প্রিয় বন্ধুরা, হয়ত অনেকেই চীনের ইয়াংসি নদীর কথা জানেন। তবে আপনারা কি জানেন এশিয়ার দীর্ঘতম এই নদীর উত্স কোথায়? তা হল চীনের ছিংহাই প্রদেশ। গ্রীষ্মকালে ছিংহাই-এর দৃশ্য অনেক সুন্দর। সেখানে উঁচু পাহাড়, বড় বড় নদী, ঈগল ও তুষার-চিতাবাঘ তৈরি করেছে ছিংহাই-এর বিশেষ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। চলুন আজ আপনাদেরকে ছিংহাই প্রদেশ ভ্রমণ করে দেখাবো, সেখানকার উন্নয়ন সম্পর্কে জানাবো।
ছিংহাই হল চীনের ইয়াংসি নদী, হলুদ নদী এবং লানছাং নদীর উত্সস্থল। প্রতি বছর নিম্ন অববাহিকার জন্য ৬০ বিলিয়ন ঘনমিটার পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ করে। একে চীনের ‘তিন নদীর উত্স’ এবং ‘চীনা জাতির জলাধার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুইবার ছিংহাই পরিদর্শন করেছিলেন। দুই বারই তিনি ছংহাই-এর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন।
২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে সি চিন পিং বলেছিলেন: ছিংহাই-এর বৃহত্তম মূল্য হল প্রকৃতি। বৃহত্তম দায়িত্ব হল প্রকৃতি, বৃহত্তম সুযোগও প্রকৃতি। ২০২১ সালের জুন মাসে সি চিন পিং বলেছিলেন: ছিংহাই-এর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা হল ‘দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার’। পরিচ্ছন্ন পানি ও সবুজ পাহাড় হল সোনার পাহাড় ও রূপার পাহাড়। তাই যথাযথভাবে ছিংহাইয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
ছিংহাই প্রদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিভাগ ‘প্রাকৃতিক জানালা’ নামে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাকৃতিক অবস্থা পরিচালনা করে। ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে সি চিন পিং ছিংহাই পরিদর্শনের সময় এই ‘প্রাকৃতিক জানালা’ ব্যবস্থার মাধ্যমে ‘তিন নদীর উত্সের’ প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ অবস্থা জানতে পারেন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রকৃতির প্রকৃত অবস্থা জানতে হবে। বর্তমানে স্থানীয় আংসাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সর্বত্র প্রাণচঞ্চল অবস্থা দেখা যায়। প্রাকৃতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ স্থান ২০১৬ সালের কয়েকটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতাধিক। সব সূচক দ্রুত হিসাব করে বিশ্লেষণ করা যায়। বিশ্লেষণের ফলাফল দিয়ে স্থানীয় আংসাই গ্রামের ১৫১৬জন প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মীকে কাজের পরামর্শ দেওয়া যায়।
আংসাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের প্রাকৃতিক পরিচালনা কাজের অগ্রগতি চীনের ছিংহাই প্রদেশের মালভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের একটি উদাহরণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছিংহাই প্রদেশ অব্যাহতভাবে পাহাড়, নদী, বন, জমি, হ্রদ, ঘাস, বরফের ব্যবস্থাগত পরিচালনা জোরদার করেছে। ‘প্রাণের পথ’ স্থাপন করেছে, যাতে মালভূমির বন্যপশুগুলো নিরাপদে স্থানান্তর নিশ্চিত করা যায়। হ্রদের মাছ ধরা বন্ধ করে হ্রদের মাছের স্বাভাবিক অবস্থা লালন করা, বৃক্ষরোপণ করা, সক্রিয়ভাবে সবুজ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা যায়। স্থানীয় হিমবাহ দর্শনীয় স্থান বন্ধ করা হয়েছে। যাতে মানুষের ক্ষতিকর আচরণ রোধ করা যায়।
এখন সুন্দর ছিংহাই প্রাকৃতিক পরিবেশের সুন্দর চিত্র দেখা যায়। ২০ হাজারেরও বেশি প্রাকৃতিক সংরক্ষণ কর্মী ‘তিন নদীর উত্সস্থল’ রক্ষা করছে। স্থানীয় তিব্বতি নীলগাইএর সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি। ছিংহাই হ্রদের পাখির ধরণ আগের ১৮৯টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৮টিতে। ২০২১ সালে ছিংহাইয়ের শ্রেষ্ঠ বায়ুর দিনের হার ছিল ৯৫ শতাংশ। ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ মানের পানির হার শতভাগ।
২০২১ সালের জুন মাসে সি চিন পিং চীনের ছিংহাই প্রদেশের সি নিং শহরের ওয়েন থিং সিয়াং কমিউনিটি পরিদর্শন করেছেন। এখানে বসবাস করা লোকজনের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে তিব্বতি, হুই ও মঙ্গোলিয়াসহ ১৮টি সংখ্যালঘু জাতির জনসংখ্যা ১৮০০ জনেরও বেশি।
সি চিন পিং অবসর বয়স্কদের হস্তলিপি চর্চা, গানের মহড়া দেখেছেন, কমিউনিটিতে বয়স্কদের জন্য খাওয়া-দাওয়া ও চিকিত্সা সেবার অবস্থা জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, কমিউনিটিকে জাতীয় ঐক্য ও অগ্রগতি বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে দেখতে হবে, যৌথভাবে জাতীয় ঐক্যের সুষম বাসস্থান স্থাপন করতে হবে।
বর্তমানে ছিংহাই প্রদেশ অব্যাহতভাবে জাতীয় ঐক্য ও অগ্রগতির দৃষ্টান্তমূলক প্রদেশের নির্মাণ সম্প্রসারণ করছে। পুরো প্রদেশের ৮টি শহরে সার্বিকভাবে জাতীয় ঐক্য ও অগ্রগতির দৃষ্টান্তমূলক এলাকা স্থাপন করেছে। পুরো প্রদেশ আরো ভালো ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)