অগাষ্ট ২২: বন্ধুরা, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে অসহনীয় গরম পড়েছে। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে চরম উত্তাপ দেখা দিয়েছে। গত জুন মাস থেকে বিশ্বে চরম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশে প্রচণ্ড গরম পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। কোনো কোনো এলাকায়, এমনকি তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে: এ বছর কেন এতো গরম পড়েছে?
গত শনিবার দুপুর একটা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত চীনে উচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এ সময় হুপেই প্রদেশের চুশানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে ছুছিংয়ের শাফিংপা ও ফেংতু’তে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করার হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত শুক্রবার চীনের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অফিস চলতি বছরের প্রথম উচ্চ তাপমাত্রার লাল সতর্কতা জারি করে। গত জুন মাস থেকে দক্ষিণ চীনে উচ্চ তাপমাত্রার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ১৯৬১ সালের পর এতো দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করেনি।
এদিকে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। গত জুলাই থেকে বাংলাদেশে বন্যাও দেখা দেয়। তবে বন্যার পাশাপাশি, কোনো কোনো এলাকায় আবার গুরুতর খরা দেখা দেয়। এটি বিশ্বজুড়ে উষ্ণায়নের প্রভাব বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন। বিজ্ঞানীরা বলেন, দক্ষিণ দিক থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ সেন্টিমিটার বাড়লে বাংলাদেশের একটি বড় এলাকা সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
তবে. প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় চীন ও বাংলাদেশের তাপমাত্রা কম। গত মে মাস থেকে ভারতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। নয়াদিল্লীর বাসিন্দারা বলছেন, তারা যেন আগুনের মধ্যে বাস করছেন। রাতে অবশ্য সেখানে তাপমাত্রা খানিকটা নেমে আসে। তবে, তা-ও ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম নয়। ভারতে চলতি বছরের তাপমাত্রা ১২২ বছরের নতুন রেকর্ড ভেঙেছে। এখন নয়াদিল্লীতে সড়কে বিক্রেতা দেখা যায় না, মাটিতে পোকা দেখা যায় না, এমনকি আকাশে পাখিও দেখা যায় না।
অন্যদিকে, ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা বিগত ২ হাজার বছরে নজিরবিহীন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস একে 'মানবজাতির জন্য রেড অ্যালার্ট' বলে আখ্যায়িত করেছেন। বৈশ্বিক উষ্ণতাকে উত্তর গোলার্ধে ঘন ঘন উচ্চ তাপমাত্রা এবং তাপপ্রবাহের ঘটনার কারণ বলেও বিজ্ঞানীরা আখ্যায়িত করছেন।
উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি খরাও দেখা যাচ্ছে। খরা দেখা দিলে মানুষ ও প্রাণিকূলের পানীয় জলের সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি, খরার ফলে সেচকাজে সমস্যা হয়। এতে ফলন কমে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে: চীন কিভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করবে বা করছে?
খরা প্রতিরোধের জন্য চীনের জলসম্পদ মন্ত্রণালয় সময়মতো খরা প্রতিরক্ষা চতুর্থ স্তরের জরুরি প্রতিক্রিয়াব্যবস্থা চালু করেছে। এ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ও জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বন্যা ও খরা প্রতিরোধের জন্য ১.৩৫ বিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে খরা প্রতিরোধের জন্য বরাদ্দ ৩০ কোটি ইউয়ান। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, ১৬ থেকে ২১ অগাষ্ট পর্যন্ত ইয়াংসি নদীর উপরের দিকের জলাধারগুলো মোট ১.৪৮ বিলিয়ন ঘনমিটার জল সঞ্চয় করেছে, যাতে মাঝামাঝি ও নিম্ন প্রান্তে জলের সমস্যা সমাধান করা যায়। এ ছাড়াও, কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বৃক্ষরোপণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫টি কর্ম-গ্রুপ এবং ২২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ গ্রুপকে শরতের শস্যের প্রধান উত্পাদনকারী প্রদেশ এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও তাপে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত প্রধান প্রদেশগুলোয় পাঠানো হয়েছে। তাঁরা দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ফলন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় দিক্-নির্দেশনা দিয়েছেন।
বন্ধুরা, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। পৃথিবী হলো আমাদের অভিন্ন বাসস্থান। মানবজাতিকে উন্নয়নের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাও মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায় জলবায়ু সমস্যা শেষ পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক সমস্যা ও পরিবেশগত সমস্যায় পরিণত হবে এবং এর চূড়ান্ত নেতিবাচক ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)