অগাস্ট ১৮: ২০১৫ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের জোহানেসবার্গ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘চীন ও আফ্রিকার মধ্যে জয়-জয় সহযোগিতা ও অভিন্ন উন্নয়নের নতুন যুগের উদ্বোধন’ শীর্ষক ভাষণ দেন। আফ্রিকার সাথে সম্পর্কের বিষয়ে চীনের নীতিদর্শনকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি। তাঁর ভাষণে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ককে সহযোগিতাকে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করার প্রস্তাবও করা হয়।
চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা (এফওসিএসি) ফোরামের জোহানেসবার্গ সামিটের সমাপ্তির পর প্রায় সাত বছর কেটে গেছে। চীন ও আফ্রিকা ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নিচ্ছে এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার উন্নতি ও আপগ্রেডেশানে নতুন উপাদান যোগ করেছে। ‘চীনা স্বপ্ন’ এবং ‘আফ্রিকান স্বপ্ন’ সংযুক্ত হয়েছে এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, চীন ও আফ্রিকা সবসময়ই একটি অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি। সাধারণ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা এবং সাধারণ সংগ্রাম চীনা ও আফ্রিকান জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরি করেছে। চীন ও আফ্রিকা উন্নয়নশীল দেশ এবং জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ও উন্নয়নের পারস্পরিক চাহিদা রয়েছে। এই সহযোগিতা একে অপরের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল অনিল সুকরাল বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলন চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তিনি বলেন,
“প্রেসিডেন্ট সি’র ২০১৫ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের জোহানেসবার্গ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই শীর্ষ সম্মেলনটি চীন ও আফ্রিকার মধ্যে জয়-জয় সহযোগিতা এবং অভিন্ন উন্নয়নের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আধুনিক সময়ে, চীন ও আফ্রিকার মধ্যে সহযোগিতা ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। কারণ, আমাদের ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়াই করার ইতিহাস রয়েছে। দারিদ্র্য এবং অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
প্রেসিডেন্ট সি তাঁর ভাষণে আরও বলেছিলেন, চীন-আফ্রিকা ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আফ্রিকার সঙ্গে ‘১০টি সহযোগিতামূলক পরিকল্পনা’ কাজে লাগাতে চীন ইচ্ছুক। এই সম্পর্কে সুকরাল বলেন,
“প্রেসিডেন্ট সি কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘দশটি সহযোগিতামূলক পরিকল্পনা’ সম্পূর্ণরূপে আফ্রিকা ইউনিয়নের ‘২০৬৩ কার্যক্রমের’ সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘দশটি সহযোগিতামূলক পরিকল্পনা’ পুরোপুরিভাবে ‘২০৬৩ কার্যক্রমের’ সব সমস্যার সমাধান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পায়ন, কৃষি আধুনিকীকরণ, সবুজ উন্নয়ন, দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে, চীন আফ্রিকাকে তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকাশে সহায়তা করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।”
প্রেসিডেন্ট সি তিনবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার শিকড় ও উন্নতির জন্য একটি উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব কেপ প্রদেশে, কোহা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে, চীনের ‘এফএইডাব্লিউ’ গ্রুপ ২০১৪ সালে একটি কারখানা স্থাপন করে। পরে, চীনা অটো কোম্পানিগুলো চীন-দক্ষিণ আফ্রিকা এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার উন্নতি এবং আপগ্রেডিং প্রত্যক্ষ করতে শুরু করে।
২০১৫ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের জোহানেসবার্গ শীর্ষ সম্মেলনে প্রস্তাবিত ‘দশটি প্রধান সহযোগিতা পরিকল্পনা’ থেকে, ২০১৮ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনে প্রস্তাবিত ‘আটটি পদক্ষেপ’ এবং তারপরে ২০২১ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফোরামের অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কর্তৃক আঁকা ‘নয়টি প্রকল্প’ ক্রমাগত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতায় নতুন প্রেরণা যোগ করেছে এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতাকে একটি নতুন যুগে ঠেলে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং ৫২টি আফ্রিকান দেশ চীনের সাথে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতাচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চীনের প্রস্তাবিত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগটি আফ্রিকান ইউনিয়নের ‘এজেন্ডা ২০৬৩’ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ‘এজেন্ডা ২০৩০’-এর সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। ‘চীনা স্বপ্ন’ আর ‘আফ্রিকান স্বপ্ন’-ও এখন গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে গেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)