মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সি চিন পিংয়ের ফোনালাপ
2022-07-29 11:38:50

জুলাই ২৮: গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিং সময় সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা চীন-মার্কিন সম্পর্ক এবং পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয় নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময় করেন।

ফোনালাপে সি চিন পিং বলেন, বর্তমানে বিশ্বে অশান্তি ও পরিবর্তনের দুটি ধারা বিকশিত হচ্ছে এবং উন্নয়ন ও নিরাপত্তার অভাব দেখা যাচ্ছে। এই অশান্ত বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্বের মানুষ আশা করে যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, কৌশলগত প্রতিযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে চীন-মার্কিন সম্পর্ককে দেখা ও সংজ্ঞায়িত করা এবং চীনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ ও সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করা, চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভুল ধারণা ও চীনের উন্নয়নের ভুল ব্যাখ্যার সামিল। এতে দুই দেশের সম্প্রীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হবে বিভ্রান্ত। তাই, উভয় পক্ষের উচিত, সকল স্তরে যোগাযোগ বজায় রাখা, বিদ্যমান যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ভাল ব্যবহার নিশ্চিত করা, এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানো।

তিনি বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয়, বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বৈশ্বিক জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষার মতো প্রধান বিষয়গুলোতে যোগাযোগ রাখা। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলবে।

তিনি বলেন, উভয় পক্ষের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনাপূর্ণ সমস্যাগুলোকে আর উস্কে না-দেওয়া, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্বকে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও মন্দার ঝুঁকির দ্বিধা থেকে বেরিয়ে আসা, এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা।

সি চিন পিং তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, তাইওয়ান ইস্যুর ইতিহাস পরিষ্কার, এবং তাইওয়ান প্রণালীর উভয় তীর যে চীনের অন্তর্গত—তাও স্পষ্ট। ‘তিনটি চীন-মার্কিন যৌথ ইস্তাহার’ উভয় পক্ষের রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং ‘এক-চীন নীতি’ হলো চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি। চীন দৃঢ়ভাবে "স্বাধীন তাইওয়ানের" নামে বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং তাইওয়ানে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করবে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনা সরকার ও চীনা জনগণের অবস্থান এক। চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ডের অখণ্ডতাকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে ১৪০ কোটি চীনা জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সি চিন পিং আরও বলেন, আগুন নিয়ে খেললে নিজেকেই সেই আগুনে পুড়তে হয়। আশা করা যায়, মার্কিন পক্ষ এটি পরিষ্কার বুঝতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘এক-চীন নীতি’ এবং ‘তিনটি চীন-মার্কিন যৌথ ইস্তাহার’ মেনে চলা।

ফোনালাপে জো বাইডেন বলেন, আজকের বিশ্ব একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। চীন-মার্কিন সহযোগিতা শুধু দুই দেশের জনগণের জন্যই নয়, অন্যান্য দেশের জনগণের জন্যও কল্যাণকর। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সংলাপ বজায় রাখতে, পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে, ভুল বোঝাবুঝি কমাতে, অভিন্ন স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে, এবং মতভেদ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক-চীন নীতি’ পরিবর্তিত হয়নি ও পরিবর্তন হবেও না এবং মার্কিন প্রশাসন ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ ধারণাকেও সমর্থন করে না।

ফোনালাপে দুই প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন সংকট নিয়েও মতবিনিময় করেন। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতেও সম্মত হন। (ইয়াং/আলিম/হাইমান)