চীনা মরিচের ঝাল...
2022-08-10 14:30:43

চীন বিশ্বের বৃহত্তম মরিচ উৎপাদক এবং ভোক্তা দেশ। চীনে মরিচ চাষের জমির আয়তন বিশ্বের মোট আয়তনের ৪০ শতাংশ। জানা গেছে, এখন চীনে ২০ লাখ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। তা সব শাকসবজি চাষের আয়তনের ১২ শতাংশ। বার্ষিক মরিচ উৎপাদনের পরিমাণ ৪ কোটি টন। চীনের ২৮টি প্রদেশে মরিচ চাষ হয় এবং এর মধ্যে কুই চৌ ও হু নানসহ ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ মরিচ উৎপাদন এলাকা রয়েছে। কুই চৌ, চিয়াংসিসহ ৮টি প্রদেশে মরিচ চাষের জমির আয়তন ১০ লাখ মু-এর (৬৭ হাজার হেক্টর) বেশি।

 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে হু নান প্রদেশে মরিচ চাষের জমির আয়তন ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর। চাষের এলাকা বেশি হলেও তা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় নয়, বরং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

 

আর চীনে সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয় কুই চৌ প্রদেশে। প্রদেশটির মরিচ চাষের জমির আয়তন ৩.৩ লাখ হেক্টরের বেশি। কুই চৌতে চাষ করা হয় ২০০ ধরনের মরিচ এবং  প্রদেশের চুন ই শহরের মরিচ সবচেয়ে বিখ্যাত। কুই চৌর ৪০ শতাংশ মরিচ চুন ই শহরে চাষ করা হয়। চীনের মরিচের ১২ শতাংশ চুন ই শহর থেকে আসে। চুন ইও চীনের ৭টি মরিচ উৎপাদন এলাকার প্রথম স্থানে রয়েছে।

 

সি ছুয়ানের খাবারের ঝালের কথা সবাই জানে। সেখানে চাষের তুলনায় মরিচের ব্যবহার অনেক বেশি। সি ছুয়ান প্রদেশের স্থানীয় আবহাওয়া মরিচ চাষের জন্য এত উপযুক্ত নয়। তাই গ্রীষ্মকালে উত্তর চীন, আর শীতকালে দক্ষিণ চীন থেকে মরিচ আমদানি করে সি ছুয়ান। অবশ্যই সি চুয়ানেও মরিচ চাষ করা হয়। সেখানকার বার্ষিক উৎপাদন পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৪ হাজার টন।

 

হ্য নান প্রদেশের শাং ছিউ শহরের থা চেং জেলার সানইং নামের এক ধরনের মরিচ দেশব্যাপী বিখ্যাত।  জেলায় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে এ ধরনের মরিচ চাষ করা হয়। ১৯৯৯ সালে জেলাটিকে শান ইং মরিচের জেলা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ২০১৯ সালে প্রতিমু (০.০৬ হেক্টর) জমিতে উৎপাদিত হয় ৪৩২ কেজি শুকনো মরিচ এবং প্রতি-কেজির দাম ছিল ১৫ ইউয়ান। বার্ষিক উৎপাদন পরিমাণ মূল্য ছিল ২৭০ কোটি ইউয়ানের বেশি। হ্য নান প্রদেশের মরিচ চীনের অন্য জায়গা যেমন হুনান, সি ছুয়ান, হুপেইসহ মরিচের বড় ভোক্তা প্রদেশেও বিক্রি হয়। এখানকার মরিচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও বিক্রি হয়।

 

নিং সিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত এলাকার পেং ইয়াং জেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। এ জেলা উত্তর-পশ্চিম চীনের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র। সিছুয়ান, কুই চৌ ও হু নান প্রদেশের তুলনায় নিং সিয়ায় মরিচ চাষের এলাকা বড় নয়, তবে সেখানে বিশেষ বাজার পদ্ধতি গড়ে তুলা হয়েছে। স্থানীয়রা মূলত শিং মরিচ নামের এক ধরনের বিদেশি মরিচ চাষ করেন। আর এটা পরে বিদেশেও বিক্রি করা হয়।

 

সিনচিয়াংয়ে রাতের চেয়ে দিন বড়। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যও অনেক। ফলে এটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী একটি জায়গা। এখানে মরিচের উৎপাদন পরিমাণ বেশি  এবং তাদের গুণগত মানও ভাল। সিনচিয়াং এখন চীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি শুকনো মরিচ উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখন সিনচিয়াংয়ে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। সেখানে বার্ষিক শুকনো মরিচের উৎপাদন পরিমাণ ২.৫ লাখ টনের বেশি। তা দেশের মোট শুকনো মরিচ উৎপাদন পরিমাণের ৫ ভাগের এক ভাগ।

 

জানা গেছে, সিনচিয়াংয়ের একজন কর্মী দিনে ২০ কেজি মরিচ বাছাই করতে পারেন এবং প্রতি-কেজিতে তিনি ৩ ইউয়ান আয় করেন। তবে কর্মী নিয়োগ খুব কঠিন, তাই এখন সিনচিয়াংয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে মরিচ চাষ ও তুলা হয়।

 

ইন্টারনেটে চীনের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের মরিচ খাওয়ার পরিমাণের তালিকা দেখা যায়। এর মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে আছে হু নান প্রদেশের মানুষেরা। আর তালিকার সর্বনিম্নে রয়েছে ফু চিয়ান প্রদেশের মানুষেরা। তবে ফু চিয়ান প্রদেশও চীনের বিখ্যাত একটি  মরিচ উৎপাদন এলাকা। ফু চিয়ানের মানুষেরা মরিচ বেশ না খেলেও অনেক বেশি মরিচ চাষ করে। ফু চিয়ানের গ্রীনহাউস প্রযুক্তি  উন্নত বলে শীতকালে মরিচ ফু চিয়ানের মরিচ বাজারে প্রবেশ করে।

 

শীতকালে দক্ষিণ চীনের প্রদেশ যেমন ফু চিয়ান ও হাই নানের আবহাওয়া উষ্ণ হয় বলে সেখানে মরিচ চাষ হতে পারে। আর ফু চিয়ান প্রদেশ কয়েকটি মরিচ ভোগকারী প্রদেশের কাছাকাছি বলে প্রথম দিন তুলা মরিচের তার পরের দিন ওই প্রদেশগুলোতে ডেলিভারি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। (শিশির/এনাম/রুবি)