তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের শ্বেতপত্র এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
2022-08-12 15:57:19

চীনের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে সম্প্রতি তাইওয়ান ঘুরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তাঁর এই সফরের প্রতিক্রিয়ায় গত বৃহস্পতিবার সামরিক মহড়া করে চীন। তাইওয়ানে যে কোনো ধরনের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তৎপরতার বিরুদ্ধে চীন বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানায়। এ বিষয়কে সামনে রেখে বুধবার এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে চীন সরকার। তাতে সুষ্পষ্টভাবে জানানো হয়, শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য ব্যাপক পরিসর তৈরি করতে প্রস্তুত বেইজিং। তবে চীন কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার সুযোগ দেওয়া হবে না।

 

চার মাস আগে থেকেই চীন বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনকে ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের মনোভাব জানিয়েছিল। চীন এটা স্পষ্ট করেই বলেছিল যে, এ ধরনের সফর হবে ‘এক-চীন নীতি’ এবং ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যৌথ ইস্তাহারের’গুরুতর লঙ্ঘন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন এ কথা কানে তোলেনি। চীন বলছে যুক্তরাষ্ট্রের নানা কুতর্কের মাধ্যমে বাস্তবতা ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে, তাইওয়ান প্রণালীর বর্তমান উত্তেজনাময় পরিস্থিতির জন্য মার্কিন প্রশাসনের উস্কানি ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণই দায়ী।

এ অবস্থায় গত বুধবার চীন ‘তাইওয়ান সমস্যা এবং নতুন যুগে চীনের একীকরণ খাত’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে: চীনাদের ব্যাপার চীনা জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। এতে বলা হয় যে, তাইওয়ান ইস্যুটি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়; যা চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থ ও চীনা জনগণের জাতিগত আবেগের সঙ্গে জড়িত, বাইরের কোনো শক্তির এতে হস্তক্ষেপের অনুমোদন দেওয়া হবে না।

 

এই শ্বেতপত্র আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে তাইওয়ান সমস্যার বাস্তবতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ অনুযায়ী দু’পারের শান্তিপূর্ণ একীকরণের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নকশা চিত্রিত করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রটি পেলোসি’র তাইওয়ান অঞ্চল সফরের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নয়, বরং নতুন যুগে চীনের তাইওয়ান সমস্যার সমাধানের বাস্তবসম্মত কৌশলের বহিঃপ্রকাশ। সেই সঙ্গে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং বিশ্বের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক শক্তি যুগিয়েছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে সামরিক অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে আসছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাইওয়ানের আলাদা আসন তৈরিতে চেষ্টা করে এসেছে। এবারে পেলোসিকে তাইওয়ান অঞ্চল সফরের অনুমোদন দিয়েছে। চীনের একীকরণ বাস্তবায়নে ধারাবাহিক বাধা সৃষ্টি করেছে এবং তাইওয়ান প্রণালীর দুই পাড়ের শান্তি নষ্ট করছে। এর জবাবে চীনের নেওয়ার ধারাবাহিক শক্তিশালীর পাল্টা ব্যবস্থা যৌক্তিক, বৈধ ও প্রয়োজনীয়; এতে আন্তর্জাতিক সমাজও ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছে। এ অবস্থায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কয়েকটি খাতের সংলাপ বন্ধ করে দিয়েছে।

 

এদিকে, সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বিভিন্ন স্থানে দেওয়া বক্তব্যে তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতিতে চীনের অবস্থান পুনরায় ব্যাখ্যা করেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কথিত তাইওয়ান সফর পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক উস্কানি। যা গুরুতরভাবে মার্কিন প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের পাশাপাশি চীনের স্বাধীনতাকে পদদলন করেছে। বর্তমানে তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের তিনটি বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র তার কিছু মিত্র অংশীদারের মধ্যে এই অঞ্চলে সামরিক বণ্টন বাড়িয়ে পরিস্থিতি আরও তীব্র করে নতুন সংকট তৈরির চেষ্টার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ শক্তিকে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তাই দেশ ও জাতির বিছিন্নতার পথে আরো দূরে যাবার বিষয়েও সতর্ক থাকা দরকার।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত যে, তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নয়; এটা চীনের ভূখণ্ড এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মার্কিন এ আচরণ গুরুতরভাবে চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন। ইচ্ছাকৃতভাবে তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি বিনষ্ট করছে যুক্তরাষ্ট্র। যে কোনো একটি সমস্যা সৃষ্টি করা, তারপর সেই সমস্যার অজুহাতে নিজের কৌশলগত বাস্তবায়ন করা যুক্তরাষ্ট্রের বরাবরের কৌশল। কিছু লক্ষণ থেকে দেখা যায়, পেলোসি-কে তাইওয়ান অঞ্চলে পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার সেই পুরানো কৌশল বাস্তবায়ন করতে চায় এবং এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করতে চায়। এটি সব পক্ষের উচ্চ সতর্কতা এবং দৃঢ় প্রতিরোধের দাবি রাখে।