তোমরা সবচেয়ে প্রিয় মানুষ: চীনা জনগণের সেনা
2022-07-31 00:00:22

প্রিয় বন্ধুরা, আপনার মনে সেনারা কোন কোন খাতে ভূমিকা রাখতে পারে? দেশ রক্ষা কি তাদের একমাত্র দায়িত্ব হতে পারে? চীনের গণ-মুক্তিফৌজের সেনারা কিন্তু শান্তির যুগে লোকজনের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সবসময় পাশে ছিল। বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারি প্রতিরোধ, নানা অবস্থায় তাদের দেখা গেছে। আজ চীনের সেনাদের দায়িত্ব পালন এবং জনগণের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানাবো।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চি নিং গণ-মুক্তিফৌজ প্রতিষ্ঠার ৯০তম বার্ষিকীতে বলেছিলেন: গণ-মুক্তিফৌজ সবসময় জনগণের সঙ্গে আছে। তারা সম্পূর্ণভাবে জনগণের জন্য সংগ্রাম করে। যেখানে শত্রু আছে, যেখানে বিপদ থাকে, সেখানে চীনা সেনাদের দেখা যায়।

আর অনলাইনে নেটিজেনরাও মন্তব্য করেন, বন্যা ও মহামারি প্রতিরোধে তোমরা ফ্রন্ট লাইনে, দেশের সীমান্ত রক্ষায় তোমরা দায়িত্ব পালন করো, শান্তি রক্ষায় তোমরা কখনই পিছিয়ে থাকো না। এত প্রিয় আমাদের সেনারা।

২০২০ সালের শুরুতে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে চীনের বিভিন্ন জায়গা এবং সেনাবাহিনীর ৩৪৬টি চিকিত্সা দল, ৪২৬০০জন চিকিত্সক হুপেই প্রদেশে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীর সদস্য। মানুষের এখনো মনে আছে: উহানে সহায়তা দেওয়ার কথা শুনে চীনের নৌবাহিনীর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন প্রথম হাসপাতালের শ্বাস রোগ বিভাগ সবার আগে আবেদন করে। চিকিত্সকরা এক এক করে নাম স্বাক্ষর করেছেন আবেদন পত্রে। যা ভাইরাসকে পরাজিত করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি, যা জনগণের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা। ২৪ জানুয়ারি, চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার পুরোনো বছরের শেষ রাতে, চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের অনুমোদন পেয়ে, গণ-মুক্তিফৌজের তিনটি চিকিত্সা দল মোট ৪৫০জন যথাক্রমে শাংহাই, ছুং ছিং এবং সি আন—এই তিন শহর থেকে সেই রাতেই বিশেষ বিমানযোগে উ হান শহরে পৌঁছান। মানুষের এখনো মনে আছে: হাসপাতালে লোকজন দৌড়ে চিকিত্সা দলের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে: তোমারা কি গণ-মুক্তিফৌজের? ‘জ্বি’- কথাটা শুনে তাদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তোমরা এসেছো, আমরা আশ্বস্ত হতে পারবো।

 

উহানে সেনাবাহিনীর অনেক চিকিত্সক মহামারি প্রতিরোধের ফ্রন্ট লাইনে দিন রাত কাজ করেছেন। প্রাণ রক্ষায় তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। স্বাস্থ্য রক্ষায় তারা কোনো ভয় পান নি। তারা মোটা প্রতিরোধক কাপড় পরেন, সারা দিন মাস্ক পরায় মুখের ত্বক ফেটে যায়, ঘামে ভিজে যায় কাপড়। তাদের মাস্ক না-পরা চেহারা দেখে নেটিজেনরা প্রশংসা করে বলে: তারাই হলেন সবচেয়ে সুন্দর মানুষ।

 

বন্যা প্রতিরোধে এবং বন্যা থেকে জনগণকে রক্ষায় চীনা সেনাকে সবসময় দেখা যায়।

গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতে চীনের অনেক জায়গায় বন্যাকবলিত হয়। আর এমন অবস্থা বার বার দেখা যায়। চীনা সেনারা সবসময় এতে হাজির থাকেন।  তারা ডাইক দৃঢ় করেন, বন্যায় আটকে থাকা জনগণকে উদ্ধার করেন। মাথার উপরে প্রচুর রোদ, পায়ের নিচে বন্যা—তবুও তারা কখনই দ্বিধা করেন না।

চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ‘টপিক’ হলো ‘এটাই হল বন্যা প্রতিরোধক সেনাদের বিছানা’। ছবি ও ভিডিও থেকে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমে বন্যা প্রতিরোধের ফ্রন্ট লাইনে সেনারা পাথরে, বালির ব্যাগে, ডাইকে, সহযোদ্ধার কাঁধে অনেক ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েন। সোজা মাটিতে শুয়ে থাকেন। যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন।

 

