অগাষ্ট ১৯: গতকাল (বৃহস্পতিবার) ‘চীন-ইউরোপ রেলপথ উন্নয়ন প্রতিবেদন, ২০২১’ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে চীন-ইউরোপ রেলপথ উন্নয়ন-কার্যক্রমের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। গত জুলাই পর্যন্ত চীন-ইউরোপ রেলপথে ট্রেন চলাচল করেছে ৫৭ হাজারের বেশি। রেলপথটি আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ সেতুতে পরিণত হয়েছে।
চীন-ইউরোপ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য অব্যাহতভাবে বাড়ার প্রেক্ষাপটে চীন-ইউরোপ রেলপথও চালু হয়। রেলপথটি হলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের বৈদেশিক উন্মুক্ত বিভাগের পরিচালক স্যু চিয়ান ফিং প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,
“গত জুলাই পর্যন্ত চীন-ইউরোপ রেলপথে ৫৭ হাজারেরও বেশি ট্রেন চলাচল করেছে। এসময় ৫.৩ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কন্টেইনারপূর্ণ পণ্য পরিবহন করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ভারী কন্টেইনার ৯৮.৩ শতাংশ। এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুরুর দিকে, এই রুটে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারসহ আইটি পণ্য সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে পোশাক, জুতা, গাড়ি, খাদ্যশস্য, ওয়াইন, কফি বিন ও কাঠসহ ৫৩ জাতের ৫০ হাজার ধরণের পণ্য এই রুটে আমদানি-রফতানি হচ্ছে। এটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণ করছে।”
গত জুলাই পর্যন্ত চীন-ইউরোপ রেলপথে ৮২টি পরিবহনলাইন চালু হয়েছে। এতে ইউরোপের ২৪টি দেশের ১৯৬টি শহর অন্তর্ভুক্ত হয়। এই পরিবহন পরিষেবা সমগ্র ইউরোপজুড়ে এবং ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে একটি আন্তর্জাতিক পরিবহন নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে।
চীন-ইউরোপ রেলপথ উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। চীন-ইউরোপ রেলপথের কারণে চীনের হ্যেনান প্রদেশের চেংচৌ ও ছংছিং শহরের বার্ষিক জিডিপি গড়ে বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সিনচিয়াং চীন-ইউরোপ রেলপথের মাধ্যমে চীনের প্রতিবেশীদেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করেছে। সিনচিয়াং এ রেলপথের কেন্দ্রীয় অঞ্চল হিসেবে উচ্চ মানের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করেছে। চীন-ইউরোপ রেলপথ উন্নয়নের মাধ্যমে পোল্যান্ডের লডজ ও জার্মানির ডুইসবার্গসহ ইউরোপীয় শহরগুলো আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন হাবে উন্নীত হয়েছে। স্থায়ী বৈশিষ্ট্যময় পণ্য এই রেলপথে চীনে পাঠানো হয়। চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেডের সিআন ব্যুরোর সিআন পশ্চিম স্টেশনের আন্তর্জাতিক বন্দরের প্রধান পাই খুয়ান ফেং বলেন,
“গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চীন-ইউরোপ রেলপথে পাঠানো পণ্যের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঠানো হয় ১০টি ট্রেনভর্তি পণ্য। শেনসি প্রদেশের মতো চীনের অনেক প্রদেশ রেলপথটিকে বাণিজ্যিক লাইন হিসেবে ব্যবহার করছে।”
এ ছাড়াও, চীন-ইউরোপ রেলপথ শিল্পচেইন ও সরবরাহ-চেইনের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে। কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর, আকাশ ও নৌপথে পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। তখন চীন-ইউরোপ রেলপথ রফতানি ও আমদানির চাহিদা পূরণ করেছে। স্যু চিয়ান ফিং বলেন,
“রেলপথটি দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শিল্প-চেইন ও সরবরাহ-চেইনের স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয়। ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেলপথে ১১৫০টি কাস্টমাইজড ট্রেন পাঠানো হয়। এটি মহামারীতে আন্তর্জাতিক শিল্প-চেইন ও সরবরাহ-চেইনের ক্ষতি অনেক কমিয়েছে।”
বর্তমান চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো চীন-ইউরোপ রেলপথের মাধ্যমে কাজাখস্তান, আজারবাইজান, জর্জিয়া ও তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রেলপথ খাতে সহযোগিতা জোরদার করেছে। রেলপথ ও সড়কপথ এবং রেলপথ ও নৌপথ—একাধিক পদ্ধতিতে পরিবহনব্যবস্থা উন্নত হয়েছে, যাতে পরিবহনকাজে নির্বিঘ্নে চলতে পারে। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)