মিথ্যাচার কোনোমতেই চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীকে নষ্ট করা যাবে না
2022-08-16 15:56:18

সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারি এবং ভৌগলিক রাজনৈতিক সংকটের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। শ্রীলংকা, পাকিস্তান এবং কিছু আফ্রিকান দেশ ঋণ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এমন অবস্থায় মার্কিন রাজনীতিক এবং তথ্যমাধ্যম আবার তথাকথিত ‘চীনের ঋণ ফাঁদের’ ধারণা নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছে যে, চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের কৌশলগত সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হল পাকিস্তানের পর চীনের পুঁজি  বিনিয়োগকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পশ্চিমা দেশের প্রভাবে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছে: বাংলাদেশ কি ‘চীনের ঋণ ফাঁদে’ পড়তে যাচ্ছে? আজ এই বিষয়ে আলাপ করবো।

আসলে ঋণ নেওয়া স্বাভাবিক অর্থনৈতিক আচরণ। শুধুই কঠোর রাজনৈতিক শর্ত যোগ করা বা সন্দেহজনক শর্ত যোগ করলে ঋণের ‘ফাঁদ’ তৈরি হয়। ‘ঋণের ফাঁদের’ ধারণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক বিষয়কে রাজনীতিকরণ করা। অর্ধ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক ঋণ সমস্যা পর্যালোচনা করে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রসারিত মুদ্রানীতি, তত্ত্বাবধানহীন ঋণ ব্যবস্থার সংস্কার ইত্যাদি কারণে উন্নয়নশীল দেশ বার বার যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, অধিকাংশ দেশ বেশিরভাগ সময় চীন থেকে নেওয়া ঋণের হার ১ শতাংশের কম। চীনের ঋণ কখনই উন্নয়নশীল দেশের ঋণ সংকটের কারণ হয় নি।

তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে ‘ঋণ ফাঁদে’ পড়তে যাচ্ছে? সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী জনাব মুস্তফা কামাল তথ্যমাধ্যমে বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। যা প্রধানত বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নেওয়া। বর্তমানে চীন থেকে নেয়া ঋণ বাংলাদেশের মোট ঋণের ৬ শতাংশ। এর তুলনায় বাংলাদেশের বৃহত্তম ঋণদাতা দেশ হলো জাপান। বাংলাদেশ জাপান থেকে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে, যা দেশের মোট ঋণের ১৫ শতাংশ। যা চীনের ঋণের দ্বিগুণ। আর একইসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন একই মন্তব্যও করেছেন। অবশ্য, এসব সূচক প্রমাণ করে যে, চীন থেকে নেওয়া ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে  ‘ঋণের ফাঁদে’ ফেলা যায় না।

 

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি নিয়ে এক সম্মেলন আয়োজন করেন। দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ বিভিন্ন প্রধান কর্মকর্তা এতে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা গুরুতর ঋণ সংকটে পড়ার প্রেক্ষাপটে সম্মেলনে বাংলাদেশের ঋণের অবস্থা এবং দেশের অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো সংকটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, দেশের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতি”। বাংলাদেশের কোনো ঋণের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যে ঋণ পরিশোধে কখনোই খেলাপি হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না”।

 

আরেকটি বিষয় হল, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বাংলাদেশের কাছে ‘ফাঁদ’ নাকি ‘সুযোগ’? বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জি মিং বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলেছিলেন, চীনের প্রদান করা অর্থের কোনো অযৌক্তিক শর্ত নেই। বাংলাদেশর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে আরো বেশি অর্থ চায়, তবে এসব ঋণের সঙ্গে অনেক শর্ত আছে। এর ফলে অর্থ সংগ্রহ আরো কঠিন হয়। চীন কখনই অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না, চীনের পুঁজি পুরোপুরিভাবে স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য; চীন বাংলাদেশের চাহিদা উপলব্ধি করে। চীন বাংলাদেশের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে যুক্তিযুক্ত আর্থিক সহায়তা বাছাই করার সুযোগ দিয়েছে।

 

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল চীনের সহায়তায় তৈরি প্রকল্প সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা করে। যেমন বাংলাদেশ-চীন অষ্টম মৈত্রী সেতু নির্মাণের পর স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ অবস্থা উন্নত হবে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, শিল্প এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন জোরদার হবে। চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এক হাজার তিনশ’ ২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গোটা দেশে বিদ্যুৎ চালু হওয়া প্রথম দেশ হয়েছে। এমন উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে।

বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, তথাকথিত ‘চীনের ঋণ ফাঁদ’ বিষয়টি হল সেসব দেশের গল্প- যারা চীন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সহযোগিতা দেখতে চায় না। এটা সেসব দেশের সৃষ্টি করা একটি বড় মিথ্যা কথা।

(শুয়েই/তৌহিদ)