আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৮৫
2022-08-04 17:59:29

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৮৫

 

১. বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন বিশ্বপর্যটক নাজমুন নাহার

২. সাক্ষাৎকার : ‘নারীদের সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে’

৩.কাঁকড়া চাষে সমৃদ্ধি আনলেন বুদ্ধিমতী চু নিংনিং

৪. গান: একসঙ্গে চীনা স্বপ্ন গড়ে তুলি।

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।

থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে। সাধারণত মনে করা হয় এটি পুরুষের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু বাঙালি একজন নারীও যে বিশ্ব পর্যটক হতে পারেন, অ্যাডভেঞ্চার করতে পারেন সেটি প্রমাণ করেছেন বিশ্ব পর্যটক নাজমুন নাহার।

বদ্ধ ঘরে না থেকে জগৎটাকে ঘুরে দেখার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্ব দরবারে প্রতিনিয়ত তুলে ধরছেন নাজমুন নাহার। বিস্তারিত প্রতিবেদনে

বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন বিশ্বপর্যটক নাজমুন নাহার

বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম নারী পরিব্রাজক, যিনি এরই মধ্যে বিশ্বের ১৫৫ টি দেশ ভ্রমণ করার গৌরব অর্জন করেছেন। ১৫৫ তম দেশ তাজিকিস্তান ভ্রমনের মধ্য দিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন নাজমুন নাহার। শুধু তাই নয়,  শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে সর্বোচ্চ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন এই সাহসী নারী।

গত ২১ বছর ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের এই লাল-সবুজের পতাকাকে বহন করে নাজমুন নাহার ছুটে চলেছেন পৃথিবীর এক দেশ থেকে আরেক দেশ। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এভাবেই গৌরবের সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকেও তিনি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। 

 ২০০০ সালে প্রতিবেশি দেশ ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে 'ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাঁর প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। এর পর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দেশ ভ্রমণ করে চলেন তিনি। ২০১৮ সালে শততম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক অর্জন করেন। 

তার এই দীর্ঘ বিশ্ব অভিযাত্রার পথটি এতোটা মসৃণ ছিল না।  বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তবুও থেমে যায়নি পথচলা।

তার এই বিশ্ব অভিযাত্রায় বিভিন্ন দেশের লক্ষাধিক শিশুর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো লাল সবুজের বাংলাদেশকে। মানুষের মাঝে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয়া,পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা,  বাল্য বিয়ে বন্ধসহ তরুণদের বিশ্বজয়ের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন এই নির্ভিক নারী।

নাজমুন নাহার তাঁর কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে 'পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড',  পিস রানার অ্যাওয়ার্ড, মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।

 পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় সম্মাননা উইমেন ওয়ারিয়র অ্যাওয়ার্ড, ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ এওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননাসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন নাজমুন নাহার। 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নাজমুন নহার জানিয়েছেন অনেক অভিজ্ঞতার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

নারীকে সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে: নাজমুন নাহার

সাক্ষাৎকার:

বিশ্বপর্যটক নাজমুন নাহার সাক্ষাৎকারে তার জীবনের চমকপ্রদ সব অ্যাডভেঞ্চারের কথা তুলে ধরেন। তিনি একুশ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করছেন। বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। ইথিওপিয়া কেনিয়ার সীমান্তে ভয়ংকর অরণ্য পাড়ি দিয়েছেন। তাজিকিস্তানে দেখেছেন নারীদের অংশগ্রহণে বিশেষ বাজার এবং শিল্পসামগ্রীর প্রদর্শনী।

 চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন তিনি। বেইজিং, কুনমিং, কুয়াংচৌ ভ্রমণ করেছেন। কুনমিংয়ের স্টোন ফরেস্ট তাকে মুগ্ধ করে। চীনের সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন দেশে সমাজ সচেতনতামূলক বার্তা বয়ে নিয়ে যান। বলেন, ‘আমি শুধু ভ্রমণের জন্য ভ্রমণ করি না। পরিবেশ রক্ষা, বাল্য বিয়ে বন্ধ, যুদ্ধ নয় শান্তি ইত্যাদি বার্তা পৌঁছে দেই।’

বাংলাদেশের নারীরা অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে চলছেন বলেও মনে করেন তিনি। তবে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি অন্য দেশের উদাহরণ দেন। তিনি অনেক দেশেই নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেছেন। সেসব দেশে নারী খুবই নিরাপদ। বাংলাদেশের নারীদের প্রতি তার পরামর্শ হলো, ‘সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে। যেভাবে জীবন যাপন করতে চান সেটা করুন। নিজের পরিকল্পনাকে সাহসের সঙ্গে বাস্তবায়ন করুন। ‘

 

কাঁকড়া চাষে সমৃদ্ধি আনলেন বুদ্ধিমতী চু নিংনিং

 

উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে নিজের ও  এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন এক উদ্যোগী নারী।  সিনচিয়াংয়ের বড় মরুভুমি তাকলামাকান এলাকায় একটি লেকে কাঁকড়া চাষ করে খামার গড়েছেন তিনি।  চলুন শোনা যাক একটি প্রতিবেদন।

মরুভূমিতে কাঁকড়া চাষ করে নিজের ও আশপাশের মানুষের সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছেন চু নিংনিং নামের এক নারী।

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সিনচিয়াংয়ে রয়েছে চীনের সবচেয়ে বড় মরুভূমি তাকলামাকান। মরুভূমির উত্তরপূর্ব প্রান্তে রয়েছে লপ নুর লেক। লেকের উৎপত্তি হয়েছে তারিম নদী থেকে।

লপ নুর লেকের কাঁকড়া বিখ্যাত। এখানে কাঁকড়া চাষ করে স্থানীয় অধিবাসীরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছেন।

লেক অঞ্চলের পরিবেশ উন্নয়ন বা ইকোলজিকাল ডেভেলপমেন্টের ফলে এই লেকে মিঠাপানির মাছ চাষ ও কাঁকড়া চাষ সম্ভব হচ্ছে। ২০১৪ সালে চু নিংনিং একটি মিঠা পানির মাছের খামার প্রতিষ্ঠা করেন। ইয়ুলি নামের এই খামার এই অঞ্চলে কঁকাড়া চাষের সূচনা করে। চু নিংনিং লপ নুর লেকে কঁাকড়াদের স্বাধীনভাবে বড় হওয়ার জন্য ছেড়ে দেন। তারিম নদী এখানে মিঠা পানি বয়ে আনে।

এই বছর ৫০ হাজার ইউয়ানের বাচ্চা কাঁকড়া এখানে ছাড়া হয়েছে। চু আশা করছেন এখান থেকে ২০ টন কাঁকড়া পাওয়া যাবে। এইভাবে নিজের উদ্ভাবনী বুদ্ধিতে এলাকার মানুষের জীবনেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনেছেন চু নিংনিং।

গান: একসঙ্গে চীনা স্বপ্ন গড়ে তুলি

সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনুন শিল্পী লিয়াও ছাং ইয়ং এবং ইন সিও মেইয়ের কণ্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম হলো, একসঙ্গে চীনা স্বপ্ন গড়ে তুলি।

 

আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন বিশ্বপর্যটক নাজমুন নাহার, প্রতিবেদন রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সাক্ষাৎকারটি লিপিবদ্ধ করা এবং কাঁকড়া চাষে সমৃদ্ধি আনলেন বুদ্ধিমতী চু নিংনিং প্রতিবেদন শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া