বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি
2022-08-20 18:41:38

কয়েক বছর করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ার প্রেক্ষাপটে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা করেছেন অনেকেই। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে- বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির দুশ্চিন্তা নেই।

 

গত বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত জুলাই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তবে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাত মিলে দক্ষিণ এশিয়ায় গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৫ শতাংশ হতে পারে। মূলত খাদ্য ঘাটতিই এই সমস্যার প্রধান কারণ বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮০ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৬ শতাংশ ও বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সরকার খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। দেশটি চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। এ ছাড়া কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছে, সারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের রপ্তানিকারকদের নগদ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ অবস্থায় চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের এ অর্থ শহরের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভবিষ্যৎ ধাক্কা মোকাবিলায় সহায়তা দেওয়া হবে।

এদিকে দেশের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে- বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা কাজে আসছে না। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কার্যক্রমেও সুফল আসছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে দেখা যায়, দেশে খানাপিছু গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। যার বেশির ভাগই চাল। দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চালের মাথাপিছু দৈনিক ভোগ ৪৭০ গ্রাম, যেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৩৬৬ গ্রাম। এই অবস্থায় গত বুধবার দেশের ৬টি প্রতিষ্ঠানকে আরও ৩২ হাজার টন চাল আমদানির জন্য অনুমতি দিতে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে রয়েছে নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল ২০ হাজার টন এবং আতপ চাল ১২ হাজার টন।

সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের একটি হলো টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৪৫০টি পয়েন্টে এখন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরসহ ঢাকা বিভাগে ১০১টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা সয়াবিন তেল দুই লিটার, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি কিনতে পারেন। লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত সবাই পণ্য পান না।

এদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন- বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ অনেকটা প্রভাব ফেলেছে দেশের খাদ্যপণ্যের ওপর। সামনের দিকে কিছুটা সংকট রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের নানা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ মূলত আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভর করে। যা এক ধরনের ঝুঁকি। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বহুমুখী পরিবর্তন আমদানির ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় দেশের কোটি কোটি মানুষের অন্যতম প্রধান মৌলিক চাহিদা- খাদ্যের জন্য আমদানি নয় বরং দেশে কৃষিজ উৎপাদন জোরদার করার বিষয়ে মনযোগী হতে হবে। তাহলেই বর্তমান পরিস্থিতি ও আসন্ন সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।