এমন একটি গল্প আছে, চীনের চিয়াং সি প্রদেশের একজন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধার বাসা বন্যার মধ্যে পড়েছে। তখন একজন সেনা তাকে পিঠে করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করছেন। কয়েক দিন পর বৃদ্ধা- বিশেষ করে তাদের থাকা অস্থায়ী ঘাঁটিতে গিয়ে সেই সেনাকে খুঁজে বের করে তাকে ধন্যবাদ জানাতে যান। ঘাঁটিতে পৌঁছার সেই মুহূর্তে তিনি প্রথম দেখায় সেই সেনাকে চিনতে পারেন। তার হাত ধরে রাখেন- আর ছাড়তে চান না। নেটিজেনরা বলে, সম্মানজনক সেনা, আন্তরিক দাদি, সেনা ও জনগণের এমন গভীর ভালোবাসা হলো সবচেয়ে উষ্ণ দৃশ্য।

মধ্য চীনের হ্য নান প্রদেশের সিন ইয়াং শহরে, বন্যা প্রতিরোধের কর্তব্য সম্পন্ন করার পর শহর ছাড়ার আগে সেনারা বিশেষ করে তাদের বসবাসের হোস্টেল পরিষ্কার করেন, সব কিছু ভালোভাবে সাজিয়ে রাখেন এবং ব্ল্যাকবোর্ডে একটি ‘ধন্যবাদ চিঠি’ লিখে রাখেন। তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। অন্যদিকে চীনের আনহুই প্রদেশ থেকে বন্যা প্রতিরোধের সেনারা চলে যাওয়ার সময় লোকজন ভীষণ বৃষ্টিতে তাদের গাড়ির পিছনে দৌড়ায়, সেনাদেরকে নিজের চাষ করা ফল, ডিম দিতে চায়।

 

যদিও এসব ছবি এবং ভিডিওগুলো পেশাদার মানের নয়, তারপরও তা লাখ লাখ চীনা নেটিজেনকে মুগ্ধ করেছে। লোকজন বলে, যখন শুনেছি সেনারা বলছে যে, জনগণকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। তখন সবাই অনেক মুগ্ধ হয়েছে। সেনারা জনগণকে ভালোবাসে, জনগণও সেনাকে ভালোবাসে। সেনা ও জনগণ একই পরিবারের সদস্য।

বন্যা প্রতিরোধের পাশাপাশি জনগণের যে কোনো কাজে সাহায্য করতে প্রস্তুত চীনা সেনারা। বন্যা শেষ হয়ে চলে যাবার পর চিয়াং সি প্রদেশের কৃষকরা ধান চাষে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চিয়াং সি প্রদেশের ইয়ুং সিউ জেলায় কৃষকদের ধান চাষের ক্ষেত্রে সাহায্য লাগে। তখন বন্যা প্রতিরোধে চীনের সামরিক পুলিশ দল এ কথা জেনে দ্রুত তাদের সাহায্য দিতে যান। তাদের মনে- জনগণের কাজ ছোট হলেও তাদের কাছে বড় ব্যাপার। জনগণের স্বার্থ সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ।

বন্যার সময় চীনা সেনারা দৃঢ়তার সঙ্গে বন্যা প্রতিরোধ করেছে। ডাইকের নিচে, তারা জনগণের খাবার রক্ষা করেছে। বন্যা থাকলে তারা বন্যা প্রতিরোধ করতে পারে, ধান চাষেও তারা সাহায্য দিতে পারে, তারাই যেন সবকিছুই পারে। যেখানে প্রয়োজন- সেখানেই তারা আছে।

 

চীনা বাহিনী জনগণের বাহিনী বরং একটি শান্তিপ্রেমী বাহিনী। চীনা বাহিনী সবসময় সহযোগিতার নীতি মেনে চলে। ১৯৯০ সালের এপ্রিল মাস থেকে চীন প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী অভিযানে অংশ নেওয়া থেকে এই পর্যন্ত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মোট ৫০ লাখ পার্সন টাইমসের বেশি শান্তি রক্ষী সেনা পাঠিয়েছে। চীনকে ‘শান্তিরক্ষী অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও শক্তি’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনের সেনাদলের আকার ছোট থেকে বড় হচ্ছে, সেনার ধরণ আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। কর্তব্যের আওতা আরো বেড়েছে। চীনা শান্তিরক্ষী সেনারা সংঘর্ষ কবলিত এলাকার জনগণের জন্য শান্তি ও আশা বয়ে এনেছে। ঠিক যেমন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন- চীনা শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশ্বের শান্তি রক্ষায় আরো বেশি চীনা শক্তি যোগাচ্ছে, বিশ্বের কাছে চীনা বাহিনীর সুষ্ঠু ভাবমূর্তি দেখা গেছে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যেমনটি বলেছিলেন, সামনে যাওয়ার পথে, চীনা বাহিনী সবসময় জনগণের সেবা করে; যে কোনো সময় জনগণের সেনা তারা।