২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সুইজারল্যান্ডের জেনিভার প্যালেস ডেস নেশনসে ‘মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি যৌথভাবে আলোচনা ও গঠন’ উচ্চ পর্যায়ের এক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ‘মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করা’ শিরোনামে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি গভীর ও সার্বিকভাবে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারণা, যুগের প্রশ্নের উত্তর ও চীনের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। গত ৫ বছরে, বিশ্বের টানা অস্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনের মুখে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনটি ধারণা শক্তিশালী জীবনীশক্তি এবং আকর্ষণীয় শক্তি তুলে ধরেছে এবং বিশ্বের উন্নয়নের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, মানবজাতি বড় আকারের উন্নয়ন, সংস্কার ও সমন্বয়ের পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী? এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সি চীনা পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করা এবং ভাগাভাগি করার মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা যাবে।
আইএমডি ওয়ার্ল্ড কম্পিটিটিভনেস সেন্টারের অধ্যাপক অরটুরো ব্রিস (Arturo Bris) মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সির ভাষণ খুব শিক্ষণীয়। তিনি বলেছেন, যখন প্রেসিডেন্ট সি জাতিসংঘের জেনিভা কার্যালয়ে এ ভাষণ দিয়েছেন তখন আমরা জানি না- এ বিশ্বে কী কী ঘটবে বা কী কী পরিবর্তন হবে। তবে তার ভাষণ খুব শিক্ষণীয়। তিনি বিশ্বায়ন সমর্থন করেন এবং স্পষ্টভাবে বিশ্বায়নের পক্ষে চীনের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি চীনের উন্নয়নের সুযোগ বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে শেয়ার করেন এবং তার উত্থাপিত প্রস্তাবের মধ্যে কিছু এখন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন চাইলে বিভিন্ন কাজ করতে হবে। গেল ৫ বছরে চীন সবসময় দৃঢ়ভাবে বিশ্বায়ন রক্ষা করে, বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করে এবং বাস্তব কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন বাস্তবায়ন করে। সুইজারল্যান্ডের বার্ন অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন বিভাগের সাবেক প্রধান ফিলিপ মনির বলেছেন, চীনের উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন ও উন্মুক্তকরণ বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় সুবিধা বয়ে এনেছে। তিনি বলেছেন, চীন ইতিবাচকভাবে বিশ্বায়ন এগিয়ে নিয়ে যায় এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীন সক্রিয় সদস্য। চীনের অনেক কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানের। তা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনিময় ও বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য সহায়ক। পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনীতির উপর তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাব হলো মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি সিন ডোরথি বহুপক্ষবাদ ও সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে এ প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার মতে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সুদূরপ্রসারী একটি প্রস্তাব। গেল কয়েক বছরে আমরা দেখেছি বহুপক্ষীয় আলোচনায় মতৈক্যে পৌঁছানো কঠিন। তবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাবের আওতায় এ ক্ষেত্রে কিছু সফলতা অর্জন হয়েছে।
২০২০ সালের শেষ দিকে চীন চরম দারিদ্র্য নির্মূল করেছে। তা ১০ বছর আগে জাতিসংঘের ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি চীন ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। সুইজারল্যান্ড বার্ন অঞ্চলের অর্থনীতি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক প্রধান ফিলিপ মনির মনে করেন, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে- তা বিশ্ব দারিদ্র্যবিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেছেন, চরম দারিদ্র্য নির্মূল করা চীনের অর্জিত অন্যতম সফলতা। বিশ্বে অনেক দেশ এ দারিদ্র্যমুক্তি বাস্তবায়ন করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে খুব কম দেশই তা বাস্তবায়ন করে। আমি মনে করি- এক্ষেত্রে চীন বড় সফলতা অর্জন করেছে। আসলে চীন নানা দেশে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ করেছে। যা বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
(শিশির/তৌহিদ/রুবি)