দেহঘড়ি পর্ব-৮২
2022-08-12 19:29:15

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে চীনা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’।

#লাইফস্টাইল

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ৬টি কার্যকরী উপায়

যে কোনও নারীর জীবনে গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ সময়। নাজুক এই সময়ে সবসময় দুশ্চিন্তা হয় অনাগত সন্তানের জন্য। নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা প্রতিটি নারীর পক্ষেই সম্ভব, কেবল যদি তিনি গর্ভাবস্থায় নিজের সঠিক যত্ন নেন। গর্ভাবস্থায় ছোটখাটো জটিলতাগুলো স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের অন্তরায় না। কিন্তু কিছু বড় জটিলতায় সি-সেকশন লাগবেই। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক প্রসব নিশ্চিত করার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ রয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

জন্মদান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় শিক্ষা

সবার আগে যেটা দরকার তা হলো গর্ভাবস্থা এবং জন্মদান সম্পর্কে আপনার ভালো একটা ধারণা থাকতে হবে। এজন্য এই বিষয়ে কিছু জার্নাল কিংবা বই পড়তে পারেন। আর সবচেয়ে সহজ হলো ইউটিউবে ভিডিও দেখা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কিংবা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ এখন হরহামেশাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মানসিক প্রস্তুতির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশনের মতো কিছু সাধারণ পদ্ধতি মেনে চলতে পারেন। তবে অবশ্যই নিয়মিত একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

ভারী ওজন তোলার ব্যাপারে সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় হবু মাকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে বলা হয়। খুব ভারী ওজন তুলবেন না। তবে আপনি শরীর সুস্থ ও ঝরঝরে রাখতে কিছু ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন। প্রসব ব্যথা মোকাবেলায় এগুলো ভীষণ সহায়ক। একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করুন কারণ আপনার সামান্য ভুল আপনার শিশুর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।

পুষ্টিকর ডায়েট

গর্ভাবস্থায় মায়ের ভালো পুষ্টির প্রয়োজন হয়। তবে খেয়াল রাখা দরকার যেন অতিরিক্ত খাওয়া না হয়। অতিরিক্ত খাওয়া ওজন বাড়াতে পারে এবং স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে। এমন খাবার খেতে হবে যা পুষ্টি জোগায় এবং আসন্ন মাসগুলোর জন্য মাকে শক্তিশালী করে তোলে।

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন

পানি শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মায়ের জন্য এটি আরও বেশি দরকারী। প্রসবের সময় যে বাড়তি শক্তি প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্য পানি প্রয়োজন। পানির প্রয়োজন মেটাতে তাজা ফলের রস খেতে পারেন কিংবা পছন্দমতো রেসিপি তৈরি করতে পারেন।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ও ম্যাসাজ

শিশুর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তার জন্য সঠিক অক্সিজেন সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও আপনাকে প্রসবের সময় অনেক লম্বা সময় দম ধরে রাখতে হবে এবং গভীর শ্বাস নিতে হবে। তাই প্রসবকালীন প্রস্তুতির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। গর্ভাবস্থার তৃতীয় ট্রাইমেস্টার, অর্থ্যাৎ ৯ মাসের শেষ ৩ মাস নিয়মিত ম্যাসাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাসেজ আপনাকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত রাখতে সাহায্য করবে। এটি জয়েন্টের ব্যথা এবং পেশীর টানও প্রশমিত করবে।

যেকোন চাপকে না বলতে শিখুন বলুন

মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা যাতে মাকে প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্যারেন্টিং সংক্রান্ত বই পড়ুন, বড়দের সঙ্গে কথা বলুন, ইতিবাচক এবং সুখী মানুষদের পাশে থাকুন। - অভি/রহমান

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি  ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে ডেঙ্গুজ্বরে।

ডেঙ্গুজ্বর একটি এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে, যাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত-প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ রোগ নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জল। তিনি কাজ করছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে।

 

# ঐতিহ্যবাহী_চিকিৎসাধারা

হজমশক্তি বাড়াতে চীনা দাওয়াই

আমাদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রেরণা প্রদানের জন্য আমাদের শরীরের যাবতীয় ব্যবস্থা আন্তঃসংযুক্ত উপায়ে কাজ করে। তবে পাচনতন্ত্র আমাদের শারীরিক সুস্থতায় একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এবং প্রতিবার খাবারের টেবিলে বসে আমরা যে পছন্দগুলো করি তা এর কার্যকারিতার উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। বিশ্বজুড়ে নিরাময় ঐতিহ্যগুলো, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম, দীর্ঘদিন ধরে এই সত্যটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। টিসিএম হজমশক্তি রক্ষাকে একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে।

টিসিএম-এ পাচক স্বাস্থ্যের নীতি

হজমের ক্ষমতা রক্ষা প্রায় প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী চীনা ভেষজ সূত্রের একটি মৌলিক অংশ এবং এই একই কথা পূর্ব এশিয়ার অনেক সংস্কৃতিতে প্রযোজ্য। টিসিএম মতে, প্লীহা ও পাকস্থলী খাদ্য ও তরলকে শক্তি ও রক্তে রূপান্তরিত করে, যা তাদের জীবনীশক্তি ও সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য।

