ক্রীড়াপ্রেমী সি চিন পিং
2022-08-07 20:22:15

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর শখ কি? তিনি সত্যিই একজন ক্রীড়াপ্রেমী। কিশোর বয়সে তিনি সবসময় ফুটবল খেলেছেন, স্কি করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁর সাঁতার কাটা এবং পাহাড়ে ওঠার অভ্যাস তৈরি হয়। তিনি ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, বক্সিংসহ বিভিন্ন খেলা পছন্দ করেন। তিনি আইস হকি, স্পিড স্কেটিংসহ বিভিন্ন তুষার ও বরফ খেলাও অনেক ভালোবাসেন। গভীর রাত হলেও তিনি টিভিতে প্রচারিত ক্রীড়া অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করেন। আজ আপনাদেরকে ‘ক্রীড়াপ্রেমী’ সি চিন পিং-এর পরিচয় তুলে ধরবো।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সি চিন পিং তাঁর লেখাপড়া করা বেইজিং বা ই উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। খেলার মাঠে ফুটবল প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষার্থীদেরকে তিনি বলেন, দেখো, এখন আমার শারীরিক অবস্থা এত ভালো; তার কারণ ছোটবেলায় খেলাধুলা করার সুফল। ৫০ বছর আগে আমি এখানে ফুটবল খেলেছিলাম, তখন এই খেলার মাঠ এত সুন্দর ছিল না।

ছোটবেলা থেকে সি চিন পিং ক্রীড়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। ফুটবলের পাশাপাশি তিনি তুষার ও বরফের খেলাও অনেক ভালোবাসেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বেইজিংয়ের নান লুও কু সিয়াং রাস্তা পরিদর্শনের সময় ছোটবেলায় সেখানে থাকার কথা স্মরণ করে বলেন, তখন স্কুলের ক্লাস শেষে তিনি বাসায় ফেরার পর পরই কাছাকাছি হ্রদে স্কি করতে যান। তখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি এবং তাঁর ছোট ভাই দু’জনই স্কি করতে পছন্দ করতেন। তবে শুধু একটি স্কি জুতা কেনার টাকা ছিল। তখন তিনি ছোট ভাইকে স্কি জুতা কেনার সুযোগ করে দেন।

ছোটবেলায় ক্রীড়ার প্রতি ভালোবাসা সি চিন পিং-এর সারা জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে কোনো স্থানে কাজ করা হোক না কেন, তিনি সবসময় ক্রীড়া অনুরাগী ছিলেন। যেমন যখন তিনি হ্য পেই প্রদেশের চেং তিং জেলার সিপিসি সম্পাদক ছিলেন, প্রত্যেকবার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকলে, যখন তাঁর সময় থাকতো, তিনি নিশ্চয়ই টিভির সামনে বসে খেলা দেখেন। তখন টিভি জনসাধারণের পরিবারে এত জনপ্রিয় ছিল না, স্থানীয় লোকেরাও সবসময় তাঁর অফিসে গিয়ে একসাথে টিভিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দেখত।

চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের চাং চৌ শহর হলো চীনের নারী ভলিবল দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে হয়তো অনেকেই জানে না, সি চিন পিং চীনা নারী ভলিবল দলের চাং চৌ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে অনেক সাহায্য করেছেন।

গত শতাব্দীর ৭০ দশকে, চাং চৌ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল চীনের প্রথম ভলিবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে গত শতাব্দীর শেষ নাগাদ, কেন্দ্রের স্টেডিয়াম অনেক পুরানো হয়ে যায়। যা প্রশিক্ষণের চাহিদা মেটাতে পারে না। হোস্টেলের অবস্থাও অনেক খারাপ হয়। ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে, যখন সি চিন পিং ফু চিয়ান প্রদেশের সিপিসি’র উপশাখা সম্পাদক ছিলেন, তখন তিনি চাং চৌ ভলিবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ঠিক সেদিন তিনি নতুন স্টেডিয়াম এবং হোস্টেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ২০০১ সালে পুনর্নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়, ২০০৩ সালে নতুন স্টেডিয়াম চালু হয়। তখন থেকে চীনা নারী ভলিবল দল প্রতিবছর সেখানে প্রশিক্ষণ নেয়।তিনি গভর্নরের বিশেষ তহবিল থেকে নারী ভলিবল দলের জন্য ৫ লাখ ইউয়ান ভর্তুকি দেন, যাতে নারী ভলিবল দলের সমস্যা দূর করা যায়। তখন থেকে নারী ভলিবল দলের অবস্থা অনেক উন্নত হয়, ফলাফলও অনেক ভালো হয়।

জনগণের মধ্যে ক্রীড়ার গুরুত্ব সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে সি চিন পিং-এর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তিনি সবসময় জনগণের ক্রীড়াখাতের উদ্যোগ গ্রহণকারী এবং বাস্তবায়নকারী। যেমন তিনি ‘৩০ কোটি চীনা মানুষের তুষার ও বরফ খেলায় অংশগ্রহণের’ উদ্যোগ উত্থাপনকারী। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি হ্য পেই প্রদেশের চাং চিয়া খৌ শহরে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ পরিদর্শনের সময় বলেন, চীন শীতকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল চীনের তুষার ও বরফ খেলার দ্রুত উন্নয়ন জোরদার করা, চীনাদের সবার শরীরচর্চার ব্যাপক অনুশীলন বাস্তবায়ন করা।

সি চিন পিং বলেন, সবার শরীরচর্চা হল জনগণের শারীরিক অবস্থা উন্নত করার পদ্ধতি। সুস্বাস্থ্য জীবনের ভিত্তি ও নিশ্চয়তা। জনগণের সুস্বাস্থ্য হলো সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা প্রত্যেক মানুষের সুখী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখন চীনাদের শরীরচর্চার চেতনা গড়ে উঠেছে।