দেহঘড়ি পর্ব-৮৩
2022-08-19 19:34:34

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’।

# ঐতিহ্যবাহী_চিকিৎসাধারা

ত্বকের চিকিৎসায় টিসিএম

যখন শরীরের শক্তি ভারসাম্যপূর্ণ থাকে, তখন শরীরে কোনও দাগ পড়ে না এবং ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকে। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থায় এমনটিই মনে করা হয়। এ চিকিৎসাব্যবস্থার দর্শন হলো স্বাস্থ্যের ভালো-মন্দ ঠিক হয় ভিতর থেকে এবং শরীর অভ্যরের স্বাস্থ্য বাইরেও প্রতিফলিত হয়।

ত্বকের রং ও ভারসাম্যহীনতা

ঐতিহ্যবাহী চীনা ওধুষ বা চিকিৎসাব্যবস্থায় বিশ্বাস করা হয়, ত্বক হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও প্লীহার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। প্লীহা হলো রক্ত ও ‘ছি’ বা শক্তির উৎস। পুরো শরীরে রক্ত পাম্প করে হৃৎপিণ্ড আর ত্বকে রক্ত ও তরল সঞ্চালন করে ফুসফুস। যখন এই অঙ্গগুলো ভালোভাবে কাজ করে, তখন ত্বকের রঙ উজ্জ্বল থাকে। এসব অঙ্গে কর্মহীনতা দেখা দিলে ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ, একজিমা ও সোরিয়াসিস দেখা দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, যখন ফুসফুস ভারসাম্যহীন হয়, তখন ত্বক চুলকায় ও খসখসে হয়ে যায়। মানসিক চাপে থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রের ওপর এবং কপাল বা নাকে ব্রণ বাড়ে। প্লীহায় ভারসাম্যহীনতার দেখা দিলে শরীরে অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও তাপ জমা হতে পারে, যার ফলে সিবাম উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং পিম্পল ও একজিমা দেখা দেয়। প্লীহা সুস্থ থাকলে সেটা শরীর থেকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা দূর করে।

এখন আমরা দেখবো টিসিএম’এ ত্বকের কোন কোন অবস্থার জন্য কোন কোন বিষয়কে দায়ী মনে করা হয়:

ফ্যাকাশে চেহারা: কারো চেহারায় ফ্যাকাশে বা ক্লান্তিভাব থাকলে মনে করা হয় তার রক্ত চলাচলে সমস্যা রয়েছে। এমন ব্যক্তি প্রায়ই আলস্য বোধ করতে পারেন।

অস্বাস্থ্যকর হলুদ ত্বক: ত্বক অস্বাস্থ্যকর হলুদ দেখালে ধরে নেওয়া হয় ব্যক্তির প্লীহার কার্যক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকে।

রক্তবর্ণ ত্বক: ত্বক অতিরিক্ত রক্তিমভাব দেখালে মনে করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তাপ বেশি।

ত্বকে কালো দাগ: কারোর ত্বকে কালো দাগ থাকলে ধরে বোঝা যায় তার কিডনির কার্যক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে এবং রক্ত চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য টিসিএম

অনেক টিসিএম ভেষজ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন অঙ্গের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে এবং ত্বকের সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় সহায়তা করে। আজ আমরা আলোচনা করবো সেরা সৌন্দর্য-বর্ধক টিসিএম ভেষজগুলো নিয়ে:

জিনসেং

সবচেয়ে জনপ্রিয় টিসিএম ভেষজ জিনসেংয়ের অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে এবং আধুনিক স্কিনকেয়ার পণ্যগুলোতেও এই ভেষজটি ব্যবহার করা হয়। জিনসেং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে, অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে বাঁচায় এবং কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। এ কারণে এ ভেষজ বার্ধক্যজনিত লক্ষণ কমাতে ব্যবহৃত হয়। জিনসেং দিয়ে পানীয় বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে বা ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

চাইনিজ উলফবেরি বা গোজি বেরি

চাইনিজ উলফবেরি টিসিএম ভেষজগুলোর মধ্যে অন্যতম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ছোট বেরি লিভার ও কিডনিকে পুষ্ট করে, সেইসাথে শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। চাইনিজ উলফবেরি সূর্যের ক্ষতি প্রতিরোধে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। কারণ এতে রয়েছে জিঙ্ক অক্সাইড, যা সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মিকে আটকাতে সানস্ক্রিনে ব্যবহার করা হয়। এগুলো কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদনও বাড়ায়, যার ফলে ত্বকের রঙ উন্নত হয়।

গ্রিন টি বা সবুজ চা

ভেষজ গ্রিন টি হাজার হাজার বছর ধরে টিসিএম-এ ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ভেষজগুলির একটি। এতে প্রচুর পরিমাণে বায়োফ্ল্যাভোনয়েড এবং ক্যাটেচিন থাকে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং অসমতা দূর করে।

জিঙ্কগো বিলোবা

জিঙ্কগো ত্বকের জন্য খুব উপকারী। কারণ এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং অকাল বার্ধক্য থেকে ত্বককে বাচাঁয়। এছাড়া জিঙ্কগো বিলোবাতে রয়েছে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী নানা বৈশিষ্ট্য।

