অগাষ্ট ১৬: গতকাল (সোমবার) বেইজিংয়ে আয়োজিত চীনা জাতীয় অর্থনীতির অপারেশন নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি অব্যাহতভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। চীনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৃদ্ধি পায় ০.৪ শতাংশ জিডিপি। মহামারীর কারণে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন খুবই কঠিন। গত জুলাই মাসে জটিল আন্তর্জাতিক পরিবেশ, বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ধীরগতি, ও নতুন দফা মহামারীর কারণে চীনা অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এর আগে চীনা বাণিজ্য ও ত্বরান্বিত সমিতি’র প্রকাশিত সর্বশেষ বিদেশী বিনিয়োগ পরিবেশ জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা ও বৃদ্ধি করা বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯১ শতাংশ। বাজার বাড়ানো এবং চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান-কৌশল হলো বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনে বিনিয়োগ বাড়ানোর দুটি মূল কারণ। জুলাই মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, এসব বিদেশী প্রতিষ্ঠান চীনে বিনিয়োগ আরও বাড়াবে।
গত জুলাই মাসে চীনের অর্থনীতির প্রধান উত্পাদন ও চাহিদা সূচকগুলোর পুনরুদ্ধারের প্রবণতা বজায় ছিল। নির্ধারিত আকারের ওপরে শিল্প-সংযোজিত মূল্য, পরিষেবা শিল্প উত্পাদন সূচক, আমদানি ও রপ্তানি, ভোগ্যপণ্যের মোট খুচরা বিক্রয় এবং স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ—সবই গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনা অর্থনীতির জন্য কর্মসংস্থান এবং পণ্যমূল্য হলো গুরুত্বপূর্ণ সূচক। গত জুলাই মাসে চীনের শহুরে বেকারত্ব ছিল ৫.৪ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে ০.১ শতাংশ কম। কর্মসংস্থান স্থিতিশীল হলে অর্থনীতি ও সমাজ স্থিতিশীল হয়। একই সময়ে চীনের সিপিআই ২.৭ শতাংশ বেড়েছে, যা বছরের প্রত্যাশিত লক্ষ্য ৩ শতাংশ পয়েন্টের চেয়ে কম। বর্তমান বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চীনে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল আছে।
গত জুলাই মাসে চীনা অর্থনীতি অব্যাহতভাবে পুনরুদ্ধার হওয়ার আরেকটি কারণ হলো কঠোর ও দক্ষ মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সমর্থন ব্যবস্থা।
গত মে মাসে চীন সরকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থা, বিনিয়োগ স্থিতিশীলতা ও ভোগ ত্বরান্বিত ব্যবস্থা, খাদ্যশস্য ও জ্বালানিসম্পদ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ব্যবস্থা, শিল্প চেইন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা এবং মৌলিক জীবিকা নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে ৩৩টি নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে চীনা অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে।
চীনে আমেরিকান ও জার্মান চেম্বার অফ কমার্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০ শতাংশেরও বেশি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ও ৭০ শতাংশেরও বেশী জার্মান প্রতিষ্ঠান চীনে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। চলতি বছরে বিএমডাবলিউ, ভোল্ক্সওয়াগান, হিউন্দাই ও স্ক্যানিয়া চীনে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছে। হাইনানে আয়োজিত চীনের দ্বিতীয় ভোগ্যপণ্য মেলায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এলাকার আয়তন মোট মেলার ৮০ শতাংশ ছিল। ৬১টি দেশ ও অঞ্চলের ১৬০০টিরও বেশি ব্রান্ড মেলায় অংশ নেয়।
বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বাড়ছে। আর চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি এখনও যথেষ্ট শক্ত নয়। যদিও অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তবুও চীনা অর্থনীতিতে স্থায়ী প্রবৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হবে না। চীনা অর্থনীতির উন্নয়নে বিশ্বের অর্থনীতিও আস্থা ও শক্তি পেতে পারে। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)