আকাশ ছুঁতে চাই ৮৬
2022-08-11 18:48:22

কী থাকছে এবারের আয়োজনে

১.কবিতা ক্যাফের গল্প:  নাহিদা আশরাফী

২. গান: শিল্পী উলান থুইয়া

৩. ভাসমান নারী শ্রমিকের সুখদুঃখ

৪. আবর্জনাকে শিল্পে রূপ দিচ্ছেন ইয়ান হোং

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বুক ক্যাফের জনপ্রিয়তা থাকলেও বাংলাদেশে এই ধারণাটি খুব বেশি দিনের নয়। তবে অল্পদিনেই ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে কবিতা ক্যাফে। কবি নাহিদা আশরাফী প্রতিষ্ঠা করেছেন এই কবিতা ক্যাফের। এমন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে আজ আমরা কথা বলবো কবি নাহিদা আশরাফীর সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই। 

সাক্ষাৎকার

কবি নাহিদা আশরাফী জানালেন কবিতা ক্যাফে প্রতিষ্ঠার গল্প। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন একটি স্থানের কথা ভাবছিলেন যেখানে বসে সাহিত্য আলোচনা করা যাবে, বই পড়া যাবে আবার চা ও স্ন্যাকস খাওয়া যাবে। যেখানে কোন অর্ডার না দিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও কেউ উঠে যেতে বলবে না।

এমন একটি ইচ্ছা থেকেই তিনি কবিতা ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেন।  তবে কবিতা ক্যাফে প্রথমদিকে খুব ভালোভাবে চললেও করোনা মহামারীর লকডাউনের সময় বেশ সমস্যায় পড়ে। আর্থিক টানাপোড়েনের জন্য সেসময় অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যায়। কবিতা ক্যাফের ব্যয় সংকুলানের জন্য নাহিদা নিজের কয়েকটি অলংকার বিক্রি করে দেন। বললেন, ‘একজন নারী যখন কোন প্রতিষ্ঠান চালায় তখন অনেক মানুষ অনেক রকম গল্প ছড়ায়। কিন্তু কবিতা ক্যাফের সত্যিকারের গল্পটা আজ জানালাম।’

নাহিদা আশরাফী সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘জলধি’র সম্পাদক। ‘জলধি’ বিষয়ে তিনি জানালেন, এটি বিষয়ভিত্তিক সংখ্যার জন্য খ্যাতি পেয়েছে।

তিনি কবিতা এবং গল্প লেখেন। বেশ কয়েকটি বই সম্পাদনাও করেছেন।  ভবিষ্যতে কবিতা ক্যাফেকে আরও অনেকদূর নিতে চান নাহিদা আশরাফী।

গান: শিল্পী উলান থুইয়া

চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি খুব সমৃদ্ধ। এই এলাকার গান গেয়ে চীনের সংগীত জগতে নিজের আসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন উলান থুইয়া। ১৯৮৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ইনার মংগোলিয়ার হোরছিন গ্রাসল্যান্ডে তার জন্ম।   উলান থুইয়া চীনের ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন।  ২০১৪ সালে সিসিটিভির স্প্রিং ফেস্টিভাল গালা উৎসবে সংগীত পরিবেশন করে খ্যাতি পান।

 তিনি মঙ্গোলীয় জাতির ঐতিহ্যবাহী লোকজ সংগীতের পাশাপাশি আধুনিক চীনা গান পরিবেশন করেন। উলান থুইয়ার কণ্ঠে এখন শুনবো ইনার মঙ্গোলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিচয়বাহী একটি গান  ইয়ালু চাংপো নদী।

 

ভাসমান নারী শ্রমিকের সুখ দুঃখ

রাস্তা তৈরি, অবকাঠামো নির্মাণসহ কোন শ্রমসাধ্য কাজেই পিছিয়ে নেই নারী শ্রমিকরা। শ্রমবাজারে পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেও টিকে থাকতে হয় নারীকে। সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথেই রাজধানী ঢাকার নতুন বাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন শত শত মানুষ। জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজের সন্ধানে জড়ো হওয়া এই মানুষেরা সবাই শ্রমিক। কাজের খোঁজে জড়ো হওয়া এই শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। ভাসমান এই নারী শ্রমিকদের নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক।

