সারের দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কা কৃষকের
2022-08-04 19:25:53

আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্ব বাজারে দর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভর্তুকি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়েছে সরকার।

সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকেই নতুন দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ইউরিয়া সার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কিনতে কৃষকদের দিতে হচ্ছে ২২ টাকা, যা এতোদিন ছিল ১৬ টাকা। আর ডিলাররা ওই সার পাচ্ছেন প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে, যা আগে তারা ১৪ টাকায় কিনতেন।

মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ইউরিয়া সারের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এবং চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায়” সরকার দাম পুনঃনির্ধারণ করেছে।

এই হারে দাম বাড়ানের ফলে প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের ব্যবহার বিবেচনায় ভর্তুকি থেকে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে সরকার।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দর ৮১ টাকা। ফলে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

এদিকে চাহিদার বিপরীতে দেশে সব রকম সারের ‘পর্যাপ্ত মজুদ’ রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, আমন মৌসুমে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন, বিপরীতে বর্তমানে মজুত রয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন, যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ১ লাখ টন বেশি। অন্যান্য সার যেমন টিএসপির আমন মৌসুমে চাহিদা ১ লাখ ১৯ হাজার টন, বিপরীতে মজুত ৩ লাখ ৯ হাজার টন, ডিএপির চাহিদা ২ লাখ ২৫ হাজার টন, বিপরীতে মজুত ৬ লাখ ৩৪ হাজার  টন এবং এমওপির চাহিদা ১ লাখ ৩৭ হাজার টন, বিপরীতে মজুত রয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টন।

মজুত পর্যাপ্ত থাকলেও সারের দাম বাড়ায় অসন্তুষ্ট প্রান্তিক চাষীরা। হঠাত দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়বে বলে মনে করেন তারা।  

টাংগাইলের মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি এলাকার কৃষক সোলায়মান খন্দকার চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, “হঠাৎ করে ইউরিয়ার দাম বাড়ছে। আমাদের জন্য সমস্যা । এতো দাম দিয়ে তো আমরা কিনতে পারবো না”।

একইসুরে কথা বললেন কৃষক নারায়ন চন্দ্র। তিনি জানান, “দাম বাড়ায় আমাদের খরচ বাইড়া গেল। এখন সমস্যা বাড়তি খরচে আবাদ করা লাগবো” ।

সবজি চাষী সবুর মিয়া জানান, “অহন ক্ষেতে আবাদ করতে ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। সবজি আবাদ করতে অনেক টাকা লাগবো”।

এদিকে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর ফলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী

 ‘সরকার ইউরিয়া সারের সুষম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে প্রথমে ২৫ টাকা (২০০৯ সালে), এবং পরে ২০১৯ সালে ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে, ডিএপির ব্যবহার বাড়ার ফলে ভেবেছিলাম ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমবে, কিন্তু কমেনি।’

মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমলে দেশেও সারের দাম কমানো হবে।

সম্পাদনা –সাজিদ রাজু