে এক লাখ ত্রিশ হাজার হস্তচালিত তাঁতে এই বিশেষ নকশীদার কাপড় বোনা হতো। চায়না এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এই কাপড় বিক্রি হতো।

এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ২০০০ সাল থেকে এই কাপড়ের নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন হ্য ইয়ংতি। তিনি বাইসাইকেলে চড়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে গিয়ে এর বুনন পদ্ধতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি ৩৬ মেট্রিক টন ছোংমিং ফেব্রিক সংগ্রহ করেন যার মধ্যে ১২ হাজার ৮০০ নকশা রয়েছে। এটি ছিল মূলত নারীদেরই কারুশিল্প।

এই বিশেষ কারুশিল্প রক্ষায় ইয়ংতি কয়েকজন নারীকে নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। প্রাচীন শিল্পকে আধুনিক ছোঁয়া দিতে এই কাপড়ে তিনি শুধু পোশাকই নয়, পাশাপাশি, ব্যাগ, বিছানার চাদর, খেলনা ইত্যাদিও তৈরি করছেন।

সাংহাইয়ের আধুনিক নারীদের কাছে এই ছোংমিং ফেব্রিক বা থুবু কাপড়ে তৈরি পোশাককে ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত করেছেন

এই ভাবে ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখে এবং তাকে প্রসারিত করে কারুশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছেন হ্য ইয়ংতি।

 

আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

উ সুয়ানের অন্য রাজ্য, প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

দৃশ্যপট বদলে দিচ্ছেন নারী ট্রাকচালকরা,  ঐতিহ্যবাহী থুবু বুনছেন নারীরা,   প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া