দেহঘড়ি পর্ব-৮০
2022-07-29 19:24:02

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’।

#প্রতিবেদন

দেশের ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, বিনামূল্যে টিকা কার্যক্রমে জোর বিশেষজ্ঞদের

মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি হেপাটাইটিস। এর সংক্রমণকে নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হয়। হেপাটাইটিসের সংক্রমণ বাংলাদেশে মূলত জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ ও ‘ই’। এর মধ্যে হেপাটাইসিস ‘এ’ ও ‘ই’-এর সংক্রমণ স্বল্পমেয়াদি, যা থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সচেতনতায় দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। তবে হেপাটাইটিসের ‘বি’ ও ‘সি’ ধরন সাধারণত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

গবেষণা তথ্য মতে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। এই দুটির সংক্রমণে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসার হতে পারে। মূলত হেপাটাইটিসের ‘ই’ ধরনটি বিপদজনক হয়ে থাকে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিসের যে ৫টি ধরন আছে, তার সবগুলোর সংক্রমণই বাংলাদেশে আছে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ পানিবাহিত রোগ, যা দূষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। ‘বি’ ও ‘সি’ রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল, ভ্যাজাইনাল তরল পদার্থের মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়।

সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসের কোনো না কোনো ধরনে আক্রান্ত। তবে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না তাদের হেপাটাইটিস আছে। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, ভাইরাস প্রতিরোধে অসচেতনতা ও সময়মতো শনাক্ত না হওয়ায় অসংখ্য রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকছেন।

হেপাটাইটিস থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

চিকিৎসার বাইরেও হেপাটাইটিস নির্মূলে সচেতনতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাঠ্যবইয়ে সংযুক্তির মাধ্যমে শিশুকাল থেকে হেপাটাইটিসের সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। এছাড়াও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, টিকাদান, ওষুধের দাম, চিকিৎসা সেবা, হেপাটাইটিস নির্ণয়ে পরীক্ষার সুযোগ, বিনামূল্যে টিকার ওপরও জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা। অভি/রহমান

 

#বুলেটিন

মাঙ্কিপক্স রুখতে সমকামিতায় লাগাম টানার পরামর্শ

মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ মোকাবিলায় যৌনসঙ্গীর সংখ্যা কমাতে পুরুষদেরকে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও।

বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্সে এ পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছেন এবং সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৭৮টি দেশে। আক্রান্ত এসব রোগীদের ৭০ শতাংশই ইউরোপের এবং ২৫ শতাংশ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, মাঙ্কিপক্সের এই প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। তবে সবচেয়ে ভাল পন্থা হল ঝুঁকির রাস্তা থেকে সরে আসা।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নিজের সেক্স পার্টনারের সংখ্যা কমানো’ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই বার্তা সেইসব পুরুষদের জন্য ‘যারা পুরুষসঙ্গীদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হন।’

আগে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, মাঙ্কিপক্সের ৯৫ শতাংশ সংক্রমণ ছড়িয়েছে যৌন কার্যক্রমের মাধ্যমে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত ৯৮ শতাংশই সমকামী বা উভকামী পুরুষ।

রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে।

এসে গেল ম্যালেরিয়ার টিকা

বিশ্বের প্রথম ম্যালেরিয়া টিকাকে ছাড়পত্র দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও প্রাথমিকভাবে আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া টিকাকে বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়েছে বৈশ্বিক এই সংস্থা। টিকার প্রভাবে ধীরে ধীরে বিশ্ব থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

টিকা তৈরির পেছনে বিরাট অবদান রয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের। নতুন এই ম্যালেরিয়ার টিকার নাম মসকুইরিক্স।

ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই টিকাকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । যদিও একদল বিশেষজ্ঞের মতে, এই টিকা এখনও ৫০ শতাংশও কার্যকরী নয়। তবে এ টিকাদানের ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হার কমবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।

নভেম্বরে শেষ হচ্ছে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা

আগামী নভেম্বর মাসেই প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের জন্য সংরক্ষিত টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশে। এরপর শুধু বুস্টার ডোজের কার্যক্রমই চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের হিসাবে দেশে এখনো প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ এক ডোজ টিকাও নেয়নি।

যারা এখনো টিকা নেননি, তাদেরকে দ্রুত টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৩৩ লাখ মানুষের জন্য প্রথম ডোজের এবং ৯৪ লাখ মানুষের জন্য দ্বিতীয় ডোজের যে টিকা আছে, সেগুলোর মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর সেগুলো আর দেওয়া যাবে না।

