কৃষিকাজ কঠিন, তবে আনন্দের। হুনান প্রদেশের লিউইয়াংয়ের এক গ্রামের বাসিন্দা খং ফু চং সাংবাদিককে এ কথা বলেন।
খং ফু চংয়ের একটি পারিবারিক খামার আছে। তাঁর খামারে ধান চাষের পাশাপাশি মাছ ও কচ্ছপ চাষ করা হয়। তিনি বলেন, তাঁর জমি থেকে উত্পন্ন চাল বাজারে প্রতি কেজি ৩০ ইউয়ান করে বিক্রি হয়। তাঁর জমির চালের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে মান উঁচু। তাই এ চাল জনপ্রিয়।
চং বলেন, গত বছর তাঁর জমিতে ৫০ হাজার কেজি ফসল ফলেছে। ধান, মাছ ও কচ্ছপ বিক্রি করে তার মোট আয় হয়েছে ২০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি। তাঁর পরিবারের আয় আগের আয়ের তিন গুণ হয়েছে।
খং ফু চং হলেন এমন লক্ষ লক্ষ চীনা কৃষকের মধ্যে একজন। চীন সরকার কৃষিকাজ ও গ্রামের পুনরুজ্জীবনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে চীনের গ্রাম পুনরুজ্জীন পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
চীনে একটি প্রাচীন প্রবাদ হচ্ছে: কৃষি হলো সবকিছুর মূল। চীনা অর্থনীতিতে কৃষির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৃষি-উন্নয়ন হলো দেশ-প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, সব সময় কৃষিশিল্প, কৃষক ও গ্রামের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। চীনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি, এর কৃষি খাতের উন্নয়নও জরুরি। চীন সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি গ্রামকে অবশ্যই সুন্দর করতে হবে। চীন ধনী হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদেরকেও ধনী করতে হবে। ২০২০ সালে চীন সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার কৃষক দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এটি হলো চীনের মহা সাফল্য এবং গ্রাম পুনরুজ্জীবনের চাবিকাঠি ধাপ। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কৃষকদের নিয়ে অভিন্ন সমৃদ্ধি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
খাদ্য-নিরাপত্তা হলো গ্রাম পুনরুজ্জীবনের পূর্বশর্ত। জনগণের খাবারের সমস্যা মোকাবিলা বরাবরই হলো দেশ-প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সার্বিকভাবে গ্রাম পুনরুজ্জীবন ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়ায় খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করা যেকোনো কাজের ভিত্তি।
২০২০ সালে চীনে শস্যের বাম্পার ফলন হয়। এ নিয়ে টানা ১৭ বছর দেশটিতে শস্যের বাম্পার ফলন হলো। ২০২১ সালে কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়, চীনে শরতকালীন শস্যের ফলনও ভালো হয়েছে।
এদিকে চীনের সিনচিয়াংয়ে তুলা খাতে যন্ত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গ্রামের পুনরুজ্জীবনে কৃষি-শিল্পের আধুনিকায়ন প্রয়োজনীয়। কৃষি-শিল্পের আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত করতে, আধুনিক গ্রামীণ শিল্পব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; আধুনিক কৃষি-শিল্প উত্পাদন-ব্যবস্থা ও আধুনিক কৃষি-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এত দক্ষ উত্পাদন, পণ্য নিরাপত্তা, সম্পদ সঞ্চয়, সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের বসন্তকালীন চাষবাসকালে দেশব্যাপী ৩০ হাজারেরও বেশি কৃষি-ড্রোন ব্যবহৃত হয়। পেইতৌ উপগ্রহ ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বর্তমানে চীনের তিনটি প্রধান শস্য হচ্ছে: গম, চাল, ও ভুট্টা। তিনটির চাষের ক্ষেত্রেই যন্ত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হচ্ছে। বস্তুত চীনের কৃষি-শিল্পের আধুনিকায়ন স্থিতিশীলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে ১ কোটি ১ লাখ গ্রামবাসী শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ও ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। এতে গ্রামগুলোয় এক কোটিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। চীনা গ্রামবাসীদের বার্ষিক মাথাপিছু আয়ও বেড়ে হয় ১৭ হাজার ১৩১ ইউয়ান আরএমবি, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৬.৯ শতাংশ বেশি। (ছাই/আলিম)