জাপানের উচিত নিজের সামরিকবাদের অন্যায্যতা সঠিকভাবে উপলব্ধি করা
2022-08-16 10:28:01

অগাস্ট ১৬: গতকাল (সোমবার) ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ৭৭তম বার্ষিকী। তবে, সম্প্রতি জাপানের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ দেশটির অতীত সামরিকবাদ পুনরুদ্ধারের অপচেষ্টা চালায় এবং তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনাসৃষ্টিকারী মন্তব্য করে। এটা শুধু এতদঞ্চলের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের ব্যাপার।

সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ‘এক চীননীতি’ লঙ্ঘন করে তাইওয়ানে সফর করেন। তাঁর এ আচরণ বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নিন্দা কুড়িয়েছে। তবে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও পেলোসির সাথে সাক্ষাতে বলেছেন, তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের স্বাভাবিক সামরিক মহড়া জাপানের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকিস্বরূপ। তিনি আশা করেন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করবে। তা ছাড়া, জি-সেভেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ বিবৃতির মাধ্যমেও চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী মার্কিন আচরণকে সমর্থন দেয় টোকিও।

বস্তুত, তাইওয়ান ইস্যুতে জাপান কোনো মন্তব্য করার যোগ্যতাই রাখে না। কারণ, ১৮৯৫ সালে জাপান সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালিয়ে তাইওয়ান ও পেঙ্গু দ্বীপপুঞ্জ দখল করেছিল। পরে সেখানে টানা ৫০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনে জাপান ৬ লক্ষাধিক তাইওয়ানবাসীকে হত্যা করেছে এবং ব্যাপকভাবে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। আরও পরে, ১৯৪৩ সালের ‘কায়রো ঘোষণা’ এবং ১৯৪৫ সালের ‘পটসডাম ঘোষণা’ অনুসারে, তাইওয়ান ও পেঙ্গু দ্বীপপুঞ্জ চীনের কাছে ফেরত দেয় জাপান এবং নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে।

অবশ্য জাপানের ডানপন্থীরা কখনও দেশটির আগ্রাসনের ইতিহাস নিয়ে আত্মসমালোচনা করেনি। তাঁরা বরং চীনের ভূভাগের সাথে তাইওয়ানের একীকরণের পথে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। সম্প্রতি জাপানের মন্ত্রিসভায় গৃহীত ‘আত্মরক্ষা শ্বেতপত্র, ২০২২’-এ বলা হয়েছে, দেশের আশেপাশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আত্মরক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। শ্বেতপত্রে তাইওয়ান ইস্যুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে এবং তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে মিত্রদেশগুলোর সাথে সহযোগিতা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

জাপানের রাজনীতিবিদদের উচিত এশীয় দেশগুলোর জন্য তাদের দেশ অতীতে যেসব দুর্গতি বয়ে এনেছিল, সেগুলো স্মরণ করা, আত্মসমালোচনা করা এবং সামরিকবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা-ভাবনা পরিত্যাগ করা। তা না-হলে জাপানকে আবারও ইতিহাসের অতল গহ্বরে পড়তে হতে পারে। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)