অগাস্ট ২৪: বর্তমান বিশ্বে সাদাকে কালো বা কালোকে সাদা বলার ক্ষেত্রে এবং মিথ্যাচার ছড়ানোর কৌশলের দিক থেকে কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। সম্প্রতি তাইওয়ান সমস্যাকে অজুহাত বানিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের একশ্রেণীর রাজনীতিক সংকট তৈরি করে চীনকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল এবং এ নিয়ে তাঁরা কম মিথ্যাচার করেনি।
মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসির চীনের তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে মার্কিন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা একের পর এক অতি-প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন; তাঁদের অভিযোগ, চীন প্যালোসির সফরকে কেন্দ্র করে অতি-প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে! তাদের দাবি, বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাঁরা তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের উত্তেজনাময় পরিস্থিতির জন্য উল্টো চীনকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালান।
আরও আপত্তিকর বিষয় এই যে, কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিক প্যালোসির পরপরই তাইওয়ান সফর করেন। তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের পরিস্থিতির উত্তেজনা তাতে বরং বেড়েছে। বিতর্ক সৃষ্টি করা, ভুল স্বীকার না-করা, বারবার একই ভুল করা, এবং নিজেদের ভুলের দায় অন্যে ওপর চাপানো যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে পরিণত হয়েছে। তবে, মিথ্যাচার দিয়ে সত্যকে ঢাকা যায় না। প্যালোসির কথিত তাইওয়ান সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবাই জানেন। তাঁর উদ্দেশ্য যে ভালো ছিল না, তা খোদ যুক্তরাষ্ট্রও অস্বীকার করতে পারবে না।
তাইওয়ান প্রণালীর বর্তমান পরিস্থিতির দিকে ফিরে তাকালে, যারা পক্ষপাতদুষ্ট নন তাঁরা স্পষ্টই দেখতে পাবেন যে, এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক স্বার্থে প্যালোসি, মার্কিন সরকারের উস্কানিতে, তাইওয়ান সফর করেছেন, যা ‘এক চীননীতি’ ও ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র তিনটি যৌথ ইস্তাহার’-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা এবং তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতাও এতে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তিও এতে নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য, প্যালোসির সফরের আগে চীন বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। কিন্তু প্যালোসি তা আমলে নেননি। তাঁর না-হক সফর যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে তা চীন মার্কিন সরকারকে একাধিকবার বলেছে। কিন্তু মার্কিন সরকারও তেমনকিছু করেনি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সমাজের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞও প্যালোসির তাইওয়ান সফরের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং বলেন, এ আচরণের চেয়ে উস্কানিমূলক আচরণ তাঁর কল্পনার বাইরে। পরিস্থিতি বুঝতে না-পারলে এ অঞ্চলের, এমনকি বিশ্বের নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও সুশৃঙ্খলা ভয়াবহ দুর্যোগে পড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এ আচরণ করেছে, নিজের সৃষ্ট সংকটের জন্য নিজেকেই মূল্য দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে প্রতিটি দেশ নিজের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা এবং বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের অধিকার রাখে। মার্কিন উস্কানিতে চীনের অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। চীন প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ধারাবাহিক পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যার লক্ষ্য ছিল অপরাধীদের সতর্ক করা এবং তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি দেশের কেন্দ্রীয় স্বার্থ রক্ষা করা। চীনের আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও দেশীয় আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
১৭০টি দেশ ও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা “এক চীননীতি”-র প্রতি, চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি আলফ্রেড কিসিঞ্জার এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, প্যালোসির তাইওয়ান সফর মুর্খতাপূর্ণ। এটি বৈরিতার মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টার একটি উদাহরণ। চীনে কিউবার রাষ্ট্রদূত কার্লোস মিগুয়েল পেরেইরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের ভুলের দায় অন্যদের ওপর চাপাতে অভ্যস্ত। তাতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিকদের অভিযোগ অযৌক্তিক।
প্যালোসির সফরের পর মার্কিন সিনেটর এড মার্কি ও ইন্ডিয়ানা রাজ্যের গভর্নর এরিক জে হলকম পর্যায়ক্রমে তাইওয়ান সফর করেন। এতে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র ভুল সংশোধন করে না, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে আরও উস্কানি দিয়ে যায়।
‘এক চীননীতি’ চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থের সাথে সংযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্যালোসির সফরের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক চীননীতি’ এবং ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র তিনটি যৌথ ইস্তাহার’ মেনে চলতে হবে; ভুল করা বন্ধ করতে হবে। নইলে চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। (রুবি/আলিম/শিশির)