২০২২ সালের আগস্ট মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পালাক্রমিক সভাপতি দেশ হিসেবে কাজ শুরু করেছে চীন। জাতিসংঘের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে চীন সবসময় জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করে আসছে এবং বাস্তব কার্যক্রমের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, অভিন্ন উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ জাতিসংঘের নানা কাজকে সমর্থন করে বেইজিং। জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয় ও সুইজারল্যান্ডে অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় নিযুক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি চেন সু সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপকে (সিএমজি) একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন জেনেভার বহু-পক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীন বহুপক্ষবাদ রক্ষা করে, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি ধারণা বাস্তবায়ন করে এবং বিশ্বের উন্নয়নে চীনা বুদ্ধি ও পরিকল্পনা উপহার দেয়।
বিশেষ সাক্ষাৎকারে চেন সু বলেছেন, জেনেভা হল বহু-পক্ষীয় কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ। আর চীনা কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জেনেভার প্যালেস দেস নেশনস, দাভোসের বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে তিন বারের মতো ভাষণ দিয়েছেন। মানব সমাজের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ এ মুহূর্তে বিশ্বের সকল দেশের অভিন্ন স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে চীনের বুদ্ধি ও পরিকল্পনা প্রদান করেছেন।
চেন সু বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সির কথা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা শুরুর সংকল্প ভুলে না গিয়ে দৃঢ় গতিতে সামনে এগিয়ে যাই এবং জেনেভার বহু-পক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারণা বাস্তবায়ন করি।
সাক্ষাৎকারে চেন সু মানবাধিকার, নিরস্ত্রীকরণ এবং শ্রমসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের অবদান ও ফলাফল তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, জেনেভা হল বিশ্ব মানবাধিকার ইস্যুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ। আমরা মানবাধিকার পরিষদসহ অনেক বহু-পক্ষীয় সংস্থায় মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি, নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠন এবং বিশ্ব উন্নয়নের প্রস্তাবসহ গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রচার করেছি। তা অনেক দেশের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। আমরা যৌথ, সার্বিক, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তার মূল্যবোধ পোষণ করি এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ এবং বিস্তার রোধ এগিয়ে নিয়ে যাই এবং বিশ্বের কৌশলগত স্থিতিশীল, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য চীনের বুদ্ধি ও পরিকল্পনা প্রদান করেছি। আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিষদের মাধ্যমে গভীরভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম ক্ষেত্রের বৈশ্বিক প্রশাসনে অংশগ্রহণ করেছি এবং নানা পক্ষের স্বীকৃতি পেয়েছি। বহুপক্ষবাদে অবিচল থাকা এখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ত্রিপক্ষীয় সদস্যদের মতৈক্যে পরিণত হয়েছে। তা আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের নানা প্রস্তাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
চেন সু আরো বলেছেন, ‘এক অঞ্চল এক পথ’ প্রস্তাব হল মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম। তিনি বলেছেন, আমরা আঙ্কটাড-এর সঙ্গে গবেষণা ও সহযোগিতা জোরদার করেছি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি এবং উন্নয়শীল দেশের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে চীনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি এবং অবদান রেখেছি।
চেন সু আরও বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি দেখা দেয়ার পর থেকে চীন সবসময় আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থেকে কষ্ট কাটিয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সমাজ তার প্রশংসা করেছে।
চেন সু বলেছেন, চীন সবার আগে নানা পক্ষের সঙ্গে মহামারির তথ্য শেয়ার করে এবং তার প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। নানা দেশকে বিপুল পরিমাণ মহামারি প্রতিরোধক সামগ্রী সরবরাহ করে এবং চিকিত্সা দল পাঠায়। চীন সবার আগে উত্থাপন ও বাস্তবায়ন করে টিকার বৈশ্বিক গণ পণ্যের ধারণা এবং সাবার আগে টিকার মেধাস্বত্ব বাদ দেয়াকে সমর্থন করে এবং উন্নয়নশীল দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর করেছে। চীনের মহামারি প্রতিরোধ সহযোগিতা আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের উচ্চ মূল্যায়ন লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী মহামারি এখনো শেষ হয়নি। তাই চীন মানব জাতির অভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করে মহামারি প্রতিরোধ ও টেকসই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বাস্তবায়নে আরো অবদান রাখবে। (শিশির/এনাম/রুবি)