কারো কাঁধে কোদাল, কারো হাতে থাকে কাস্তে। রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে ভোর থেকেই লেগে থাকে বিপুল মানুষের ভীড়। কেউ আবার ভবন ঢালাইয়ের টুকরি নিয়ে শামিল হচ্ছেন জমায়েতে। কারো কাঁধে গামছা, রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে কয়েকজনের মাথায় দেখা গেল মাথাল। সকাল সাতটার মধ্যে স্থানটিতে জড়ো হন অন্তত হাজারখানেক মানুষ।

প্রতিদিন ভোরে যে হাজারখানেক মানুষ জড়ো হন নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে, তাঁদের সবাই ভাসমান শ্রমিক। দৈনিক চুক্তিতে কাজের খোঁজে সেখানে জড়ো হন তাঁরা। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। পাঁচজন থেকে শুরু করে ২০ জন পর্যন্ত ছোট ছোট দলে চলে অপেক্ষার পালা।

এই জমায়েতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি কাজের সন্ধানে আসেন নারী শ্রমিকরাও।

তাঁরা রান্নাবান্না, ইট, বালু, সিমেন্ট ওঠানো-নামানো, টাইলস পরিষ্কার, ভবন ঢালাই, বাসা ধোয়ামোছা, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, মাটি কাটা, ইট পরিষ্কার ও ভাঙানো, টাইলস পুডিং পর্যায়ের সব কাজ করেন।

ভিড় থেকে পছন্দ অনুযায়ী শ্রমিক বাছাই করে চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়ে যান নিয়োগকর্তারা। দৈনিক ভিত্তিতে এসব শ্রমিকের গড় মজুরি ধরা হয় ৫০০ টাকা।

 

 

আবর্জনাকে শিল্পে রূপ দিচ্ছেন ইয়ান হোং

ফেলে দেয়া বস্তু থেকে শিল্পকর্ম তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কারুশিল্পী নারী ইয়ান হোং। চীনের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অলংকার তৈরি করে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। বিভিন্ন পানীয়র ফেলে দেয়া ক্যান থেকে তিনি এই শিল্প সৃষ্টি করেছেন। তার কথা শুনবো প্রতিবেদনে।

ফেলে দেয়া বেভারেজ ক্যান থেকে যে এমন শিল্প সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব একথা ইয়ান হোং এর তৈরি অলংকার না দেখলে বিশ্বাস হবে না।  দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছাংদু শহরের একজন কারুশিল্পী ইয়ান হোং। তিনি ঐতিহ্যবাহী চীনা রীতির বিভিন্ন অলংকার ও ফ্যাশন অর্নামেন্টস তৈরি করেন। আর এগুলো তিনি তৈরি করেন ফেলে দেয়া ড্রিংকস ক্যান থেকে।

অ্যালুমিনিয়াম ক্যান, কপার শিট, পালক, কাগজ ইত্যাদি বস্তু ব্যবহার করে তিনি প্রাচীন যুগের অলংকারের আদলে ১০০ এর বেশি ফ্যাশন এক্সেসরিজ তৈরি করেছেন। তার একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো পিকিং অপেরার ফিনিক্স মুকুট তৈরি করা। এটি তৈরি করতে তার ১৩ দিন লেগেছে। এটি ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা এনে দেয় ইয়ানকে। ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম বিলিবিলিতে তার অনুসারীর সংখ্যা ৭ লাখ ৭০ হাজার। ইউ টিউবে তার অনুসারী ৭২ হাজার। তিনি তার কাজ বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রেখেছেন, মিলান ফ্যাশন উইকেও অংশ নিয়েছেন।

ইয়ান মনে করেন চীনের ঐতিহ্যবাহী অলংকারকে অনেক মানুষের কাছে পৌছে দেয়া এবং এটাকে বিদেশেও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য কাজ করছেন তিনি।

 

আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

ভাসমান নারী শ্রমিকের সুখদুঃখ: প্রতিবেদন, তানজিদ বসুনিয়া

আবর্জনাকে শিল্পে রূপ দিচ্ছেন ইয়ান হোং: প্রতিবেদন, শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া