বর্তমানে আমাদের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। যে কোনও জায়গায় রেজিস্ট্রেশন করে সেখান থেকে টিকা নেওয়া যাবে।

কার্যক্রম শুরু হলো উখিয়ার বিশেষায়িত হাসপাতালের

কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও স্থানীয় মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিতে ‘উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল’র স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের যৌথ উদ্যোগে হাসপাতালটি গড়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার শুরুর দিনে ৯টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এর মধ্যে নিজেই পাঁচজন রোগীর অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

অস্ত্রপচারে অংশ নেন কক্সবাজার নেয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি টিম। টিমের অন্যতম সদস্য ছিলেন সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার আরিফ হোসেন। - অভি/রহমান

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি-সম্পৃক্ত সমস্যা নিয়ে। রজোনিবৃত্তি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। রজোনিবৃত্তি হলো নারীদের জীবনের এমন একটি সময় যখন তাদের রজঃস্রাব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা আর গর্ভধারণ করতে সক্ষম থাকে না। রজোনিবৃত্তি সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে হয়ে থাকে। সাধারণত মহিলাদের একবছর যাবত রজঃস্রাব বন্ধ থাকলে চিকিৎসকগণ এটাকে রজোনিবৃত্তি বলেন। এসময় ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম হ্রাস পায় বা বন্ধ হয়ে যায়। আবার অপারেশনের মাধ্যমে কোনও নারীর দুটো ওভারি বা ডিম্বাশয় ফেলে দিলেও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। মেনোপজের আগে ও পরে একজন নারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা হতে পারে, যেমন যৌনমিলনে ব্যথা অনুভব করা, যোনিপথের ঝিল্লি পাতলা হয়ে যাওয়া ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া, প্রস্রাব আটকে রাখার ক্ষমতা হারানে, ত্বকের শুষ্কতা, ওজন বৃদ্ধি, জয়েন্টে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি। মানসিক পরিবর্তনও হতে পারে রজোনিবৃত্তির কারণে; দেখা দিতে পারে উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, মনযোগহীনতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি। রজোনিবৃত্তির ফলে নারীদরে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অস্থিক্ষয়ের ঝুঁকিও বাড়ে। তবে ওজন, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান পরিত্যাগ করার মাধ্যমে এ সকল রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফ্লোরিডা রহমান। ডাক্তার ফ্লোরিডা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারি একজন অধ্যাপক।

 

## কী খাবো, কী খাবো না

ওজন কমাতে ৪ খাবার

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা বর্তমান সময়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এমন কিছু খাবার আছে, যা আমাদের শক্তি ও পুষ্টি সবই দেবে আবার ওজন নিয়ন্ত্রণেও দারুণ কাজ করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৪ খাবার সম্পর্কে:

সবুজ শাক-সবজি

পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শশা, বরবটি ইত্যাদি সবুজ শাক-সবজিতে ক্যালরি কম থাকে। এসব শাক-সবজি ফাইবারে ভরপুর থাকে, যা পেট ভরিয়ে রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। গবেষণা বলছে, ভরপেট আঁশযুক্ত খাবারগুলো গ্রহণ সামগ্রিকভাবে মানুষকে অধিক ক্যালরি গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, যা শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।

ডিম

ডিমে আছে প্রচুর প্রোটিন ও ফ্যাট যা শক্তি দেয় এবং পেট ভরিয়ে রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ জন নারী যারা বাড়তি ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছিলেন, তারা দাবি করেছেন প্রতিদিন সকালে যদি একটি করে ডিম খাওয়া যায় তাহলে তাদের পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টা ক্ষুধাবোধ কম হয়। আরেক গবেষণা বলছে, যদি সকালে নাস্তায় ডিম খাওয়া হয় তাহলে সেটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।

ডাল ও শস্য জাতীয় খাবার

ডাল ও কিছু শস্য জাতীয় খাবার ওজন কমাতে সাহায্য তরে। এগুলোর মধ্যে আছে মুগ, মসুর ডাল, ছোলা বুট, শিমের বিচি, মটরশুঁটি ইত্যাদি। প্রোটিনসমৃদ্ধ এই শস্যগুলো যেমন পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ তেমন আছে ফাইবার যা খাবারে আনে তৃপ্তি।

মাছ

মাছ হচ্ছে এমন একটি প্রোটিন যা খেলে অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত ক্ষুধাবোধ হয় না। তাই অধিক ক্যালরি খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। এছাড়া এতে প্রোটিনসহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। মাছে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন যা থাইরয়েড হরমোনকে ঠিক রাখে। এতে আরও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।– অভি/রহমান

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।