অগাষ্ট ১৭: এ পর্যন্ত চীন ১২০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ২.২ বিলিয়ন ডোজেরও বেশি কোভিড-১৯ মহামারী টিকা সরবরাহ করেছে। ২০টিরও বেশি দেশে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি রফতানি করেছে ও টিকা খাতে এসব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে চীন। বিদেশের জন্য বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডোজ কোভিড-১৯ টিকা উত্পাদনের সামর্থ্য রয়েছে চীনের। চীনের সাইনোফার্ম গোষ্ঠী সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানায়। চীনে অনেক বিদেশী রাষ্ট্রদূত বিশ্বজুড়ে মহামারী প্রতিরোধমূলক সহযোগিতা দেওয়ায় প্রশংসা করেছেন।
আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত সাবিনো ভাকা নারভাজা বলেছেন, যখন কোভিড-১৯ টিকার অভাব ছিল, তখন চীন আর্জেন্টিনাকে ব্যাপকভাবে টিকা সরবরাহ করে। এর ফলে আর্জেন্টিনা দ্রুত ও নিরাপদে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে দু’দেশের গভীর মৈত্রীর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি আরও বলেন,
‘চলতি বছর হলো দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দু’দেশের উচিত টিকা খাতে সহযোগিতা আরও বাড়ানো ও নতুন সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করা।’
২০২১ সালের ২ জানুয়ারি মিসর আনুষ্ঠানিকভাবে সাইনোফার্মের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। মিসর হলো নাগরিকদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া আফ্রিকার প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। চীনে মিসরের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ এলবদরি বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রদত্ত ৫০ হাজার ডোজ চীনা টিকা মিসরে পাঠানো হয়। তিনি বলেন,
‘মিসর সবার আগে সাইনোফার্মের টিকা পেয়েছে। সাইনোফার্ম বিশ্বজুড়ে মহামারী ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় টিকা উত্পাদন করেছে। চীনে মিসরের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি চীনকে ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে সার্বিয়ার রাষ্ট্রদূত মাজা স্টেফানোভিচ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে মহামারী প্রতিরোধমূলক সামগ্রী ও টিকার অভাব ছিল। তবে, চীন সার্বিকয়াকে টিকা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছে। মহামারী প্রতিরোধের প্রক্রিয়ায় দু’দেশের মৈত্রী গভীরতর ও জোরদার হয়েছে। তিনি বলেন,
‘সার্বিয়া হলো ইউরোপের প্রথম দেশ যে চীনের সাইনোফার্মের উত্পাদিত কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহার করেছে। কঠিন অবস্থায় চীন ও সাইনোফার্ম সার্বিয়াকে টিকা সরবরাহ করেছে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।’
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীন, সার্বিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথভাবে ৩ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করে সাইনোফর্মের টিকা উত্পাদনের কারখানা সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের জেমুন শহরে নির্মাণ করে। সার্বিয়া হলো ইউরোপের প্রথম দেশ যে চীনা কোভিড-১৯ টিকা উত্পাদন করবে। এ সম্পর্কে স্টেফানোভিচ বলেন,
‘আমি গর্বিতভাবে জানাতে চাই যে, সার্বিয়া, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বেলগ্রেডের জেমুন শহরের টিকা কারখানা শীঘ্রই উত্পাদন শুরু করবে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী হলো একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এর ধরণের গুরুতর সংকট কোনো একক দেশের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না। ঐক্য ও সহযোগিতা হলো সঠিক পদ্ধতি। গত দুই বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন যৌথভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে আসছে। দু’দেশ যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট টিকা ও ঔষধ নিয়ে গবেষণা করেছে এবং উত্পাদন খাতেও সহযোগিতা চালিয়ে আসছে। দু’দেশ বিশ্বের মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।
সাইনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ চিং চেন বলেন, এ পর্যন্ত কোম্পানির টিকা ১১৯টি দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ১৯৬টি দেশের মানুষ এ টিকার আওতায় এসেছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে সাইনোফার্ম টিকা সরবরাহ করেছে ৩.৫ বিলিয়ন ডোজের বেশি।
বলা বাহুল্য, সাইনোফার্মের টিকা বিশ্বব্যাপী গণপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চীনের সরকারের প্রতিশ্রুতিও ছিল চীনে তৈরি কোভিড-১৯ টিকাকে বিশ্বব্যাপী গণপণ্য হিসেবে গণ্য করা হবে। চীন সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছে এবং বিশ্বব্যাপী হয়েছে প্রশংসিত। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)