প্লীহা অত্যাবশ্যকীয় শক্তি তৈরি, চিন্তা প্রক্রিয়া, পেশীর বিকাশ ও রক্ত তৈরি নিয়ন্ত্রণ করে। আর পাকস্থলী হজমের ক্রমবর্ধমান ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। বায়োমেডিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ভূমিকাগুলো শুধুমাত্র পাচনতন্ত্র এবং এর অন্ত্রের স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং রোগ প্রতিরোধের দিকগুলো, রক্তকোষ ও প্লেটলেট গঠন, অন্তঃস্রাব ও লিভারে কার্যকারিতা, জল ও লবণ বিপাক এবং আরও অনেক কিছু যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও ভারসাম্য রাখে সেগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।

প্লীহা ও পাকস্থলীর কার্যকারিতাকে দুর্বল বা ব্যাহত করে এমন যে কোনও কিছু শুধুমাত্র হজমের ওপর  নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, বরং এ সম্পর্কিত অঙ্গ ও টিস্যুর বিকাশ, হরমোন উত্পাদন, এবং মেজাজের উপরও প্রভাব ফেলে। যদিও ব্যক্তিভেদে সংবেদনশীলতা পৃথক হতে পারে, সাধারণভাবে ক্ষতিকর খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাবার, চর্বিযুক্ত বা মশলাদার খাবার, চিনি ও অ্যালকোহল, কম রান্না করা বা ঠান্ডা খাবার। এছাড়া অপর্যাপ্ত বিশ্রাম কিংবা দুঃখ, রাগ, উদ্বেগ ও অতিরিক্ত চিন্তার মতো মেজাজের ভারসাম্যহীনতা হজমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি। টিসিএম উপযুক্ত মৌসুমী খাবারের উপর খুব জোর দেয়। বসন্ত হলো এমন কিছু পরিত্যাগ করার সময় যা আমরা শীতকালে কম কার্যকলাপ এবং ছুটিতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণে তৈরি করি। টিসিএম বসন্তকাল ও গ্রীষ্মকালে হালকা ও তিক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়, যা ঋতুর সাথে সম্পর্কিত দুট প্রধান অঙ্গ লিভার ও গলব্লাডারকে পুষ্ট করে, যাতে সারা শরীরে সুন্দরভাবে শক্তি প্রবাহিত হয়। আমরা আমাদের জীবনীশক্তি বাড়াতে মূলার তীক্ষ্ণতা এবং বীট ও গাজরের মিষ্টতাও ব্যবহার করতে পারি। টিসিএম-এ বসন্তকালে পুষ্টিঘন মাংস ও স্টার্চের ব্যবহার কমানো উপকারী বলে মনে করা হয়।

শীতল তাপমাত্রা উষ্ণ ঋতুর তুলনায় বিভিন্ন পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বাড়ায় এবং আমরা সেই অনুযায়ী শক্তিশালী এবং পুষ্টিঘন খাবার খাই। শরৎকাল মাটি ও ধাতব উপাদানগুলোর মধ্যে ছেদকে প্রতিনিধিত্ব করে। এসময় শীতকালীন স্কোয়াশ, আপেল, নাশপাতি, মূলজাত শাকসবজি, গাঢ় শাক, মাশরুম, রান্না করা শস্য, মটরশুটি ও মাংস সবই খাবার তালিকায় রাখা যায়। পাচনতন্ত্রকে ‘ঠাণ্ডাজনিত খারাপ প্রভাব’ থেকে রক্ষা করার জন্য উষ্ণ সুগন্ধযুক্ত মশলা অন্তর্ভুক্ত করাও এসময় গুরুত্বপূর্ণ। ‘ঠাণ্ডাজনিত খারাপ প্রভাব’ আমাদের অঙ্গের কার্যকারিতা এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত ও ধ্বংস করতে পারে।

টিসিএম ফর্মুলেশনে হজমের জন্য আদা

টিসিএম পদ্ধতিতে আদা একটি বহুমুখী ব্যবহারোপযোগী ভেষজ। হজমক্ষমতা রক্ষা, ঘাম সৃষ্টির মাধ্যমে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়া, ফুসফুস উষ্ণ করা, শ্লেষ্মা তরল করা ইত্যাদির জন্য ফ্রেশ বা তরতাজা আদা ও শুষ্ক আদা উভয়ই ব্যবহার করা হয়। ফ্রেশ আদা দ্রুত হজমে সহায়তা করতে পারে বা অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরকে উজ্জীবিত করতে পারে। অন্যদিকে শুকনো আদা বা আদাশুট শরীরের মধ্যাঞ্চলকে উষ্ণ করা এবং শরীরে জমা ঠাণ্ডাকে দূর করার মাধ্যমে হজমশক্তি বাড়ায়, মল নরম করে এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।

টিসিএম পদ্ধতি মতে, ফ্রেশ আদা অন্যান্য ভেষজগুলোর কাজকেও সমন্বয় করে। এটি শক্তিশালী ও কিছুটা কঠোর ভেষজগুলোতে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। এজন্য জুজুবি বা বরই ও লিকারিসের সঙ্গে আদার সংমিশ্রণ করে খেতে হবেয়। এতে মধু দেওয়া যায় আবার না দিলেও হয়। এই সংমিশ্রণটি হজমশক্তিকে রক্ষা করতে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। আদা একই সঙ্গে শরীরে অভ্যন্তরের ঠাণ্ডা দূর করে। লিকোরিস, অ্যাট্র্যাটাইলোডস ও পোরিয়ার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আদা আমাদের মেজাজ ভালো করে এবং রক্তকে পুষ্ট করতে সহায়তা করে। - রহমান

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।