মহামারি প্রতিরোধের ফ্রন্ট লাইনে তরুণদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা
2022-08-12 15:47:25

গত তিন বছরে করোনাভাইরাসের মহামারি প্রত্যেকের জীবনকে কোনো না কোনোভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। শুরুতে ছিল ভয়, বর্তমানের বিভিন্নভাবে তা মোকাবিলা করা যায়। অনেকেই মহামারি প্রতিরোধকে একটি যুদ্ধ বলে মনে করছে। এমন যুদ্ধে অনেক তরুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখেছে। তাদের পিছনে এক একটি মনোমুগ্ধকর গল্প আছে, যা থেকে আমরা মহামারির নিষ্ঠুরতা বুঝতে পারি, যৌবনের শক্তিও বুঝতে পারি। আজ মহামারি প্রতিরোধে তরুণদের নানা অবদানের কথা জানাবো।

 

অনেকের মনে আছে, চীনে মহামারি শুরু হয় উহান শহরে। মহামারি শুরু হলে চীনের থুংজি হাসপাতালের সাইনো-ফ্রান্স ইকো-সিটি শাখা হাসপাতাল উহানে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা দেওয়া হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারিত হয়। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০৬জন চিকিত্সক উহানে গিয়ে সেই হাসপাতালে লড়াই করেন, মহামারি প্রতিরোধে কাজ করেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকেই ১৯৯০ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছেন। ৭০ দিনেরও বেশি চিকিত্সা সেবা দেওয়ার সময় তাঁরা সবচেয়ে কঠোর কর্তব্য কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। মোট ৩১৬জন গুরুতর রোগীর চিকিত্সা করেছেন তাঁরা।

১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করা উ ছাও বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন তৃতীয় হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডাক্তার। তিনি হলেন হুপেইয়ে চিকিত্সা সহায়তা দলের একজন সদস্য। তিনি একই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে চিঠি লেখা অন্যতম একজন চিকিত্সক।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের চীনের ঐতিহ্যবাহী লন্ঠন উত্সবের দিনে তাঁদের চিকিত্সা দল ক্রিটিক্যাল ইনফেকশন ইউনিট গ্রহণ করেছে। সে সময় উহানে রোগীর সংখ্যা তীব্রভাবে বেড়ে যায়। আর তাদের ইউনিটে গুরুতর রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল। ৫, ৬ জনের শ্বাসনালী ইনটিউবেশন প্রয়োজন।

 

রোগীরা এসব তরুণ চিকিত্সকের প্রশংসা করে বলেন: অসাধারণ, সত্যি অসাধারণ, বর্তমানের তরুণ মানুষ, সাবাশ!

চাং চিয়া নান হলেন বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন তৃতীয়  হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল ইনফেকশন ইউনিটের একজন নার্স। তিনি বলেন, সেই রাতে, হয়তো বলবো- সেই মুহূর্তে, আমি সত্যিই বড় হয়ে গিয়েছিলাম। তা আমার পেশাগত দায়িত্বের কারণে। আমাদের উচিত ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের ফ্রন্ট লাইনে যাওয়া। রোগীর কাছে যাওয়া।

হুপেই প্রদেশের মহামারি প্রতিরোধে সহায়তাকারী ৪২ হাজারেরও বেশি চিকিত্সকের মধ্যে ১২ হাজারেরও বেশি ১৯৯০ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছেন। আগের ‘গ্রিনহাউসের’ ‘শিশুরা’, এখন চীনের শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

 

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন তৃতীয় হাসপাতালের হাড় বিভাগের চিকিত্সক ওয়াং বেন বলেন, ১৯৯০ সালের পর জন্মগ্রহণ করা মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ বয়সীরাও ৩০ বছরের বেশি। চীনারা বলে, মানুষের বয়স ৩০ বছর হলে আত্মনির্ভর হতে পারে। ৯০ দশকের পরের প্রজন্মরা সত্যি মহামারি সঙ্গে লড়াইয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। তারা আমাদের দেশের আশা।

মহামারিকালে উহানের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় রুদ্ধদ্বার পরিচালনা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা কমিউনিটি কর্মীদের সঙ্গে অধিবাসীর সেবা দেন, তাঁরা উহান শহরের যৌবনের দৃশ্য।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বেইজিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ২০০০ সালের পর জন্মের মেয়ে সিয়ে সিয়াও ইয়ু উ হানে নিজের বাসায় ফিরে শীত্কালীন ছুটি কাটান। তখন উ হানে মহামারি শুরু হয়। তিনি স্বেচ্ছায় স্থানীয় তুং হু নতুন এলাকার কমিউনিটির সবচেয়ে তরুণ স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন। তিনি দুই শতাধিক অধিবাসীর জন্য সবজি, ওষুধ কিনে দেন ও  বিভিন্ন সেবা দেন।

সিয়ে সিয়াও ইয়ু বলেন, শুরুর দিকে মানুষের শক্তিতে বিভিন্ন সামগ্রী অধিবাসীদের পাঠাতে হয়। প্রতিদিন ২০ বারেরও বেশি যাওয়া-আসা হয়। যেমন, আপনি এই পরিবারের জন্য ডেলিভারি দিয়েছি, আবার সেই পরিবারের জন্য কিছু দিতে হয়। বসার কোনো সময় ছিল না। আপনার সবসময় দৌড়ে এসব কাজ করতে হতো। আমার বয়স ১৯ বছর, তবে আমি আর ছোট শিশু নই।

২০২০ সালের ১০ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তুং হু নতুন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সিয়ে সিয়াও ইয়ু’র কর্মরিপোর্ট শোনেন। তিনি বলেন, আগে কেউ বলত, তরুণ মানুষদের অতিরিক্ত আদর চায় এবং তারা আরামপ্রিয় প্রজন্ম। তবে দেখুন, বর্তমানে তাঁরাই হলেন মহামারি প্রতিরোধের প্রধান শক্তি। কঠিনতা ও কোনো ত্যাগকে ভয় পায় না। মহামারি প্রতিরোধের ফ্রন্ট লাইন যে কোনো স্থানের চেয়ে মানুষের পরীক্ষা করতে পারে।

সংগ্রাম হল যৌবনের সবচেয়ে সুন্দর রং। মহামারি প্রতিরোধের ফ্রন্ট লাইনে বিপুল সংখ্যক তরুণ চিকিত্সকরা নিজের দায়িত্ব পালন করছেন, হাজার হাজার তরুণ মানুষ কমিউনিটি, কারখানা এবং সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছেন। ব্যাপক চীনা যুবক নিজের আচরণ দিয়ে প্রমাণ করছেন যে, নতুন যুগের চীনা যুবকরা অসাধারণ ও বিশ্বাসযোগ্য।