আকাশ ছুঁতে চাই ৮৭
2022-08-18 17:28:47

কী থাকছে এবারের পর্বে

১. গণমাধ্যমে জেন্ডার সচেতনতা খুবই কম: আফরোজা সোমা, শিক্ষক, গবেষক ও লেখক

২. তিব্বতি হস্তশিল্পকে ধারণ করছে নারী সমবায় সংঘ

৩. পুরনো বইকে নতুন আলোয় আনছেন হু খ্য

৪. ফজিলাতুননেসা পদক  পেলেন পাঁচ কৃতী নারী

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।

গণমাধ্যমে জেন্ডার সচেতনতা খুবই কম: আফরোজা সোমা, শিক্ষক, গবেষক ও লেখক

মিডিয়াতে নারীর উপস্থাপন, ইমেজ  এবং অংশগ্রহণ সমাজে নারীর অবস্থানকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। মিডিয়াতে নারীর ইতিবাচক উপস্থাপন কতটা জরুরি এবং নারী অধিকার অর্জনে কিভাবে সহায়ক সে প্রসঙ্গে আজ আমরা কথা বলছি এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং লেখক ও গবেষক আফরোজা সোমার সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

                                             

সাক্ষাৎকার

আফরোজা সোমা জানান বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জেন্ডার সচেতনতা খুবই কম। তিনি কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। যেমন একজন নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সেখানে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশে বলা হয়েছে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। এখানে গভীর রাতে শব্দটির উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে পাঠকের মনে এই প্রশ্ন জাগবে যে নারীটি গভীর রাতে কেন পথে বের হলো। কেন সে একা ছিল। তারমানে অপরাধের দায় অনেকটাই যেন ভিকটিমের। এই ধরনের ‘ভিকটিম ব্লেমিং’ মানসিকতা গণমাধ্যমের জেন্ডার অসচেতনতারই প্রকাশ। এজন্য সম্পাদক থেকে শুরু করে রিপোর্টার পর্যন্ত জেন্ডার বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। গণমাধ্যমে নারীর প্রতি অসংবেদনশীলতা অনেক সময় সমাজের নেতিবাচক মনোভাব গঠনেও প্রভাব রাখে। এ থেকে উত্তরণের জন্য চাই প্রশিক্ষণ।

আফরোজা সোমা একজন কবি। তার কবিতার বই বিষয়েও কথা বলেন তিনি। শ্রোতাদের জন্য তার একটি কবিতা শোনান সোমা।

 

তিব্বতি হস্তশিল্পকে ধারণ করছে নারী সমবায় সংঘ

হস্তশিল্পের জন্য চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতের বেশ সুনাম রয়েছে।  পাথরে খোদাইকৃত তিব্বতি ভাস্কর্য শিল্পেরও সুখ্যাতি কম নয়। আরও রয়েছে তিব্বতের বুননশিল্পের সুনাম। তিব্বতের সৃজনশীল বিভিন্ন কাজের এইসব শিল্প সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। আর এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞের সঙ্গে নারীরাই বেশি সম্পৃক্ত। এই ধরণের শিল্পকে অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ করতে তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে সমবায় সংঘ। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে।

নিপুণ হাতে কাপড় বুনছেন বয়নশিল্পীরা।  ঐতিহ্যগত হস্তশিল্পের রঙ বেরঙের কাপড়সহ নানা পণ্যসামগ্রী তৈরি করছেন তারা। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পাইনং কাউন্টিতে দেখা যায় এমন চিত্র।

তিব্বতের পশমী কাপড় ফুলু খুব বিখ্যাত। পাইনংয়ে ফুলু ব্যবহারের আছে হাজার বছরের ইতিহাস। তিব্বতি মানুষের জীবনধারা ও ঐতিহ্যের প্রমাণ বহন করে এ কাপড়। এটি তার বিশুদ্ধ রঙ এবং ঘন টেক্সচারের জন্য খুব জনপ্রিয়।

তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী এই হস্তশিল্পকে নতুনভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরতে তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের গৃহিত উদ্যোগের মাধ্যমে গঠন করা হয় সমবায় সংঘ।   সেখানে তরুণ উদ্যোগতাদের শ্রম ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল শিল্পের ব্যবসা করার উৎসাহ দেয়া হয়। বংশগতসূত্রে হস্তশিল্পের সঙ্গে সম্পৃকতদের অংশ গ্রহণে এরই মধ্যে ১০৩টি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।  

