প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি নানা রকম পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার এবং পরিবেশগত ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য চীনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নতুন ঘোষণা করেছে। সংস্থাটি পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প পণ্য ও পদ্ধতি হিসেবে বাঁশ থেকে প্রস্তুত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ব্যাম্বু অ্যান্ড রাটান-এর পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব ঘোষণা করা হয়। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
গত জুন মাসে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক উন্নয়ন সংক্রান্ত উচ্চ-স্তরের সংলাপে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের পণ্যের বিকল্প হিসেবে বাঁশ প্রবর্তনের বিষয়টি উঠে আসে। বাঁশ ও বেতের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের পরিচালক ফেই বেনহুয়া বলেন, বাঁশ থেকে খড় উত্পাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে এবং বড় আকারে প্লাস্টিক প্রতিস্থাপন করে- খড় দিয়ে তৈরি পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাঁশ ব্যবহার করে খড় তৈরি করার কাজটি মাত্র শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে কাজের বিশাল সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি জানান। সরকারি তথ্যাবলী থেকে জানা যায়- বিশ্বে প্রতি বছর প্যাকেজিং, নির্মাণ, ক্যাটারিং এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য প্রায় চার কোটি মেট্রিক টন প্লাস্টিক উত্পাদন করা হয় এবং চীনের ডেলিভারি শিল্প বার্ষিক প্রায় ১.৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ব্যাম্বু অ্যান্ড রাটান অর্গানাইজেশন (আইএনবিআর) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, উদ্যোগটি এগিয়ে যাওয়া এবং একক-ব্যবহার্য পণ্য হিসেবে প্লাস্টিকের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করার আরও প্রযুক্তি এবং উপায় বিকাশ ভবিষ্যতের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করবে।
প্লাস্টিক পণ্য থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি তাদের সমগ্র জীবনচক্র জুড়ে মানুষের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্লাস্টিক শুধু স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করছে না, একইসঙ্গে বায়ু দূষণ করছে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। প্লাস্টিক দ্রব্য অপচনশীল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা প্লাস্টিকের পৃথিবী রেখে যাচ্ছি। যে প্লাস্টিক মানুষ ব্যবহারের পর ফেলে দেয়, সেই প্লাস্টিক চলে যায় ড্রেন, খাল-বিল, নদী-নালা, সমুদ্রে। বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ লাখ প্লাস্টিক বোতল বিক্রি হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পানি ভর্তি বোতলে প্রতি তিনদিনে প্রায় ৩ লাখ ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে। একে তো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া।
১৯৫০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক উত্পাদন ৩৪ হাজার মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে বলে এক পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্লাস্টিক পণ্য থেকে নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর গোটা জীবন এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্য যখন সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় না, তখন বাতাস, পানি ও মাটিতে গিয়ে তার ভীষণ ক্ষতি করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে জীবন ও পরিবেশে প্লাস্টিকের উদ্বেগজনক রাসায়নিক ক্ষতি আরও ভালভাবে বুঝতে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে বাঁশ, যা দ্রুত বর্ধনশীল, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই, পদার্থ। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা পরিবেশের জন্য দারুণ কল্যাণকর। বাঁশের খড় দিয়ে কাগজ- প্যাকেজিং খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব।
চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এজন্য বাঁশ লাগানোর কাজ জোরদার করতে হবে। তাতে অনাবাদি জমি পুনরুদ্ধার করা, মাটির ক্ষয় প্রশমিত করা এবং জায়ান্ট পান্ডা এবং মাউন্টেন গরিলার মতো দুর্বল বা বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির খাদ্যের উৎস তৈরি হয়ে যাবে। সেইসাথে বাঁশ পরিবেশে নিঃসরিত কার্বন কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এদিকে গোটা বিশ্বেই মূলত প্ল্যাস্টিকের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। সারা বিশ্বেই এখন প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাশাপাশি চীনা বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভাবন সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চীনা সংস্থা এক পরিসংখ্যানে জানায় এশিয়া জুড়ে ৫০ মিলিয়ন হেক্টর এলাকায় বাঁশ বিতরণ করা হয়েছে। সংস্থাটির মতে আফ্রিকা ও আমেরিকা অঞ্চলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে৷