বন্ধুরা, আপনাদেরকে স্বাগত জানাই আজকের টপিক আসরে; আমি মুক্তা। সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি’র কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরোর আয়োজিত সম্মেলনে এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হয়। সম্মেলনে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে: সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালাকে চাহিদা বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে; রিয়েল এস্টেট বাজার স্থিতিশীল করতে ও মানুষের জীবিকা স্থিতিশীল করতে হবে; সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হবে; ইত্যাদি।
চলতি বছর চীনা অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। তবে, নতুন দফা কোভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.৮ শতাংশ এবং প্রথম দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা বছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২.৫ শতাংশ। যদি চলতি বছরের পূর্বনির্ধারিত ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হয়, তবে চীনকে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এটি অবশ্যই সহজসাধ্য নয়। সেজন্য এবারের সম্মেলনে "অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা" কথাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে "অর্থনীতিকে একটি যুক্তিসঙ্গত পরিসরের মধ্যে পরিচালনা এবং সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করা" কথাগুলো দিয়ে। বলা হয়েছে: বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত এবং সারা বছরজুড়ে তুলনামূলকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের প্রচেষ্টা করা উচিত। এ ছাড়া, কঠোরভাবে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা এমন হতে হবে যাতে ভোগের চাহিদা বাড়ে। মুদ্রানীতিকে ভোগ বাড়াতে কাজে লাগাতে হবে। ভোগ বৃদ্ধি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। আর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ-সহায়তা বাড়াতে হবে।
বিদেশী গণমাধ্যমগুলো চীনের রিয়েল এস্টেট বাজারের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রিয়েল এস্টেট বাজারকে স্থিতিশীল রাখা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিয়েল এস্টেট বাজারকে স্বাভাবিক উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনা গুরুত্ব পূর্ণ। এটা করা গেলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ও প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে নেতিবাচক বাধা কমে যাবে। এবারের সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট বাজার স্থিতিশীল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আবাসনের চাহিদাও বাড়াতে হবে।
সম্মেলনে বলা হয়েছে, একটি সুষ্ঠু নীতি ও ব্যবস্থাপনার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন সম্ভব করা যায়। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বাড়াতেও আগ্রহী করে তুলতে হবে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭.৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ২৫ই জুন চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত বাংলাদেশের পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য এটি একটি স্বপ্নের সেতু। সেদেশের পরিবহনব্যবস্থা এ সেতুর মাধ্যমে অনেক উন্নত হয়েছে। ১৯শে জুলাই চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্ট্যাডিং কমিটির চেয়ারম্যান লি চান শু ও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এক বৈঠকে মিলিত হন। এতে বলা হয়, চীন ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় দু’দেশের উন্নয়ন-কৌশলকে সংযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে ইচ্ছুক। দু’দেশ অবকাঠামো, আর্থ-বাণিজ্যিক, পরিষ্কার জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা ও বিনিময় জোরদার করবে বলেও এসময় উল্লেখ করা হয়।
বস্তুত, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতেও বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চীনের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেনি। চীন এখনও বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। চীন অব্যাহতভাবে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ বাড়াবে এবং কার্যকরভাবে বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করে যাবে। চীন বিশ্বের অর্থনীতির সঙ্গে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠতর করবে এবং বিশ্বের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে যাবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। (ছাই/আলিম)