পাইনং কাউন্টির জ্যেষ্ঠ্য কারু শিল্পী গোকি। তিব্বতি পাথর খোদাই শিল্পীর চতুর্থ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী তিনি। মেয়ে নাইড্রনসহ অন্যান্য তরুণদের কারুশিল্প শেখার অনুপ্রেরণা তিনি। তার মেয়ে নাইড্রন, এই বছর পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের লিয়ানয়ুনকং টেকনিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করার পর পাইনং এ ফিরে আসেন, পরিকল্পনা করেন বাবার কাজের আরো প্রসার ঘটানোর। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবার প্রশংসা করি। কারণ আমার পিতামহের ছেলেদের মধ্যে তিনিই একমাত্র যিনি এই শিল্প শেখার জন্য জোর দেন। আমি তাকে নিয়ে খুব গর্বিত। আমি আমার বাবাকে পাথর খোদাই শিল্পের প্রচারে সাহায্য করতে ফিরে এসেছি যাতে তিনি খোদাইতে মনোনিবেশ করতে পারেন।’

 

 

এরই মধ্যে তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী পাথরের কাজগুলো চিয়াংসু ও বেইজিং-এর বাজার ধরেছে। তাদের প্রত্যাশা, আধুনিক সমাজের কাছে ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্য পৌছে দিয়ে একদিকে যেমন সংরক্ষণ করা যাবে সংস্কৃতি, অন্যদিকে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের।

 

পুরনো বইকে নতুন আলোয় আনছেন হু খ্য

সুপ্রাচীন চীনা সভ্যতার একটি সমৃদ্ধ অংশ হলো তার সাহিত্য। ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নতুন করে সামনে আনতে হলে দরকার পুরনো বইগুলোর পাঠ সহজ করা। এই কাজটি করছেন একজন বইপ্রেমী নারী। তার কথা শুনবো প্রতিবেদনে।

ছোটবেলা থেকেই বইয়ের জগতে থাকতে ভালোবাসেন বেইজিংয়ের বাসিন্দা হু খ্য। গত একদশকের বেশি সময় ধরে তিনি তার বই পড়ার শখকে কাজে লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করে চলেছেন। তিনি চীনের প্রাচীন বইগুলোকে বর্তমানের পাঠ উপযোগী করে তুলে দিচ্ছেন পাঠকের হাতে।

চীনের সবচেয়ে পুরনো প্রকাশনীগুলোর অন্যতম হলো চুংওয়া বুক কোম্পানি। এখানকার একজন এডিটোরিয়াল কর্মী হলেন ৩৫ বছর বয়সী হু খ্য। তিনি এবং তার সহকর্মীরা প্রাচীন পান্ডুলিপিগুলোকে বর্তমানের জন্য পাঠপোযোগী করে তোলেন। অনেক প্রাচীন বই হাতে লেখা অবস্থাতেই রয়েছে। এর লিপিও প্রাচীন রীতিতে লেখা। সেগুলোতে যতিচিহ্ন এবং সহজবোধ্য চিহ্নগুলো নেই। সেই লেখাগুলোকে আধুনিক পাঠকের সামনে সহজবোধ্যভাবে উপস্থিত করার কঠিন দায়িত্ব পালন করেন হু খ্য এবং তার দল।

এইভাবে প্রাচীন ইতিহাস ও সাহিত্যকে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করে তার দেশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার শ্রমসাধ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে চলেছেন হু খ্য।

 

বঙ্গমাতা পদক পেলেন পাঁচ কৃতী নারী

বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রাখায় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক পেয়েছেন পাঁচজন কৃতী নারী।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার’ স্বীকৃতিতে দেশের পাঁচ নারীকে সম্প্রতি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) এবং সমাজসেবায় অবদানের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এ বছরের বঙ্গমাতা পদক পেয়েছেন।

এছাড়া রাজনীতি ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লার সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ ভূষিত হয়েছেন বঙ্গমাতা পদকে।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

 

আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

তিব্বতি হস্তশিল্পকে ধারণ করছে নারী সমবায় সংঘ, প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

পুরনো বইকে নতুন আলোয় আনছেন হু খ্য এবং ফজিলাতুননেসা পদক  পেলেন পাঁচ কৃতী নারী, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া