যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজ দেশের দ্বন্দ্ব ছড়ানোর পরিবর্তে নিজের অর্থনীতি উন্নত করা
2022-08-15 11:35:41

সম্প্রতি সিজিটিএন পাঁচটি মহাদেশের ২২টি দেশে পরিচালিত এক জনমত জরিপ থেকে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ বিদেশি মানুষ গত দশ বছরে চীনের উন্নয়ন সাফল্যের প্রশংসা করেছে এবং এর মধ্যে ৭৮.৩৪ শতাংশ মনে করে যে- ‘চীনের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে’, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে আত্মবিশ্বাস এবং জীবনীশক্তি যোগ করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরের অপর দিকে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ আবারও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট রেট বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে, যা ফেডারেল তহবিলের হারের লক্ষ্যমাত্রা ২.২৫ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশে বাড়িয়েছে। একই সময়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের তথ্যে দেখা যায়, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি আগের ত্রৈমাসিকের থেকে বার্ষিক ০.৯ শতাংশ কমেছে। তা ছাড়া, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের জুন মাসের তহবিল নীতির সম্মেলনে নীতিগত পথের উপর ভিত্তি করে আইএমএফ চলতি বছরে মার্কিন অর্থনীতি ধীর হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএমএফ সে বছর মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে এপ্রিলের ৩.৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.৯ শতাংশে এবং ২০২৩ সালে ২.৩ শতাংশ থেকে ১.৭ শতাংশে নামিয়েছে। আইএমএফ মনে করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা এড়ানোর পথ সংকুচিত হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বর্তমান পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা স্বীকার করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এই বছর এবং বিশেষ করে পরের বছর খুব গুরুতর নেতিবাচক ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।

 

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে চীনের তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের খবর ধীরে ধীরে মিডিয়ায় কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মিডিয়ার হট টপিকে পরিণত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিভাগ ১০ অগাস্ট  যুক্তরাষ্ট্রের জুলাই মাসের মুদ্রাস্ফীতির উপাত্ত প্রকাশ করেছে। কিছু মার্কিন মিডিয়া এবং পণ্ডিতরা বলেছেন যে- যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি এখনও উচ্চ স্তরে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে অনেক অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমলেও, এটি জ্বালানি সম্পদের দাম মাসে মাসে হ্রাসের প্রভাবে খাদ্যের দাম এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য, খাদ্য এবং ভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে যা তেলের নিম্নমূল্যের প্রভাব আংশিকভাবে কমিয়েছে।

রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক শক্তি আছে যা যুক্তরাষ্ট্র ভয় পায়, অন্যদিকে, অর্থনীতিসহ সার্বিক ক্ষেত্রে চীনের দ্রুত বৃদ্ধির কারণে চীনকে- যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় হুমকি হিসেবে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা অনেক বেশি। যেমন মহামারীর দুর্বল প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং এই বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্য-মেয়াদী কংগ্রেস নির্বাচন ইত্যাদি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করতে চায় না। তবে, তাদের নিয়মিত পদ্ধতি হল অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে পররাষ্ট্রনীতিতে ঠেলে দেওয়া। শুধু পেলোসির তাইওয়ানে সফর নয়, এই সফরের আগে জুলাই মাসের শেষ দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি ‘চিপ ও প্রযুক্তি বিলে’ স্বাক্ষর করেন। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিল অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ভর্তুকি পাওয়া কোম্পানিগুলিকে দশ বছরের মধ্যে চীন বা অন্যান্য দেশের সাথে, যা ‘যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ’- কোন ‘বড় লেনদেন’ করতে পারবে না। এতে চীনকে সরাসরি নামকরণ করা হয়েছে- যা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত উদ্বেগ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিজের উন্নয়নের অধিকার আছে। তবে তাদের অন্যদের উন্নয়নে বাধা দেওয়া উচিত নয়। যে সত্যটি উপেক্ষা করা যায় না তা হলো, বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে, ২০২১ সালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং দু’দেশের গভীর আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় ও আন্তঃসম্পর্কিত স্বার্থ রয়েছে।

 

১০ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রাষ্ট্রদূত ছিন কাং ফোর্বসের চতুর্থ মার্কিন-চীন বাণিজ্য ফোরামে তার বক্তব্যে বলেন যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছে। দু’দেশের শিল্প খাতে গভীর একীকরণ এবং উচ্চ মাত্রার বাণিজ্যের পরিপূরকতা এবং পারস্পরিক সুবিধা ও উভয়ের জয়ের মডেল দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পারস্পরিক সুবিধা এবং জয়-জয় ভবিষ্যতে চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য হিসেবে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজ দেশের দ্বন্দ্ব স্থানান্তর না করে নিজের অর্থনীতি উন্নত করা এবং উস্কানিমূলক আচরণের পরিবর্তে চীনের সঙ্গে উভয়ের জয়ের সহযোগিতা বজায় রাখা।

 

 

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)