চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুয়াংসি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সর্বপশ্চিমের পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত সিলিন জেলা জাতীয় পর্যায়ের দরিদ্র জেলাগুলোর অন্যতম ছিল। ২০১৭ সালে জেলাটির সিফিং থানার বাছিয়াও গ্রামের বাসিন্দা লি ওয়েন পিন কাঁধের ব্যথায় শয্যাশায়ী ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘকালীন ছোটখাটো অসুস্থতা বহন করতে ও বড় অসুস্থতা বিলম্বিত করতে অভ্যস্ত ছিলেন।
লি ওয়েন পিন: কেউ কেউ বলেছিলেন, আমার রোগের চিকিত্সা খুবই কঠিন। আর আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না। আমার অবস্থা ছিল মরিয়া।
ঘরে ঘরে জরিপ পরিচালনাকারী দারিদ্র্যবিমোচন ক্যাডার লি ওয়েন পিনের অবস্থা নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করেন। পরে তিনি তাঁর তথ্য জাতীয় দারিদ্র্যবিমোচন ও উন্নয়ন তথ্যব্যবস্থায় প্রবেশ করিয়ে, ২ হাজার কিলোমিটার দূরে বেইজিং তথ্য ডাটাবেসে পাঠিয়ে দেন। এরপর ডেটাগুলো ডজনখানেক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। লিন ওয়েন পিনসহ হাজার হাজার রোগীর তথ্য জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির কাছে পাঠানো হয়।
অসুস্থতা, শিক্ষা ও অর্থের অভাব, কৃষিজমির অভাব—ইত্যাদি অনেক কারণেই মানুষ দরিদ্র হয়। তবে, অসুস্থতা দারিদ্র্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
দারিদ্র্যের উত্স দূর করার জন্য চীন ১০০৭টি শহুরে তৃতীয় স্তরের হাসপাতাল থেকে ১.১১৮ লাখ জন চিকিত্সককে বিভিন্ন দরিদ্র জেলার ১১৭২টি হাপসাপালে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। বিশিষ্ট চিকিত্সকের পাশাপাশি, উন্নত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতাও বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় পাঠানো হয়।
২০১৭ সালে শেনচেন শহরের লুওহু এলাকার চিকিত্সা সহায়তা দল সিলিন জেলায় আসে।
শেনচেন শহরের লুওহু এলাকার চিকিত্সা সহায়তা দলের প্রধান ওয়াং নিং:
লি ওয়েন পিন’র পুরো শরীরের পেশীগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং আমরা প্রাথমিকভাবে বুঝেছি যে, তাঁর মেরুদণ্ডে অবশ্যই সমস্যা রয়েছে।
পরে চিকিত্সকরা বুঝলেন যে, লি ওয়েন পিন মেনিনজিওমায় ভুগছেন এবং অবিলম্বে তার অপারেশন করা উচিত। স্থানীয় চিকিত্সা বীমা ও কুয়াংতং প্রদেশের লুওহু এলাকার সহায়তায় গুরুতর অসুস্থতা ত্রাণ তহবিল অস্ত্রোপচারের জন্য কয়েক হাজার ইউয়ান আরএমবি লি-কে দান করে।
ওয়াংনিং: উঠান, উঠান, পা উঠান
এ ছাড়াও, কুয়াংতং চিকিত্সা দল লি ওয়েন পিনকে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যও প্রয়োজনীয় চিকিত্সা করে। বর্তমানে লি সুস্থ হয়েছেন।
লি ওয়েন পিন’র মতো গ্রামবাসীদের শারীরিক অবস্থা, বার্ষিক আয়, এবং দারিদ্র্যবিমোচন-পরবর্তী জীবন সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দরিদ্র পরিবারগুলোর তথ্যশালা গড়ে তোলা হয়। ২০১৪ সাল থেকে তথ্যশালায় প্রায় নয় কোটি জন দরিদ্র ব্যক্তি’র ২২.৮ বিলিয়ন তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এসব ডেটা থেকে সম্ভাব্য দাতারা যেকোনো দারিদ্র্য-পীড়িত পরিবার খুঁজে পেতে পারেন। তাদের স্বাস্থ্য কেমন? বার্ষিক আয় কতো? দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার পর জীবন কেমন কাটছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ডেটাবেইজে।
গত দশ বছরে বিভিন্ন উপায়ে অনেকে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি, প্রযুক্তির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন, ও আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন, ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে কোটি কোটি লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে চীনে। বর্তমান মানদন্ড অনুযায়ী, চীনের ৯.৮৯৯ কোটি গ্রামীণ দরিদ্র বাসিন্দাকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা হয়েছে। মূলত, লক্ষ্যভিত্তিক দারিদ্র্যবিমোচনব্যবস্থার মাধ্যমে তাঁরা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। (ছাই/আলিম)