অগাস্ট ১৭: ‘জো বাইডেন একজন উপযুক্ত বিশ্বনেতা নন, তিনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ সম্প্রতি মার্কিন সংবাদ নেটওয়ার্ক ‘গ্রিড’-কে এ কথা বলেছেন আফগানরা। গ্রিড ৯ জন আফগানির সাক্ষাত্কার গ্রহণ করে। সাক্ষাত্কারে তাঁরা তাদের গত এক বছরের জীবন তুলে ধরেন এবং ওয়াশিংটনের প্রতি প্রকাশ করেন তাদের তীব্র ক্ষোভ।
গত বছরের অগাস্টে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে তাদের ২০ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে, তাড়াহুড়ো করে কাবুল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। সেই ঘটনা ‘কাবুল মুহূর্ত’ নামে পরিচিত, যা আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসনের ব্যর্থতার প্রতীক। যদিও মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে গেছে, তবে আফগান জনগণের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের নেতিবাচক আচরণ বন্ধ হয়নি। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আফগান নাগরিকদের সম্পদ দখলের মাধ্যমে মার্কিন সরকার আফগান জনগণের দুঃখ-কষ্টের কারণ হিসেবে রয়েই গেছে।
১২ বছর বয়সী আফগান ছেলে গুলার কাবুলের রাস্তায় প্লাস্টিক বোতল ও ক্যান সংগ্রহ করে জীবন কাটায়। সে বলল, ‘আমার বাড়িতে কোনো টানা-পয়সা নেই। তাই আমি স্কুলে যেতে পারি না।’ গুলারের মতো আরও অনেক হতভাগা আফগান শিশু আছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সংকট গুরুতর করেছে। ৯৮ শতাংশ আফগান মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে; ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুরা ভুগছে গুরুতর পুষ্টিহীনতায়।
তা ছাড়া, আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ ফ্রোজেন করে রেখেছে ওয়াশিংটন। জাতিসংঘের মানবতাবিষয়ক সমন্বয়ী কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক ও ব্যাংকব্যবস্থা পুনরুদ্ধার না-হলে আফগান জনগণের জীবনমান উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনাই নেই।
জুলাই মাসের শেষ দিকে সন্ত্রাসদমনের অজুহাতে কাবুলের ওপর ড্রোন হামলা চালায় ওয়াশিংটন। সেটি ছিল দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। আফগানে এর তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত মার্কিন প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার।
আজকের আফগান পরিস্থিতির জন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী। এর দায় মার্কিন প্রশাসন অস্বীকার করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আফগানিস্তানের কাছে, আফগান জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া; অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেওয়া; এবং আফগানিস্তানের সম্পদ আফগান জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। তা না-হলে বা আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি যদি যুক্তরাষ্ট্র আবারও সৃষ্টি করে, তবে ভবিষ্যতে ‘কাবুল মুহূর্ত’ আবারও সৃষ্টি হবে। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)