লিকোরিস রুট

প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসা এবং ত্বকের যত্নে টিসিএম-এ লিকোরিস ব্যবহৃত হয়। ত্বকের প্রদাহ কমানো এবং দাগ দূর করার ক্ষমতার জন্যও এই ভেষজটি মূল্যবান। লিকোরিস প্লীহা ও পাকস্থলীর কার্যকারিতাও উন্নত করে।

চাইনিজ অ্যাঞ্জেলিকা রুট

নারীদের নানা সমস্যার চিকিৎসায় বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে চাইনিজ অ্যাঞ্জেলিকা রুট, যেটা টিসিএম ব্যবস্থায় ‘নারী জিনসেং’ নামেও পরিচিত। এ ভেষজের প্রদাহ-বিরোধী ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি একজিমার চিকিৎসায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। চাইনিজ অ্যাঞ্জেলিকা রুট মেলানিন উৎপাদনে হস্তক্ষেপ করে ত্বক উজ্জ্বল করে। - রহমান

 

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি   ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে। বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এটি শুধু নারীর রোগ নয়; পুরুষরাও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি'র হিসেব বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।েআর মারা যান ৬ হাজার ৭৮৩ জন। বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে রয়েছে। স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার। চিকিৎসকদের মতে, যেকোন নারী বা পুরুষ  স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। স্তন ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায় তাহলে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব। এ রোগ নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন অঙ্কোপ্লাস্টিক অ্যান্ড রিকন্সট্রাকটিভ ব্রেস্ট সার্জন ডাক্তার এসকে ফরিদ আহমেদ। তিনি কর্মরত ইংল্যান্ডের বার্কিংহামশায়ার হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এনএইচএস ট্রাস্টে। পাশাপাশি এখন বাংলাদেশেও রোগী দেখছেন তিনি; বসছেন ঢাকার ধানমন্ডিতে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে।

 

# ঐতিহ্যবাহী_চিকিৎসাধারা

ফুসফুস কেবল বয়স্কদের রোগ নয়

ফুসফুস মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। তবে এ ফুসফুসেতে বাসা বাঁধতে পারে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগব্যাধি, যা জীবন পর্যন্ত কেড়ে নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ফুসফুসের ক্যান্সার মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। যেসব ক্যান্সারে মানুষ বর্তমানে আক্রান্ত হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ফুসফুসের ক্যান্সার। তবে এই ক্যান্সার নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা। আসুন জেনে নেই ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে মানুষের সাধারণ ভুলগুলো সম্পর্কে:

ফুসফুসের ক্যান্সার কি কেবল ধূমপায়ীদের হয়?

মানুষের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে যে, কেবল ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়! এটা একেবারে ভুল। হ্যাঁ ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি বড় কারণ ধূমপান। এবং বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তদের বেশিরভাগেই এক সময় ধূমপায়ী ছিল। তবে ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের একমাত্র কারণ নয়। জরিপের ফল বলছে, ফুসফুসের ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত তাদের ১০ শতাংশ এবং নারী রোগীদের ২০ শতাংশ জীবনে কখনও ধূমপান করেনি।

ফুসফুসের ক্যান্সারের চেয়ে কি স্তন ক্যান্সার ভয়াবহ?

অনেকের ধারণা ফুসফুসের ক্যান্সারের চেয়ে স্তন ক্যান্সারের পরিস্থিতি বেশি ভয়াবহ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের চেয়ে স্তন ক্যান্সারে বেশি নারী মারা যায় প্রতিবছর। তবে জরিপের তথ্য-উপাত্ত বলছে, ফুসফুসের ক্যান্সারের যত মানুষ আক্রান্ত হয়, তার অর্ধেকই নারী। এবং যে কোনও ক্যান্সারের চেয়ে ফুসফুসের ক্যান্সারে বেশি নারী মারা যায়। ২০০৫ সালের এক উপাত্তে দেখা যায়, ওই বছর ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায় ৬৯ হাজার ৭৯ জন নারী, যেখানে স্তন ক্যান্সারে মারা যায় ৪১ হাজার ১১৬ জন।

ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কি কিছুই করণীয় নেই!

কেউ কেউ মনে করেন, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তির কোনও হাত নেই। এটা একেবারে ভুল। কেবল ধূমপান ত্যাগ করলেই ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে। অন্যান্য ফ্যাক্টরও এ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমা বা বাড়ার জন্য দায়ী। কোনও কোনও পেশার কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের মধ্যে ১৩ থেকে ২৯ শতাংশ আক্রান্ত হয় পেশার কারণে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর খাবারও নিয়মিত ব্যায়াম এ রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

ফুসফুসের ক্যান্সার কি কেবল বয়স্কদের রোগ!

বেশিরভাগ মানুষই মনে করে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় কেবল বয়স্ক মানুষ। বাস্তবতা হলো অল্পবয়স্ক এমনকি শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ব্রোঙ্কিলোয়ালভালার ক্যান্সার নামের এক ধরনের ফুসফুসের ক্যান্সারে বর্তমানে বেশি হারে আক্রান্ত হচ্ছে কেবল কম বয়স্ক অধূমপায়ী নারীরা। - অভি/রহমান

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।