অস্থিতিশীল নিত্যপন্যের বাজার
2022-08-18 20:02:19

আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের অস্থিতিশীল বাজারে বিবাদে জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। মূলত পণ্যের দাম নিয়ে অসন্তোষ থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে এমন পরিস্থিতি।

রাজধানীর কারওয়ানবাজার , হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পণ্যের দাম চড়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে চালের দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা, আর চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত।

চালের দাম বাড়ার পর এবার একলাফে কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়েছে আটার দাম। কারওয়ান বাজারে নতুন দামের খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে  কেজিতে ৫০ টাকা দরে। এর আগে কেজিপ্রতি খোলা আটার দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা।

এদিকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়ে খুচরা পর্যায়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোটামুটি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তেলের দাম বৃদ্ধির আগেও সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল।

ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা। ৪০ টাকা হালির মুরগির ডিম (লাল) ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

দুই সপ্তাহ আগে খুচরো দোকানে লাল ডিমের ডজন যেখানে ১১৫ থেকে ১২০ টাকার বিক্রি হয়েছে, সেই ডিমের ডজন আজ ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা।

এই মূল্যবৃদ্ধি সেসব সীমিত আয়ের মানুষের ওপর নতুন আঘাত, যাঁরা ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে নাকাল।

কারওয়ান বাজারে পান্থপথ থেকে বাজার করতে আশা গার্মেন্টসকর্মী আলেয়া বেগম জানায়, “ মহিলাদের বেতন ৭হাজার  থেকে ৮ হাজারের উপরে উঠে না। তাহলে এরা ক্যামনে সংসার চালায়। বাসা ভাড়া দিয়া, ছেলে পেলের পড়াশুনা দিয়া হয় না”।

একই সুর তসলিমা আক্তারের কন্ঠে। তিনি বলেন,” আগে ভাঙ্গা ডিম কিনতাম ২৫ টাকা হালি এখন কিন্তেছি ৪০ টাকা করে”।

আরেক ক্রেতা নাসের মিয়া জানান, “আমাদের বেতন বাড়তেছে  না,কিন্তু খাইতে হলে কিনতে অইতাছে”।

ফার্মগেটের বাসিন্দা রিকশাচালক আসলাম জানায়, “এখন যে ব্রয়লার মুরগির দাম তাতে তো আমাগো মতন সাধারণ মানুষের কিনে খাওয়ার সুযোগ নাই। আগে যেখানে ৫ কেজি কিনতাম , এখন সেখানে ২ কেজি করে কিনি।”

এর আগে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছিল। এবার ব্যবসায়ীরা সামনে আনছেন ট্রাকভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিকে। তাঁরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর প্রভাব কাঁচাবাজারে পড়েছে।

হাতিরপুল বাজারের মুরগি বিক্রেতা আলাউদ্দিন আলী চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, জ্বালানির দাম বাড়ার আগেরদিনও ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই সপ্তাহে বরাবর ২০০ টাকা। তেলের দাম বাড়ায় কেয়ারিং খরচটাও বেশি।”

মুরগির দাম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রতি ডিমে বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা। খুচরা দোকানে বিক্রি করা হয় ১৫০ টাকা বা ১৪৫ টাকা।

চাল বিক্রেতা নায়েব জানান, “বর্তমান মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। আর নাজির শাইল বিক্রি হচ্ছে সত্তর থেকে নব্বই টাকায়।”

কারওয়ানবাজারের আরেক বিক্রেতা শামসুদ্দিন জানায়, “তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে যেগুলো ইমপোর্ট করে আনা হতো সেগুলোর দাম অনেক বাইড়া গেছে। ৩০০ টাকা যেটার হিসাব ছিল সেটা দাঁড়ায় গেছে ৬০০ টাকায়। ইমপোর্টের মাল মোটামুটি সব কিছুর দাম কমতেছে”।

সম্পাদনা - সাজিদ রাজু