বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সাক্ষাত্
2022-08-08 13:47:45

অগাস্ট ৮: গতকাল (রোববার) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা সফররত চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সাক্ষাত্ করেছেন।

ওয়াং ই প্রথমে শেখ হাসিনাকে চীনের নেতৃবৃন্দের আন্তরিক শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। তিনি বলেন যে, চীন ও বাংলাদেশের দৃঢ় মৈত্রী দু’দেশের পুরনো প্রজন্মের নেতারা তৈরি করেছেন এবং এর একটি গভীর ঐতিহাসিক, সামাজিক ও জনভিত্তি রয়েছে। দু’পক্ষ সর্বদা একে অপরকে বিশ্বাস, সম্মান ও সমর্থন করেছে। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবার্ষিকীতে ভিডিও অভিনন্দনবার্তা বিনিময় করেছেন; যা চীনের চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব প্রচার ও উন্নয়নের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক সংকেত প্রকাশ করে। চীন সবসময়ই বাংলাদেশের একটি নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবে, বাংলাদেশের নিজের জাতীয় অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি উন্নয়নের পথ অনুসরণে অব্যাহত সমর্থন দেবে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে ভূমিকা পালন করবে। চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের ‘ভিশন- ২০৪১’-এর মধ্যে সংযোগ বাড়াতে চায়। সেই সঙ্গে,  উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ও উন্নত প্রযুক্তি শেয়ার করতে, অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন শক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে ইচ্ছুক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াং ই’র মাধ্যমে চীনা নেতাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, চীনের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার পর তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল হলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যান, যা বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুইবার চীন সফর করেছিলেন এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক সুসংহত ও উন্নয়নে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ দু’দেশের সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দেয়, শান্তি ও অভিন্ন উন্নয়ন বজায় রাখার ক্ষেত্রে চীনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। ঢাকা আশা করে যে, দু’দেশের পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা আরও গভীর হবে এবং দারিদ্র্য হ্রাস ও দারিদ্র্যমোচনে চীনের সফল অভিজ্ঞতা থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করবে ঢাকা। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলবে, কিছু দেশের উস্কানিমূলক আচরণ প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি আশা করেন, দুই দেশ শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল উন্নয়নের পরিবেশ বজায় রাখবে।

ওয়াং ই বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের প্রকাশ্যে ‘এক-চীন নীতি’ এবং চীনের বৈধ অবস্থানের প্রতি সমর্থন দেওয়ার প্রশংসা করেন। ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন আচরণ চীনের সার্বভৌমত্বকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়মকেও লঙ্ঘন করেছে। চীনের পাল্টা ব্যবস্থা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ভূভাগের অখণ্ডতা রক্ষার লক্ষ্যে এবং তাইওয়ান প্রণালীর প্রকৃত শান্তি বজায় রাখা, এশিয়া ও বিশ্বের শান্তি বজায় রাখার জন্যে।

সফরে ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। জনাব মোমেন বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে চীনের শক্তি ও কণ্ঠস্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে চীনের পাশে থাকবে।

দু’পক্ষ একমত হয় যে- অবকাঠামো, অর্থনৈতিক শিল্প এলাকা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা, ৫জি, পরিচ্ছন্ন জ্বালানিসম্পদ সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ বিনিময় ও সমন্বয় বজায় রাখবে।

ওয়াং ই এবং আব্দুল মোমেন অবকাঠামো, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং সমুদ্র-সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। (জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)