তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের শ্বেতপত্র প্রকাশ; নতুন যুগে চীনের পুনর্মিলনের ব্যাখ্যা
2022-08-10 16:06:41

আগস্ট ১০: চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয় আজ (বুধবার) "নতুন যুগে তাইওয়ান সমস্যা এবং চীনের পুনর্মিলন" শীর্ষক একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে।

তাইওয়ান চীনের অংশ—এই বাস্তবতা, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) ও চীনা জনগণের সংকল্প এবং জাতীয় পুনর্মিলনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ, এবং নতুন যুগে চীনা সরকার ও সিপিসির অবস্থান ও নীতির উপর জোর দেওয়ার জন্য শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে।

তাইওয়ান প্রাচীনকাল থেকেই চীনের অংশ। শ্বেতপত্র অনুসারে, ইতিহাস ও আইনানুসারে এই দাবীর একটি শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন ২৭৫৮ হল একটি রাজনৈতিক দলিল, যা ‘এক চীননীতি’-কে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে এর আইনি কর্তৃত্বে সন্দেহ প্রকাশ করার কোনো উপায় নেই। এটি বিশ্বব্যাপীও স্বীকৃত হয়েছে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়, ‘এক চীননীতি’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বজনীন ঐকমত্যের প্রতিনিধিত্ব করে; এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, "আমরা এক চীন, এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। এটি ইতিহাস এবং আইন দিয়ে সমর্থিত একটি অবিসংবাদিত সত্য। তাইওয়ান কখনই একটি রাষ্ট্র ছিল না; চীনের অংশ হিসাবে এর অবস্থানও অপরিবর্তনীয়।"

সিপিসি তাইওয়ান সমস্যার সমাধান এবং চীনের সম্পূর্ণ পুনর্মিলন বাস্তবায়িত করার ঐতিহাসিক মিশনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর দৃঢ় নেতৃত্বে, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের লোকেরা প্রণালীজুড়ে উত্তেজনা কমাতে একসাথে কাজ করেছে। শ্বেতপত্র অনুসারে, তাঁরা শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছে এবং দুই তীরের সম্পর্কের উন্নতিতে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, সিপিসির নির্দেশনায়, গত সাত দশকে আন্তঃপ্রণালী সম্পর্কের ক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগহীনতার অবসান ঘটার পর থেকে। বর্ধিত আদান-প্রদান, বৃহত্তর সহযোগিতা এবং ঘনিষ্ঠ মিথস্ক্রিয়া প্রণালীজুড়ে বিশেষ করে তাইওয়ানের মানুষের জন্য বাস্তব সুবিধা বয়ে এনেছে। এটি সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে যে, দুই তীরের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা পারস্পরিক কল্যাণকর।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, "সম্পূর্ণ জাতীয় পুনর্মিলনের বাস্তবায়ন চীনা জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির দ্বারা চালিত হয় এবং আমাদের জাতীয় পুনরুত্থানের গতি ও পরিস্থিতি এর দ্বারা নির্ধারিত হয়। এর আগে আমরা লক্ষ্য অর্জনের এতো কাছাকাছি, আত্মবিশ্বাসী, বা সক্ষম ছিলাম না। সম্পূর্ণ জাতীয় পুনরুজ্জীবনে আমাদের লক্ষ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য।”

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতি - বিশেষ করে চার দশকের সংস্কার, উন্মুক্তকরণ এবং আধুনিকীকরণের মহান সাফল্যগুলো তাইওয়ান সমস্যার সমাধান এবং সম্পূর্ণ জাতীয় পুনর্মিলনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।

ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির কর্মকাণ্ডের ফলে আন্ত-প্রণালী সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়েছে, সম্ভাবনা ক্ষুন্ন হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের সম্ভাবনা সীমিত করেছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বাধা অবশ্যই দূর করতে হবে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বহিরাগত বিভিন্ন শক্তি বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডকে উত্সাহিত ও প্ররোচিত করেছে; এগুলো তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের উত্তেজনা ও সংঘর্ষকে তীব্রতর করেছে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষুন্ন করেছে। এটি শান্তি, উন্নয়ন এবং জয়-জয় সহযোগিতার অন্তর্নিহিত বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে চলে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যায়।

বহিরাগত শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য কিছুই বয়ে আনবে না। চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাইওয়ানকে ব্যবহার করার অপচেষ্টাও ব্যর্থই হবে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ইতিহাসের চাকা জাতীয় পুনঃএকত্রীকরণের দিকে এগিয়ে চলেছে এবং এটি কোনো ব্যক্তি বা কোনো শক্তির কারণে বন্ধ হবে না।

শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন এবং "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" তাইওয়ান প্রশ্নের সমাধানের মৌলিক নীতি এবং জাতীয় পুনর্মিলন বাস্তবায়নের সর্বোত্তম পন্থা। চীনা প্রজ্ঞাকে মূর্ত করে, একে অপরকে আলিঙ্গন করতে হবে। পুনর্মিলন তাইওয়ানের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্যও সহায়ক।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, “শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন বাস্তবায়ন করতে চাইলে, আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানের নিজস্ব স্বতন্ত্র সামাজিক ব্যবস্থা এবং মতাদর্শ রয়েছে। 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থা' নীতি হল এই সমস্যার সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ভিত্তিতে সদিচ্ছা প্রদর্শন করে, তাইওয়ান প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় এবং পারস্পরিক সুবিধা প্রদান করে।"

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, "আমরা শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য বিশাল স্থান তৈরি করতে প্রস্তুত; কিন্তু আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো অবকাশের সুযোগ দেবো না।“

"আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব। তবে, আমরা শক্তির ব্যবহার ত্যাগ করব না এবং আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এটি বহিরাগত হস্তক্ষেপ এবং সমস্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করার জন্য। কোনোভাবেই এটি তাইওয়ানে আমাদের সহযোগী চীনাদের টার্গেট করে না। বাধ্যতামূলক পরিস্থিতিতে শক্তি প্রয়োগই হবে শেষ অবলম্বন”—শ্বেতপত্রে যোগ করা হয়।

এতে বলা হয়, “তাইওয়ানের ভবিষ্যত চীনের পুনঃএকত্রীকরণের মধ্যে নিহিত, এবং তাইওয়ানের জনগণের মঙ্গল চীনা জাতির পুনরুত্থানের ওপর নির্ভরশীল। জাতীয় পুনঃএকত্রীকরণ এবং পুনরুত্থানের জন্য আমরা তাইওয়ানে আমাদের সহযোগী চীনাদের সাথে হাত মেলাব।"

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, “একবার ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’-এর অধীনে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন অর্জিত হলে, এটি চীনের জন্য আরও অগ্রগতি এবং জাতীয় পুনর্জাগরণ অর্জনের জন্য নতুন ভিত্তি স্থাপন করবে। একই সময়ে, এটি তাইওয়ানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশাল সুযোগ তৈরি করবে এবং তাইওয়ানের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে আসবে।”

শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ পুনঃএকত্রীকরণ কেবল চীনা জাতির জন্যই নয়, সমস্ত মানুষ এবং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণকর। (ইয়াং/আলিম/ছাই)